চোরাচালানের সোনা ডাকাতি

মহেশপুরের ওসি প্রত্যাহার

মহেশপুরের ওসি প্রত্যাহার

ঢাকা, ২০ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : চোরাচালানের সোনা ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রত্যাহার করা হয়েছে ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহম্মেদ কবিরকে।

গতকাল শুক্রবার খুলনা বিভাগীয় রেঞ্জ ডিআইজি দিদারুল আলম এই নির্দেশ জারি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ শনিবার সকালেই কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন আহম্মেদ কবির।

ঝিনাইদহ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানিয়েছেন, প্রশাসনিক কারণে মহেশপুর থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ কার্যকর করে তাকে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ওসি প্রত্যাহারের আগে একই থানার আরো দুজন উপপরিদর্শকসহ আট পুলিশ সদস্যকে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

চলতি মাসের ৪ তারিখ দিবাগত রাতে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ-জীবননগর সড়কের পুরন্দপুর এলাকায় ঢাকার গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা দর্শনাগামী সোনারতরী নামের নৈশকোচ থামিয়ে চোরাচালানের বিপুল সোনা লুট করা হয়। তবে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মহেশপুর থানায় কোনো মামলা হয়নি।

৬ জানুয়ারি থানা পরির্দশনের সময় বিষয়টি জানতে পারেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ। এরপর তাঁর নির্দেশে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি বাস ডাকাতির মামলা দায়ের করে। পরের দিন ৭ জানুয়ারি এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ওই থানার একজন উপপরিদর্শকসহ চার পুলিশ সদস্যকে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয় । ৯ জানুয়ারি দায়িত্বে অবহেলার দায়ে আরো একজন উপপরিদর্শকসহ চার পুলিশ সদস্যকে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।

এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার ভোররাতে সোনারতরী পরিবহনের ঢাকার গাবতলী কাউন্টারের ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম পটলা ও কোটচাঁদপুরের আদর্শপাড়ার ইজিবাইক চালক হারুন অর রশীদ ওরফে ভাগ্নে মিলনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে তিন কেজি ৪০০ গ্রাম সোনা উদ্ধার করে পুলিশ। এই সোনার আনুমানিক বাজারমূল্য এক কোটি ২০ লাখ টাকা। এর পরই মহেশপুর থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়।

লুট করা সোনা উদ্ধারের এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার প্রধান হোতা কোটচাঁদপুর পৌরসভার কমিশনার রেজাউল পাঠানকে ধরার জন্য অভিযান চলছে। তাঁর কাছে লুট করা সোনার একটি বড় অংশ রয়েছে বলে গ্রেপ্তার হওয়া সোনারতরী পরিবহনের ম্যানেজার পটলার কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে।

যেভাবে বাস ডাকাতি :

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাবার আলী শেখ বলেন, সোনারতরী পরিবহন বাসের গাবতলী কাউন্টারের ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম পটলা কাউন্টারে বসেই দীর্ঘ ১০ বছর ধরে সোনা পাচারকারী সিন্ডিকেটের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। বাসযাত্রীর গতিবিধি লক্ষ করে সোনা আছে কি না তা নিশ্চিত করে কোঁটচাদপুরের পৌর কমিনার রেজাউল পাঠানকে জানান তিনি। ঘটনার দিন পুরো সময়ই মোইবাল ফোন ব্যবহার করে পটলা কমিশনার পাঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দেওয়া তথ্য মতে তাঁরা দুইজন সেদিন অন্তত ১৩ বার কথা বলেছেন। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী গভীর রাতে বাসটি কালীগঞ্জে থামিয়ে সোনা লুটের চেষ্টা করা হয়। ব্যর্থ হয়ে কমিশনার রেজাউল পাঠান সাত-আটজন সহযোগী নিয়ে মাইক্রোবাসে চড়ে কালীগঞ্জ-জীবননগর সড়কের বারোমাসে ব্রিজ ও মহেশপুর খালিশপুর বাজারের কাছে এসে ফাঁকা স্থানে আবার বাসটি থামান। এরপর বাসটিতে সোনা বহণকারীদের কাছ থেকে সোনার বার লুটে নিয়ে পালিয়ে যান। তবে মহেশপুর থানা পুলিশ নীরব থাকায় ঘটনাটি সাময়িক ভাবে ধামাচাপা পড়ে যায় বলে জানান আজবাহার আলী শেখ।

গোপনে এই খবর জানতে পেরে ঘটনার পরের দিন মহেশপুর থানা পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। এর পরই বেরিয়ে আসে সোনাতরী পরিবহনের বাস থেকে সোনা লুটের খবর। এ নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়।

পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয় কাউন্টার ম্যানেজার পটলা ও ইজবাইক চালক মিলনকে। অবশ্য ঘটনার মূল হোতা রেজাউল পাঠান এখনো পলাতক।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের দেওয়া তথ্য মতে, বছরের পর বছর কোটচাঁদপুর পৌরসভার কমিশনার রেজাউল পাঠান অভিনব কৌশলে চোরাচালান সিন্ডিকেটের কাছ থেকে সোনা লুট করে আসছেন। পাশাপাশি তিনি এক যুগ ধরে কাজ করছেন পুলিশের সোর্স হিসেবে।


(জাস্ট নিউজ/জেআর/১৫১০ঘ.)