হাতুড়ি পেটায় পা ভাঙা তরিকুলকে রাখেনি রামেক হাসপাতাল

হাতুড়ি পেটায় পা ভাঙা তরিকুলকে রাখেনি রামেক হাসপাতাল

ঢাকা, ৬ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লাঠি, হাতুড়ি ও রামদার আঘাতে ডান পায়ের দুই হাড় ভেঙে যাওয়া তরিকুলকে ছাড়পত্র দিয়ে বের করে দিয়েছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার বিকালে তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তরিকুলের ছাড়পত্রে স্বাক্ষর করা চিকিৎসক সুব্রত প্রামাণিক বলেন, তাকে (তরিকুল) দুসপ্তাহের অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। তবে তরিকুলের সহপাঠীদের অভিযোগ- তরিকুল এখনও অসুস্থ। সে হাঁটতে পারছে না। অজানা কারণে হাসপাতাল থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত সোমবার বিকালে কোটা সংস্কার অন্দোলনকারীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পতাকা মিছিল বের করে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এতে ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এদের মধ্যে ইসলামিক স্ট্যাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র তরিকুলকে একা পেয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রামদা, হাতুড়ি ও লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। এতে তার ডান পায়ের দুটি হাড় হাঁটুর নিচে থেকে ভেঙে যায়। মাথায়ও গুরুতর জখম হয়। ওইদিন বিকালে তাকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি এখনও অসুস্থ। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকালে তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

রামেক হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত কুমার প্রামাণিক বলেন, তার সঙ্গে কোনও অবিচার করা হয়নি। তার পা প্লাস্টার করে দেওয়া হয়েছে। এখন দুই সপ্তাহ অবজারভেশনের জন্য রাখা হয়েছে। দুই সপ্তাহ পর তাকে আবারো হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে।

তবে তরিকুলের সহপাঠীরা অভিযোগ করেন, তরিকুলের পায়ে কোনও প্লাস্টারই করা হয়নি। দুদিন পর পর ড্রেসিং করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহপাঠী বলেন, তরিকুল এখনও অসুস্থ। সে এপাশ-ওপাশ করতে পারছে না। আমরা ডাক্তারদের জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন রিলিজ দেওয়া হচ্ছে? কিন্তু তারা কোনও উত্তর দেননি।

এ বিষয়ে তরিকুলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি ভালো করে কথা বলতে পারছিলেন না। অতিকষ্টে তিনি বলেন, আপনারা তো ভিডিওতে দেখেছেন, কিভাবে আমাকে মারধর করা হয়েছে। ওই ঘটনা আর বলতে চাচ্ছি না। কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। একা হাঁটাচলা করতে পারছি না। এপাশ-ওপাশ করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ডাক্তার যখন রিলিজ দিচ্ছিলেন, তখন আমি একা ছিলাম। আমি স্যারকে রিলিজ না দিতে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি ১৫ দিন পর আসতে এবং দু’দিন পর পর ড্রেসিং করতে বলেছেন। তখন বিষয়টি আমার সহপাঠীদের জানাই। তারা প্রক্টরের সঙ্গে কথা বলে। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। পরে আমার সহপাঠীরা আমাকে রয়্যাল হাসপাতালে নিয়ে আসে।

তরিকুল আরো বলেন, এর আগে সকাল ৮টার দিকে পুলিশের তিন সদস্য দায়িত্ব পালনে আসেন। তাদের একজন আমার হাতে হাতকড়া পরাতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু অন্য একজন পুলিশ তাকে বাধা দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডাও হয়। পরে আর হাতকড়া পরাননি তারা।

তরিকুলের সহপাঠীরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর দু’টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যখন তরিকুলকে রিলিজ দেওয়ার কথা বলছিল। তখন আমরা প্রক্টরের কাছে যাই। আমরা প্রক্টরকে বলি, স্যার তরিকুলের অবস্থা খুবই খারাপ। তাকে কর্তৃপক্ষ রিলিজ দিচ্ছে। আপনি যদি তাদের বলে দেন, তাহলে হয়তো রিলিজ দেবে না। কিন্তু প্রক্টর জানান, কর্তৃপক্ষ রিলিজ দিলে তার কিছুই করার নেই।

এদিকে, ছাত্রলীগের হামলায় তরিকুলের হাড় ভেঙেছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, কোটা সংস্কারের নামে তারা ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছিল। এসময় আমরা মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিই। আমাদের হাতে কোনও লাঠি বা অস্ত্র ছিল না। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় শিবির ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চাইলে আমরা তা প্রতিহত করেছি।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০২৫ঘ.)