‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কথা বলাই ঝুঁকিপূর্ণ’, বলছেন ছাত্র ও শিক্ষকরা

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কথা বলাই ঝুঁকিপূর্ণ’, বলছেন ছাত্র ও শিক্ষকরা

ঢাকা, ১৭ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শিক্ষক হেনস্থা ও শিক্ষার্থী লাঞ্ছনা ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও মিছিলের কর্মসূচি পালিত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা এসব ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে বলেছেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে। তবে উপ-উপাচার্য বলছেন, কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই ব্যবস্থা নিয়েছে এবং এরপরেও অভিযোগ পেলে প্রয়োজনে আরো ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত কিছুদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক হামলার শিকার হয়েছে আন্দোলনকারীরা, এবং তাদের সংহতি জানানো শিক্ষকরাও। এর বাইরেও সাধারণ শিক্ষার্থীদেরও নানাভাবে নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে।

এর মধ্যে শনিবার অর্থনীতি বিভাগের দুই শিক্ষার্থীকে সূর্যসেন হলে হেনস্থার ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার মানববন্ধন ও বিক্ষোভ থেকে ৭২ ঘন্টার ক্লাস বর্জনের ডাক দেয় বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

সমাবেশে একজন শিক্ষার্থী তার বক্তৃতায় বলেন, “আমরা যারা এ মানববন্ধন করছি, নিপীড়নের প্রতিবাদ করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এখানে দাঁড়িয়েছি তাদের সার্বিক নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে”।

যদিও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং সাময়িক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে তিনজনের বিরুদ্ধে কিন্তু একই ধরনের উদ্বেগ দেখা গেছে।

রবিবার শহীদ মিনারে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আয়োজিত কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে গিয়ে শিক্ষক তানজিম উদ্দিন আহমেদ যেভাবে হুমকি ও হেনস্থা শিকার হয়েছেন তার প্রতিবাদে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীর মানববন্ধনেও।

শিক্ষার্থীদের একজন সুমাইয়া হালিম বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কথা বলাটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, “শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ সব এখন রাজনৈতিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবাই সরকারকে সার্ভ করতে চাচ্ছে। এর মধ্যেই কেউ যখন অধিকার খর্বের প্রতিবাদ করে - তখনই বলা হয় অন্যায় করছো। এর প্রতিবাদেই আমরা সমাবেশ করছি”।

আরেকজন শিক্ষার্থী বলছেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে মোটেও নিরাপদ মনে করছেন না তিনি।

“গত কয়েকদিন ধরে ক্যাম্পাসে নানা ঘটনা ঘটছে। আমাদের শিক্ষকের সাথে অত্যন্ত অসন্মানজনক আচরণ ও হুমকি দেয়া হয়েছে। এসব কারণেই আমরা নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে রাস্তায় এসেছি”।

মানববন্ধন ও সমাবেশের পর প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের একটি বেশ বড় মিছিল যখন কলাভবন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।

এর পরপরই টিএসসিতে রাজু ভাস্কর্য চত্বরে আরেকটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে কাল উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষার্থীবৃন্দের ব্যানারে থাকা শিক্ষার্থীদের একটি দল।

কর্মসুচিতে যোগ দেয়া শিক্ষার্থী কিশোয়ার ওয়াসেকার অভিযোগ, শিক্ষক-অভিভাবক-শিক্ষার্থী কেউ এখন নিপীড়ন থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না - যা তাদেরকে ক্ষুব্ধ করে তুলছে।

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতিকে এমন জায়গায় আনা হয়েছে যে মত প্রকাশের অধিকার বলতে আর কিছুই নেই। আমরা চাই কোটা সমস্যার সমাধান আর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার হোক।”

আর মীর আরাফাত মানব বলছেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের আহবানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগেই ক্লাস বর্জন করছে শিক্ষার্থীরা। আর সে কারণেই ক্যাম্পাসে একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ বলছেন, ক্যাম্পাসে মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে বলেই প্রতিদিন নানা কর্মসূচি পালন হচ্ছে।

“বিশ্ববিদ্যালয়ে যা ঘটছে তা নিয়ে আমরা সজাগ আছি। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি ঘটনায তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রক্টরিয়াল টীম ও হল প্রশাসনগুলো সক্রিয় হয়েছে। তারপরেও অভিযোগ থাকলে কর্তৃপক্ষকে জানালে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে”।

উপ-উপাচার্য অবশ্য ক্যাম্পাসের চলমান ঘটনার সাথে বাইরে কারও ইন্ধন বা যোগাযোগ আছে কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে এটি পরিস্কার হলে আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে মন্তব্য করেন। সূত্র: বিবিসি

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২১১৪ঘ.)