তিন শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানি, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বরখাস্ত

তিন শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানি, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বরখাস্ত

ময়মনসিংহ, ১৮ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : তিন নারী শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহিদুল কবিরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়।

এরআগে, মঙ্গলবার ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানীর অভিযোগ তোলেন একই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক ইসমতআরা ভূঁইয়া ইলা, সহকারী অধ্যাপক নীলা সাহা এবং নুসরাত শারমীন। তারা উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ড. মোঃ হুমায়ুন কবীর জানান, ১৭ জুলাই, থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ইসমতআরা ভূঁইয়া ইলা, সহকারী অধ্যাপক নীলা সাহা এবং নুসরাত শারমিন স্বাক্ষরিত একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন। তারই প্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

অভিযোগপত্রে ইসমতআরা ভূঁইয়া ইলা বলেন, আমরা যোগদানের পর হতে আজ অবধি একই বিভাগের শিক্ষক মুহাম্মদ রুহুল আমিনের দ্বারা প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি। গত মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির সভার সমাপ্তি ঘোষণার পর আমি (ইসমতআরা ভূঁইয়া ইলা), বিভাগের শিক্ষক আল-জাবির, মাজহারুল হোসেন তোকদার, অফিস সহকারী সাইদুর রহমান ও অভিযুক্ত শিক্ষক রুহুল আমিন পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলাম এমন পরিস্থিতিতে রুহুল আমিন আমার সামনে থাকা অবস্থায় উপরে বর্ণিত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সামনে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর চোখ টিপ দিয়ে খারাপ ইঙ্গিত করেন। এ অবস্থায় আমি তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করি এবং বিগত দিনের কিছু অশালীন, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ঘটনা উল্লেখ করে তাকে অবহিত করলে তিনি অকপটে বিভাগের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সামনে স্বীকার করেন যে, তিনি বিভিন্ন সময়ে আমাকে উত্ত্যক্ত করেছেন। উত্ত্যক্তের ধরণগুলো হলো, তিনি বিভিন্ন সময়ে আমার ছবি এডিট করে কুরুচিপূর্ণভাবে পাঠান এবং বিভিন্ন নোংড়া ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা সম্পন্ন লেখা আমাকে টেক্স করেন। যা এতবছর যাবৎ আমি সহকর্মী ভেবে সহ্য করে আসছিলাম এবং তাকে একাধিকবার সতর্কও করেছিলাম। বিভাগের একটি ফলাফল প্রস্তুত করার সময় ডেমোনস্ট্রেটর আরিফ হাসান এর সামনে আমার শরীরে হাত দিয়ে খারাপ ভাষা ব্যবহার করেন। আমি সাথে সাথে তার প্রতিবাদ করি। প্রতিনিয়ত অনেক নোংড়া, অশালীন, যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ আমিসহ বিভাগের অন্য নারী সহকর্মী সহকারী অধ্যাপক নীলা সাহা এবং নুসরাত শারমীনের সাথেও তিনি করে যাচ্ছেন।

অভিযোগ পত্রে নীলা সাহা বলেন, বিভাগে যোগদানের পর থেকে শিক্ষক রুহুল আমিন তার সাথে একই আচরণ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তিনি একদিন অফিস কর্মকর্তার কক্ষে আমার চুল ও গালে হাত দিয়েছিলেন। তৎক্ষনাৎভাবে আমি তার প্রতিবাদ করি। কিন্তু তার পরেও তিনি সাবধান না হয়ে প্রতিনিয়ত একই ধরনের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এবং অশালীন দৃষ্টিই নিক্ষেপ করে চলেছেন।

অভিযোগ পত্রে নুসরাত শারমিন বলেন, বিভাগে শাড়ি পরে আসলে অভিযুক্ত শিক্ষক আমার দিকে নোংড়াভাবে তাকিয়ে থাকেন এবং নোংড়া মন্তব্য করেন। যার প্রতিবাদ স্বরূপ সাবেক উপাচার্যের কাছে সহকর্মী নীলা সাহাসহ মৌখিকভাবে অভিযোগ করে এসেছিলাম, কিন্তু সাবেক উপাচার্য এ বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

এ বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক রুহুল আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, অভিযোগের বিষয়টি ভিত্তিহীন। এটা আমার বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।

(জাস্ট নিউজ/একে/২৩৫৮ঘ.)