ডা. অমৃত লাল হালদার, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

শিশুর রোগ প্রতিরোধে টিকার গুরুত্ব

শিশুর রোগ প্রতিরোধে টিকার গুরুত্ব

ঢাকা, ২৮ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : শিশুর রোগ প্রতিরোধে টিকার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধে নবজাতক ও শিশুদের বিনামূল্যে ১০টি টিকা দেওয়া হচ্ছে। রোগগুলো হলো যক্ষ্মা (বিসিজি), ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, টিটেনাস, হেপাটাইটিস-বি এবং হেমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি (একসঙ্গে পাঁচটি: পেন্টা), নিউমোনিয়া (পিসিভি), পোলিওমায়েলাইটিস (ওরাল পোলিও এবং আইপিভি), হাম ও রুবেলা (এম আর)। এ টিকাগুলো সব টিকাদান কেন্দ্র থেকে নিয়মিত প্রদান করা হয়।

এসব টিকা ছাড়া অন্যান্য রোগের জন্য আরও কিছু টিকা রয়েছে, যেগুলো সরকারিভাবে দেওয়া হয় না। তবে আলাদাভাবে কিনে দেওয়া যায়। সেগুলোর মধ্যে রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া, টাইফয়েড, ইনফ্লুয়েঞ্জা, হেপাটাইটিস-এ জন্ডিস, মেনিঙ্গকক্কাল মেনিনজাইটিস, ভেরিসেলা (চিকেনপক্স), জরায়ুমুখ ক্যানসার ও কলেরা রোগের টিকা অন্যতম। সরকারি টিকা সম্পর্কে সবাই মোটামুটি জানেন।

বেসরকারিগুলোর ডোজ শিডিউল সম্পর্কে সংক্ষেপ্তে বলছি। রোটা ভাইরাস ডায়রিয়ার দুডোজ টিকার প্রথম ডোজ দেড় মাস এবং দ্বিতীয় ডোজ আড়াই মাস বয়সে এবং তিন ডোজ টিকার তৃতীয় ডোজ সাড়ে তিন মাস বয়সে দিতে হয়। তবে ছমাস বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে অন্য সময়ও এ টিকা দেওয়া যাবে। তবে ছমাসের আগেই এ টিকার ডোজ শেষ করতে হবে। বর্তমানে যে টাইফয়েড এবং মেনিঙ্গকক্কাল মেনিনজাইটিসের যে টিকা দুটি পাওয়া যায়, তার প্রথম ডোজ দিতে হয় দুবছর বয়সে। এরপর তিন বছর পর পর বুস্টার ডোজ দিতে হয়। হেপাটাইটিস-এ জন্ডিস প্রতিরোধে শিশুর ১ বছর বয়সের পর যে কোনো সময় প্রথম এবং তার ছমাস পরে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে হবে। ইনফ্লুয়েঞ্জার ক্ষেত্রে ছমাস বয়সের পর যে কোনোদিন প্রথম ডোজ, বয়স তিন বছরের কম হলে চার সপ্তাহ ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে হয়।

এরপর প্রতিবছর শীত আসার আগে আগে একটি করে ডোজ দিতে হয়। জলবসন্ত (চিকেনপক্স) প্রতিরোধে শিশুর জন্মের নয় মাস পর যে কোনোদিন প্রথম এবং তার ছসপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে হয়। কলেরা রোগের টিকা তেমন একটা দেওয়া হয় না। তবে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে দেওয়া যেতে পারে।

কিছু গুরুত্বপূর্র্ণ তথ্য : মা-বাবাকে সবসময় মনে রাখতে হবে, শিশুকে সবগুলো সরকারি টিকা দিতে কমপক্ষে পাঁচবার টিকাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে। টিকা দিলে সামান্য জ্বর, টিকার স্থানে ব্যথা ও সাময়িকভাবে টিকা দেওয়ার স্থান শক্ত হয়ে যেতে পারে। এতে ভয়ের কিছু নেই। অপুষ্টিতে ভুগছে এমন শিশুকে অবশ্যই টিকা দিতে হবে। এসব শিশুর দেহে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কম থাকে। তাই তার প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে টিকা দেওয়া জরুরি।

আগে শরীরে কোনো দানা উঠে থাকলে অথবা অতীতে হাম/রুবেলা হয়ে থাকলেও সেই শিশুকে নয় মাস বা ২৭০ দিন পূর্ণ হলে প্রথম ডোজ এমআর টিকা এবং ১৫ মাস বয়স পূর্ণ হলে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দিতে হবে। একই টিকার দুডোজের মধ্যে কমপক্ষে ২৮ দিনের বিরতি থাকতে হবে। আগে দেওয়া যাবে না, পরে দেওয়া যাবে। কোনো কারণে তারিখ পার হয়ে গেলে পোলিও, ডিপিটি, হেপাটাইটিস-বি তারিখের অনেক পরে এমনকি এক বছর পর দিতেও সমস্যা নেই।

একই দিনে একাধিক টিকা দিলে কোনো সমস্যা নেই। পোলিও টিকা মুখে খেতে হয় বলে ডায়রিয়া থাকলে শিডিউলের ডোজ খাওয়ানোর পর ২৮ দিন বিরতিতে একটি অতিরিক্ত ডোজ খাওয়ানো হয়। বিসিজি টিকা দেওয়ার এক মাসের মধ্যে টিকার স্থানে ক্ষত হয়। যদি কোনো ক্ষতচিহ্ন না হয়, তবে তৃতীয় ডোজ পেন্টার সঙ্গে পুনরায় দিতে হবে। অসুস্থ শিশুকে সাময়িকভাবে টিকা দেওয়া যাবে না। তবে শিশু সুস্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিকা দিতে হবে। আগের পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা দেওয়ার পর শিশুর খিঁচুনি বা অজ্ঞান হলে পরবর্তীকালের পেন্টাভ্যালেন্ট টিকার ডোজ দেওয়া যাবে না।

এ ক্ষেত্রে পেন্টাভ্যালেন্ট টিকার পরিবর্তে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে অন্য টিকা দিতে হবে। তবে শিশুকে অন্য সব টিকা (ওপিভি, এমআর ইত্যাদি) নিয়ম অনুযায়ী দিতে হবে। আগের যে কোনো টিকা দেওয়ার পর কোনো মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে পরবর্তীকালে টিকা দেওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল এমন শিশুকে সব টিকা দেওয়া যায় না। তাই টিকা দেওয়ার আগে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

সরকারি অত্যাবশ্যকীয় টিকাগুলো দেয়ানোর পাশাপাশি বাকি টিকাগুলোও সময়মতো দেওয়া সম্ভব হলে অনেক মারাত্মক রোগ থেকে শিশুকে রক্ষা করা সম্ভব।

লেখক: আবাসিক চিকিৎসক বারডেম জেনারেল হাসপাতাল এবং ইব্রাহিম মেডিক্যাল কলেজ, সেগুনবাগিচা, ঢাকা

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০২৩ঘ.)