প্রধানমন্ত্রীর ‘ইউটার্ন', কী হবে কোটা আন্দোলনের?

প্রধানমন্ত্রীর ‘ইউটার্ন', কী হবে কোটা আন্দোলনের?

ঢাকা, ১৪ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : তিন মাস আগে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হবে৷ কিন্তু বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন তিনি৷ কোটা তাহলে থাকছে? কতটা থাকছে? এ নিয়ে এখন কে কী ভাবছেন?

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে কোটা পদ্ধতি না রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ এরপর কিছুদিন শান্ত থাকলেও প্রজ্ঞাপনের দাবিতে আবারো আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা৷ আন্দোলনকারীদের কয়েকজন নেতার রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠার পর সমালোচনাও হতে থাকে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে৷ আন্দোলনকারীরা সেসব হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করেছে৷ তারপর পুলিশও তৎপর হয়ে ওঠে৷ কয়েকজন আন্দোলনকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এখন আন্দোলন চললেও নেতাদের অনেকেই পুলিশের ভয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন৷ এরপরও আন্দোলন চলছে৷ আগামী রবিবার তারা নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করবেন৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী একবার বললেন এটা বাতিল, আবার বৃহস্পতিবার বললেন উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে৷ তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে আগেই বিষয়টা জেনে-বুঝে বলতে হতো৷ প্রধানমন্ত্রী একটা কথা বললে সবাই আশ্বস্ত হয়৷ এখন আদালতের রায়ই যদি বাধা হয়, তাহলে আদালতে আপিল করে সামাধান করতে হবে৷ সবাই বোঝে কোটার একটা সংস্কার হওয়া প্রয়োজন৷ এটা সবাই স্বীকারও করেন৷ তাহলে যেভাবে করলে ভালো হয়, সবাই মিলেই সেটা করতে হবে৷ এটা নিয়ে অযথা ঝামেলা করার দরকার কী? দেখেন, যে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে, এখন তাদেরই অভিযুক্ত করা হচ্ছে, এটা ঠিক নয়৷ শিক্ষার্থীদের কথা তো ভাবতে হবে৷”

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত৷ এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ৷ কোটা ‘বাতিলে' প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ এই কমিটি কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন দেবে৷ একটি মিটিংও তারা করেছে৷

গত বৃহস্পতিবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা পরিবর্তন করা যাবে না৷ এটা নিয়ে উচ্চ আদালতের রায় রয়েছে৷ পাশাপাশি কোটা সংস্কারের আন্দোলনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাড়িতে হামলার অভিযোগে যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, আন্দোলন হলেও তাদের ছাড়া হবে না৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, “কোটা আন্দোলনকারী কাউকে আটক করা হচ্ছে না এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নিচ্ছি না৷ শুধুমাত্র যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি৷ যারা ভিসির বাড়ি ভাঙচুর করেছে বা অগ্নিসংযোগ করেছে, তাদের ধরা হচ্ছে৷”

প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা এবং আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর যুগ্ম আহবায়ক লুবনা জাহান ডয়চে ভেলেকে বলেন, “কোটা সংস্কার নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যে পুরো বাংলাদেশের মানুষ হতাশ৷ প্রধানমন্ত্রী ১১ এপ্রিল সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘কোটা বাতিল৷’ কিন্তু এখন আবার বলা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা কমানো যাবে না, ৩০ শতাংশ রাখা হবে৷ কিছুটা রাখুক, আমরাও চাই৷ কিন্তু ৩০ শতাংশ যেভাবে বলা হচ্ছে, আমরা মনে করি আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে৷ পুরো জাতিকে হতাশ করেছে তার এই কথা৷ আমরা কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো৷ আগামী রবিবার সংগঠনের পক্ষ থেকে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে৷”

অপরদিকে নেতাদের কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন চলছেই৷ কেন্দ্রের ঘোষণা অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা ৫ দিন ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি অনেক জায়গায়৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৪টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছে বলে জানা গেছে৷ তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, “আমি যতটুকু জানি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগেই ক্লাস হয়েছে৷ তবে যে বিভাগগুলোতে ক্লাস হয়নি, সেসব বিভাগের শিার্থীদের বলবো, দাবি-দাওয়া থাকলে বিভাগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে উত্থাপন করতে৷ আমরা তার সমাধান করবো৷”

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু ডয়চে ভেলেকে বলেন, “পাঁচ বছর আগে আমি একটা লেখা লিখেছিলাম কোটার সংস্কারের জন্য৷ আমি নিজে চাই কোটার সংস্কার হোক৷ আসলে একশ' বছর পর তো আর মুক্তিযোদ্ধা কোটার দরকার হবে না৷ থাকবেও না৷ এখন কিছু রাখার প্রয়োজন আছে৷ তবে এই আন্দোলনটা যখন শুরু হয়েছিল, তখন যেভাবে ছিল, এখন কিন্তু পরিস্থিতি বদলে গেছে৷ কিছু কিছু আন্দোলনকারী এমন একটা ভাব তৈরি করেছে যে, মুক্তিযোদ্ধা কোটাই তাদের বিরক্তির কারণ৷ এটা তো উচিত না৷ আমি তো বলব, নারী কোটা আরো বাড়ানো উচিত৷ তবে শেষ কথা বলবো, এর একটা যৌক্তিক সমাধান হওয়া দরকার৷ সরকারের উচিত এটার সমাধান করা৷”

এদিকে শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, “সরকারের যদি নিয়ত ঠিক থাকতো, তাহলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় এমেন্ড (সংশোধন) করতো৷ হাইকোর্টে এ বিষয়ে কোনো রায় আছে বলে আমার মনে হয় না৷ তারপরও হাইকোর্টের যদি এ ধরনের কোনো রায় থাকে, সেটা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের ব্যাপারে আছে৷ নাতি-নাতনিদের ব্যাপারে আছে বলে আমি মনে করি না৷ তারপরও বলবো, প্রধানমন্ত্রী নিজের কথা রক্ষা করতে, তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে সরকারই তো হাইকোর্টে গিয়ে সেটাকে সংশোধন করতে পারে৷” সূত্র: ডয়চে ভেলে।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২৩৪০ঘ.)