ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী

শিশু বমি করলে যা করবেন...

শিশু বমি করলে যা করবেন... ছবি: ইউনিসেফ বাংলাদেশ।

ঢাকা, ২৫ জুন (জাস্ট নিউজ) : বমির কারণে সব শিশুই দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। শিশু নিজেও খুব ভয় পায়। তার হৃৎস্পন্দন হার বেড়ে যায়। বাচ্চা বমি করে নানা কারণে। কারণ অনুযায়ী সম্ভাব্য জটিলতা রোধে নিচের তথ্যগুলো জানা থাকা প্রয়োজন।

বাচ্চার বয়স কত?
বাচ্চার বমির কারণ শিশুর বয়স অনুযায়ী অসুখের চিন্তা মাথায় রেখে করা ভালো। যেমন-

ক. নবজাতক ও নিওনেটে এক মাসের কম বয়সী শিশুতে অন্ত্রনালি ও শ্বাসনালির জন্মত্রুটি থাকলে বমি দেখা দিতে পার। যেমন ডিওডেনাল বা আইলিয়েল এট্রেসিয়া, পাইলোরিক স্টেনোসিস, হার্সপ্রাংস ডিজিজ, মিকোনিয়াম আইলিয়াস, ট্র্যাকিও ইসো-ফেজিয়েল ফিশ্চুলা ইত্যাদি। স্বল্প ওজনে জন্ম নেওয়া অকালজাত শিশু (প্রিটার্ম, প্রিম্যাচিউর বেবি), বিশেষত গর্ভকাল ৩২ সপ্তাহের নিচে হলে ও জন্ম ওজন ১৫০০ গ্রামের কম হলে কিছু অসুখ হয়, যার কারণে বমি হতে পারে। এ ছাড়া ইনফেকশন থেকেও বমি হতে পারে। যেমন- মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ, ইনবর্ন এরর অব মেটাবলিজম, এড্রিনোজেনিটাল সিনড্রোম ইত্যাদি।

খ. ইনফ্যান্ট (জন্মের ৪০ দিন পর থেকে) ও তদূর্ধ্ব বয়সে বমির প্রধান কারণ রোটা ভাইরাস ও অন্যান্য ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া বা আন্ত্রিক অসুখ।

গ. টোডলার্স (তিন বছর ও তদূর্ধ্ব) শিশুতে ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া ছাড়াও ব্যাকটেরিয়াজনিত ফুড পয়জনিং লিভার প্রদাহ, প্রস্রাব ইনফেকশন বমির প্রধান কারণ। ব্রেইন টিউমার ও মাথায় আঘাতের কারণেও এ বয়সের শিশুর উপসর্গ হিসেবে বমি হতে পারে।

ডায়রিয়াও আছে?
বমির সঙ্গে যদি পাতলা পায়খানা অর্থাৎ ডায়রিয়া থাকে, তবে বুঝতে হবে এ বমির কারণ প্রধানত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত আন্ত্রিক রোগ বা ফুড পয়জনিং।

পেটব্যথা আছে কি?
একিউট সার্জিক্যাল কারণ যেমন অ্যাপেন্ডিসাইটিসেও বমি হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত পেট ব্যথা থাকে। যেসব শিশু তার কথা বোঝাতে পারে তার কাছ থেকে তাই পেটব্যথা আছে কি না জানা জরুরি।

বমি কি এমনিতেই হয়ে যাচ্ছে?
নবজাতক ও ছয় মাসের কম বয়সী শিশু বুকের দুধ পান করার সময় খানিকটা বাতাসও গিলে ফেলে। সে বাতাস বের হয়ে আসার সময় কিছু দুধ গালের কোনা বেয়ে তুলে আনতে পারে। এটি সব বাচ্চার বেলায় ঘটে। এটি বমি বলা ভুল। বাচ্চা যদি ওজনে ঠিকঠাক বাড়ে, তবে দুশ্চিন্তা করা অনুচিত। এ রকম বমি শিশুকে খাওয়ানোর পর বা ২-৩ ঘণ্টা পরও হতে পারে। এ ধরনের বমি হলে বাচ্চাকে অসুস্থ দেখায় না। অন্যদিকে জোরের সঙ্গে বমি বা বেশ দূরে গিয়ে পড়ে এমন বমি হলে তা পাইলোরিক স্টেনোসিস থেকে হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখাতে হবে।

বমির রং কেমন?
বমির সঙ্গে রক্ত থাকলে তা লালচে হয়। বমির সঙ্গে রক্ত থাকার কারণ আপার জিআই ব্লিডিং বা পরিপাকতন্ত্রের উপরিভাগে কোনো কারণে রক্তপাত। বাদামি রঙের বমি বাওয়েল অবস্ট্রাকশন বা পায়খানা আটকে যাওয়ার কারণে হতে পারে। বমি হতে পারে পিতবর্ণেরও। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

কী ওষুধ খাচ্ছে?
ওষুধ সেবনের কারণেও বমি হতে পারে। যেমন- ডিগোক্সিন, এমাইনোফাইলিন-জাতীয় ওষুধের বেশি মাত্রা বমির কারণ হয়।

অসুস্থ দেখাচ্ছে?
শিশুর দিকে ভালো করে দেখুন। তার কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করুন। অসুখ থেকে বমি হলে তার মধ্যে এর প্রভাব পড়বে। শিশুকে কাহিল বা অসুস্থ দেখাবে। যদি শিশুকে গুরুতর অসুস্থ মনে হয়, খুব দুর্বল হয়ে যায়, তবে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১২০০ঘ.)