ছাত্রলীগের হামলা অব্যাহত

কোটা আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক

কোটা আন্দোলনে অংশ নেয়া ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক

ঢাকা, ১৪ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : কোটা প্রথা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এশার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়ার পরে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তারা আশঙ্কা করছেন, ছাত্রলীগের নির্দেশ উপেক্ষা করে হল থেকে যারা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন তাদের মাশুল দিতে হতে পারে। আন্দোলন স্থগিত করার পর অংশগ্রহণকারী ঢাবি শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন হলে থাকছেন না।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে কোটা প্রথা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে গত ৮ এপ্রিল থেকে এই আন্দোলন জোরাল রূপ নেয়। ওই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসায় ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। হেলমেট পরিহিত মুখোশধারী দুষ্কৃতকারীরা ৪০ মিনিটের বেশি সময় ধরে তাণ্ডব চালিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যায়। ক্রমেই এই আন্দোলন শাহবাগ পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীসহ সারা দেশে। এর মধ্যে পুলিশ এবং সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে আন্দোলনকারীদের। ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল, রাবার বুলেট আর টিয়ার শেলের আঘাতে অনেকেই আহত হয়েছেন। ৯ এপ্রিল রাজধানীর রামপুরা-বাড্ডা সড়কের আফতাব নগর এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রকাশ্যে হুমকি দেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। ওই পুলিশ কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের ‘খাইয়া ফালানোর’ হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও আন্দোলনকারীরা রাস্তা ছাড়েননি।

গত ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ সভাপতি ইফফাত জাহান এশা হলের এক আবাসিক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। ওই হলের উত্তেজিত ছাত্রীরা ঘটনার পর ছাত্রলীগ সভাপতি এশাকে তার রুমে আটকে রাখে। এরপর শিক্ষার্থীরা রাতে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো ওই ছাত্রী হলের সামনে গিয়ে জড়ো হন। পরে হল কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে হল সভাপতি এশাকে ছাত্রীদের সামনে নিয়ে এলে তাকে জুতার মালা পরানো হয়। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে এশাকে সাময়িক বহিষ্কার করে। একই সাথে সংগঠন থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু গতকাল এশার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয় ছাত্রলীগ।

অন্য দিকে ভিসি সাংবাদিকদের বলেন, হলের পক্ষ থেকে এশার ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী এশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ দিকে, এশার বিরুদ্ধে সংগঠনের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়ার পরই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। কবি সুফিয়া কামাল হলের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, এশার বিরুদ্ধে আরো অনেক অভিযোগ রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই তার হাতে শিক্ষার্থীরা লাঞ্ছিত ও মারধরের শিকার হয়ে আসছেন। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। ১০ এপ্রিল রাতে সবকিছুর বিস্ফোরণ ঘটেছে এক সাথে। যে কারণে শিক্ষার্থীরা বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন শিক্ষার্থী এশার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়ার পর তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এশা ঠিকই এখন হলে তাদের ওপর প্রতিশোধ নেবে। হয়তো এশার নির্যাতনে এখন ওই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনই বিপন্ন হতে পারে; এমনো কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন।

জিয়া হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, হলের ছাত্রলীগ নেতাদের নির্দেশ উপেক্ষা করে তারা আন্দোলনে গিয়েছিলেন। এশার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়ার পর তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। মনে হচ্ছে ছাত্রলীগ তাদের ওপর আবারো হামলা করবে।

বেসরকারি ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির এক ছাত্র বলেন, যেভাবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা হুমকি দিয়েছেন, তাতে তারা আতঙ্কিত। যেকোনো সময় তারা বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।

এদিকে, মামলা ও গ্রেফতার নিয়েও আতঙ্কিত অনেকে। বিশেষ করে আন্দোলনের সময় যাদের ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে, তা দেখে দেখে অনেককে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ঘটনার ব্যাপারে গত ১০ এপ্রিল রাতে শাহবাগ থানায় চারটি মামলা হয়েছে। ওই মামলাগুলোতে কারো নাম উল্লেখ করা না হলেও আন্দোলনকারীরা মামলাগুলো নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায়। ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হয় কি না; না হলে মামলার পরবর্তী পদক্ষেপে আন্দোলনকারীদের নাম ঢুকে যায় কি না সেই নিয়ে অনেকে শঙ্কিত।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/০৯২৯ঘ.)