বড়পুকুরিয়ায় ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব, এমডি-জিএম প্রত্যাহার

বড়পুকুরিয়ায় ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা গায়েব, এমডি-জিএম প্রত্যাহার

দিনাজপুর, ২১ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : দিনাজপুর বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে তুঘলকি কারবার চলছে। যে যার মতো কয়লা বিক্রি’র টাকা আত্মসাৎ আর দুর্নীতির মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। খনি থেকে উত্তোলনকৃত ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা ইতোমধ্যে গায়েব হয়ে গেছে। ২২৭ কোটি টাকার বর্তমান বাজার দরের কয়লা হজম করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও একজন মহাব্যবস্থাপককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেই সাথে আরো একজন মহাব্যবস্থাপক ও উপ-মহাব্যবস্থাপককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে কয়লা খনি কোম্পানির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বেশ তোলপাড়ও চলছে।

ঘটনা তদন্তে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন এন্ড মাইনস) মো. কামরুজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্ল্যানিং) আইয়ুব খান চৌধুরীকে বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে বিসিএমসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। কয়লা খনি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব উদ্দিন আহমদকে অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) করে পেট্রোবাংলায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। গত বছর এপ্রিল মাসে তাকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কোম্পানি সেক্রেটারি ও মহাব্যবস্থাপক আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে তাৎক্ষণিক বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) করে সিরাজগঞ্জে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানিতে পাঠানো হয়েছে। আর সাময়িক বরখাস্তকৃত কর্মকর্তারা হলেন- খনি’র মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) আবু তাহের মো. নূর-উজ-জামান এবং উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলাম।

বিসিএমসিএল-এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দায়িত্বে অবহেলার জন্য এই চারজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নথিপত্রের হিসাব অনুযায়ী খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা যেখানে স্তুপ করে রাখা হয়, সেখানে মজুদ ছিল ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা। অথচ সেখানে এখন এক টন কয়লাও নেই বলে জানান কোম্পানির আরেকজন মহাব্যবস্থাপক। খনি কোম্পানির সূত্রে জানা গেছে, প্রতি টন কয়লার বর্তমান বাজার মূল্য ১৬ হাজার টাকা। সেই হিসাবে, হদিস নেই ২২৭ কোটি টাকার কয়লার।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সংলগ্ন কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের চিফ ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল হাকিম জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে চালাতে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে চার হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হয়। কিন্তু কয়লা সংকটের কারণে ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটিতে ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার দু’টি ইউনিট ইতিমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রটিতে এখন আংশিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন চলছে। অপর ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার কেন্দ্রটিও পূর্ণ শক্তিতে চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সদস্য আবু সাঈদ কয়লা খনি এলাকা গত সোমবার পরিদর্শনে যাওয়ার পর কয়লা গায়েব হওয়ার কথা প্রথমে ধরা পরে।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/২১২৬ঘ.)