ছাত্রীদের ওপর হামলা, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজারো শিক্ষার্থীর মানববন্ধন

ছাত্রীদের ওপর হামলা, গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজারো শিক্ষার্থীর মানববন্ধন

সাভার, ২৭ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : সাভারে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছেন হাজারো শিক্ষার্থী।

শনিবার দুপুরে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন।

শুক্রবার সকালে সাভারের মির্জানগর এলাকায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ১৫ একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত পিএইচএ ভবনের মালিকানা দাবি করে কটন টেক্সটাইল ক্রাফটস লিমিটেড নামের ব্যানার ঝুলিয়ে দেয় বহিরাগতরা। এ সময় হামলা চালিয়ে পিএইচএ ভবনের বিভিন্ন কক্ষে থাকা কম্পিউটার, টিভি, মনিটর, রাউটার, মাইক্রোফোন ও জানালার কাঁচও ভেঙে ফেলে তারা।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, হামলার সময় বহিরাগত বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হোস্টেলেও আক্রমণ চালায়। এতে আহত হন বেশ কিছু শিক্ষার্থী। ভাঙচুর-মারধরে বাধা দেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মো. লিমন হোসেনকে বেধড়ক পিটিয়ে তার ডান হাত ভেঙে দেয় বহিরাগতরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চললেও আহত শিক্ষার্থীরা শনিবার অংশ নিতে পারেননি। অনেকে আতঙ্কিত হয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ছেড়ে অন্যত্র অবস্থান করছেন।

মানববন্ধনে গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের কোষাধ্যক্ষ খাদিজা আক্তার সেতু বলেন, ছাত্রীদের ওপর এমন ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদ জানাই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মীর মর্ত্তুজা আলী বলেন, হামলার শিকার হয়ে যারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি তাদের আমি বিশেষভাবে পরীক্ষার সুযোগ করে দেবো। কিন্তু তারা মানসিকভাবে যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তা কখন কাটিয়ে উঠতে পারে সেটাই চিন্তার বিষয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিছু অংশ নিজেদের দাবি করে কটন টেক্সটাইল ক্রাফটস লিমিটেড থানায় মামলা করে। কিন্তু আদালতের রায় পাওয়ার আগেই দখল নিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর এমন হামলা চালিয়েছে তারা।

গণস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দাবি, পিএইচএ ভবনে একদল দুষ্কৃতিকারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে কটন টেক্সটাইল মিলের নামে কয়েকটি ব্যানার টাঙিয়ে দেয়। তারা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অভ্যন্তরে তিনটি ছাত্রী ও নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের হোস্টেলেও হামলা করে। হোস্টেলের ছাত্রী ও নারী স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে তাদের হোস্টেল থেকে এক ঘণ্টার মধ্যে বের হতে নির্দেশ দিয়ে সামনে অবস্থান নেয়।

এ সময় ছাত্রীদের চিৎকারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অভ্যন্তরে ছাত্র হোস্টেলে অবস্থানরত ছাত্র এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীরা বাধা দিলে হামলাকারীরা পিএইচএ ভবনে অবস্থান নিয়ে ভবনের ইন্টারনেট কানেকশন বিচ্ছিন্ন করে রাউটার, সাউন্ড সিস্টেম, ১৪টি টেলিভিশন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ইত্যাদি মিলিয়ে আনুমানিক ২৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পিএইচএ ভবনের নিচতলায় ভাঙচুর করে প্রায় ৩০ লক্ষাধিক টাকার সম্পদের ক্ষতি করে।

এ সময় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী র্যাবের গুলিতে পা হারানো ঝালকাঠির লিমন হোসেন বাধা দিতে গেলে হামলাকারীরা তার হাত ভেঙে দেয়। লিমন বর্তমানে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। পরে গণস্বাস্থ্যের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের প্রতিরোধে মুখে সরে যায় হামলাকারীরা।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, দ্য কটন টেক্সটাইল মিল, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের নামে প্রথম ১৯৮৯ইং সনে সাভার সহকারী জজ আদালতে মামলা করে। যার মামলা নং ৪/৮৯। পরে এই মামলা খারিজ হয়ে যায়। ১৯৯২ইং পুনরায় তারা আরেকটি মামলা করে, যার নং ২১১/৯২। এরপর ২০১২ইং এবং ২০১৭ সনে আরও দু’টি মামলা করে। যা ঢাকা দ্বিতীয় যুগ্ম-জেলা জজ আদালতে চলমান। উক্ত মামলাগুলি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এছাড়া ষষ্ঠ যুগ্ম-জেলা জজ আদালতে অপর একটি মামলা, যার নম্বর ৯৫/২০১৩ বিচারাধীন আছে।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৭১৫ঘ.)