গোলাপি সালোয়ার কামিজই কাল হয়েছে লুৎফুন্নাহারের

গোলাপি সালোয়ার কামিজই কাল হয়েছে লুৎফুন্নাহারের

ঢাকা, ১৭ আগস্ট (জাস্ট নিউজ): লুৎফুন্নাহার ওরফে লুনার দোষ, তার একটি গোলাপি রঙের সালোয়ার-কামিজ আছে। একই রকম সালোয়ার-কামিজ পরে কেউ একজন আওয়ামী লীগ অফিসে শিক্ষার্থী খুন ও ধর্ষণের গুজব ছড়িয়েছিলেন। অজ্ঞাতনামা ওই নারীকে পাওয়া যায়নি। সেই নারী সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছেন লুৎফুন্নাহার।

ইডেন কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী লুৎফুন্নাহার সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মঞ্চ বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক। শিক্ষার্থীদের ওই আন্দোলনে সরকারের অবস্থান ও ছাত্রলীগের হামলা নিয়ে তিনি বিভিন্ন সময় ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। গোলাপি রঙের সালোয়ার-কামিজ পরে শহীদ মিনারে দাঁড়িয়েছেন, টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।

তার সহযোদ্ধারা বলছেন, ৪ আগস্ট জিগাতলায় শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারপন্থী সংগঠনগুলোর হামলার সময় খুন ও ধর্ষণ নিয়ে একই রকম পোশাক পরে এক নারী ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। এরপর থেকেই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা লুৎফুন্নাহারকে নিয়ে ফেসবুকে গুজব ছড়াতে শুরু করেন। প্রতিটি ছবিতেই লুৎফুন্নাহারের পরনে ওই গোলাপি সালোয়ার-কামিজ।

লুৎফুন্নাহার অবশ্য আগে থেকেই আশঙ্কা করছিলেন, তাকে ফাঁসানো হবে। ৭ আগস্ট ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে তিনি বলেন, এক মাসের বেশি সময় ধরে ঢাকার বাইরে আছি। অনলাইনে কখনো কোনো আজাইরা স্ট্যাটাস দিয়েছি কি না, মনে পড়ে না।...একটা যৌক্তিক আন্দোলনে সক্রিয় থাকায় কত শত মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ফাঁসানোর ব্যর্থ চেষ্টায় তারা মত্ত। ছবি এডিট করতে হলেও যে ন্যূনতম জ্ঞানটুকু থাকা দরকার, সেটুকুও তাদের নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকার-সমর্থক গোষ্ঠীগুলোর চাপে আসলে পুলিশ লুৎফুন্নাহারকে গ্রেপ্তার করে। তাকে গ্রেপ্তারে ঢাকা থেকে পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগের একটি দল ও বেলকুচি থানা-পুলিশ অভিযান চালায়। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার গ্রামের বাড়ি থেকে তারা ঘুমন্ত লুৎফুন্নাহারকে তুলে আনে। ঢাকায় আসার পর পুলিশ নিশ্চিত হয় ভিডিওটি লুৎফুন্নাহারের নয়। পরে তাকে রমনা থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ড চাইলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

রমনা থানায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে পুলিশ বলেছে, আসামির টাইমলাইনে পোস্টকৃত অশ্রাব্য স্ট্যাটাস দেখে যে কেউ নীতিভ্রষ্ট হতে পারে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

ওই এজাহারে আরো বলা হয়েছে, গোপন তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে লুৎফুন্নাহার অনেক সক্রিয়ভাবে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের সাইবার অপরাধ বিভাগ মামলাটির তদন্ত করছে। সাইবার অপরাধের অতিরিক্ত উপকমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, লুৎফুন্নাহার তার জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়েছেন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় একটি বিশেষ পক্ষকে/এস্টাবলিশমেন্টকে সমালোচনা করেছেন ও অশ্রাব্য শব্দ ব্যবহার করেছেন। তার বক্তব্য গুজবের পক্ষে উসকানিমূলক ছিল।

তবে লুৎফুন্নাহারের ৪ তারিখের পোস্টে দেখা যায়, তিনি বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের ভূমিকার ব্যাপারে সমালোচনা করেছেন।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও শামসুন্নাহার হলের আবাসিক ছাত্রী, স্লোগান একাত্তরের সাধারণ সম্পাদক শেখ তাসনিম আফরোজ ইমিকে কেন পুলিশ তুলে নিয়ে গেল, তার কোনো জবাব গতকাল পর্যন্ত পুলিশ দিতে পারেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় গুজব ছড়ানোর জন্য চারটি মেয়েকে খোঁজ করছে। তাসনিমকে ধরা হয়েছে ভুল করে। পরে পাঁচ ঘণ্টা আটকের পর তাসনিমকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল বাতেন বলেন, ফেসবুকে তার কিছু পোস্ট ছিল। তবে তার অপরাধের মাত্রা অত তীব্র ছিল না। সে জন্য মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অপরাধের মাত্রা সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে একজন ছাত্রীকে তুলে আনার যৌক্তিকতা কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেই কৈফিয়ত তিনি দিতে বাধ্য নন।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৫৪০ঘ.)