সৌহার্দের বিস্তৃতি

সৌহার্দের বিস্তৃতি

মুশফিকুল ফজল আনসারী

‘পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই মনে রাখতে হবে আমাদের দেশ বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান, স্ট্রাটেজিক অবস্থানের কথা। এরই পাশাপাশি রয়েছে আমাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক এবং জাতিগত অবস্থানের দিক। পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি হচ্ছে জনগণের শক্তি। গণসমর্থন না থাকলে যতো বড় এবং দক্ষ ফরেন পলিসি করেন না কেনো তাতে কোনোই কাজ হবে না। এক ধাক্কায় সব কিছু লন্ডভন্ড হয়ে যাবে।’ পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে এমন স্পষ্ট ধারনা জনগণের সামনে তুলে ধরে ছিলেন আধুনিক বাংলাদেশের রুপকার এবং স্বাধীন কূটনীতির কালজয়ী প্রণেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তার এই ধারনার সাথে আজকের বাস্তবতার মিল শতভাগ। জনসর্মথনহীন অনির্বাচিত এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের যাঁতাকলে আমাদের নিজস্ব স্বকীয়তা, স্বাধীন কূটনীতি লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে।

সরকারের অবস্থান নতজানু হলেও দেশের মানুষের অবস্থান মোটেও তা নয়। বরং আমাদের বিদ্রোহী কবি নজরুলের ভাষায় ‘চিত্ত যেথা ভয় শুন্য, উচ্চে যেথা শির’। চবড়ঢ়ষব ঃড় চবড়ঢ়ষব ঈড়হঃধপঃ- কূটনীতির এমন বাস্তবতার মূলে রয়েছে জনসম্পৃক্ততা। এক দেশের মানুষের সঙ্গে অন্য দেশের মানুষের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ এখন রাষ্ট্রীয় কূটনীতির চেয়ে দৃঢ় এবং কার্যকর। এ ক্ষেত্রে গণভিত্তিক কল্যাণকর রাজনীতি এবং সংগঠন একটা অন্যতম অনুষঙ্গ।

মানুষের সকল প্রকার অধিকার হরণ করে একটি একদলীয় অনির্বাচিত সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনা করছে, এমন বাস্তবতা যেমন বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে পরিস্কার তেমনি স্পষ্ট। বাংলাদেশের মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঘাত-প্রতিঘাতের ভেতর দিয়ে ছুটে চলা দেশের সর্ববৃহৎ, গণভিত্তিক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র। বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী একতরফা নির্বাচনের বিষয়ে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ প্রায় সকল উন্নয়ন সহযোগি রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রতিক্রিয়া ছিলো অনেকটা এক ও অভিন্ন। অগ্রহণযোগ্য এ নির্বাচনের বৈধতা মেলেনি কোথাও বরং বেড়েছে বিএনপির প্রতি বন্ধু রাষ্ট্র সমূহের সহমর্মিতা ও সৌহার্দের মাত্রা।

দেশের তিন বারের নির্বাচিত সরকার প্রধান হিসাবে বেগম খালেদা জিয়ার অনুসৃত পরররাষ্ট্রনীতি ছিলো স্বাধীন ও মর্যাদাপূর্ণ। পারস্পরিক সহযোগিতা, সমতা ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিস্তৃত করাই ছিলো এই পররাষ্ট্রনীতির মূল লক্ষ্য।

বাংলাদেশের আগামীর নির্ভরতা এবং গণমানুষের নেতা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বিশ্বাস করেন সম্পর্কের ব্যাপ্তি ও গভীরতায়। বিশ্বায়নের এই যুগে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখার কোনো সুযোগ নেই। উদার দৃষ্টিভঙ্গি ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনে তার মনোভাব অত্যন্ত স্পষ্ট। আর তা হচ্ছে পারস্পরিক আস্থা, সহযোগিতা ও গণতন্ত্রের প্রতি সম্মান। দেশের মানুষের স্বার্থকে সমুন্নত রেখেই আবর্তিত হতে হবে যাবতীয় পররাষ্ট্রনীতি। তারেক রহমানের এমন ধারনার সাথে অনেক বন্ধু রাষ্ট্রই এখন পরিচিত। বাংলাদেশের একজন শীর্ষ রাজনীতিক হিসাবে পৃথিবীর অপরাপর গণতন্ত্রপ্রিয় রাষ্ট্র সমূহের শীর্ষ রাজনীতিকদের সাথে তার সম্পর্ক খুবি দৃঢ়। যুক্তরাজ্য, ইউভূক্ত দেশসমূহ এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের অনেক শীর্ষ রাজনীতিক জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থানের কারণে তারেক রহমানের প্রতি অনেকটা কৌতুহলী। প্রাচ্য থেকে পাশ্চত্য সর্বত্রই তার নেতৃত্বের বিকাশ সমাদৃত। আপামর মানুষের সাথে মিশে যাওয়ার অসাধারণ গুলাবলী বিশ্বব্যাপি তাকে পৌঁছে দিয়েছে এক অনন্য উচ্চতায়। আর এখানেই যতো বিপত্তি। শাসক দলের প্রতিহিংসার ছোবলও তাকে তাড়া করছে সর্বত্র। কোনো বাঁধা বিপত্তি তাকে তাঁর অবস্থান থেকে নিবৃত্ত করতে পারছে না, পারবেও না। কেননা গণভিত্তিক রাজনীতির নেতৃত্বের কদর দেশে-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত।

একটি উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে বিশ্বসভায় পরিচিত বাংলাদেশের ললাটে আজ জঙ্গিবাদ ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের তকমা। জঙ্গিবাদের ব্যাপক বিস্তার আর মৌলিক মানবিক অধিকার বিহীন অগতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গোটা দেশের অস্তিত্বকে ফেলেছ হুমকির মুখে। কূটনীতি বলতে এখন কেবল রাষ্ট্রাচার, এনজিওদের দেয়া পদক সংগ্রহ আর বিলাসী ভ্রমণ। নতজানু পরররাষ্ট্রনীতির চূড়ান্তরুপে স্বাধীন বাংলাদেশ।

শাসকশ্রেণী তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে প্রলম্বিত করার জন্য জনগণের ট্যাক্সের টাকার পরিচালিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করে চালাচ্ছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। উসকে দিচ্ছে জঙ্গিবাদের ভয়াল থাবা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যা দিনের আলোর মতো পরিস্কার। জঙ্গি দমনের নামে বিরোধী পক্ষের উপর চালানো হচ্ছে অবর্নীয় নির্যাতন। আর প্রকৃত জঙ্গিরা থেকে যাচ্ছে ঘটনার আড়ালে। বর্তমানে দেশে যে সব জঙ্গিদের ধরা হচ্ছে তাদের বিচারের আওতায় না এনেই হত্যা করা হচ্ছে। ফলে জঙ্গিবাদের মুলোৎপাটনে সরকারের আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। বিগত বিএনপি সরকারের আমলে জেএমবির শীর্ষ জঙ্গিদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছিলো। যা আজো দেশে-বিদেশে প্রশংসিত।

রাষ্ট্রের এ পরিস্থিতির জন্য দেশের মানুষ মোটেই দায়ী নয় বরং ভুক্তভোগী। রাষ্ট্রের চেহারা যখন এমন তখন নিজস্ব স্বকীয়তা ও স্বার্থকে সমুন্নত রেখে সম্পর্ক বিনির্মাণে উদ্যোগী তারেক রহমান। দেশের সাধারণ মানুষের অন্তর্নিহিত বার্তা বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি অবিরত। মানুষের প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার সাথে সঙ্গতি রেখে বিশ্বব্যাপি প্রশস্ত করছেন সৌহার্দের বিস্তৃতি। জনগণের শক্তির উপর নির্ভর করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার প্রত্যয় বিরাজিত তারেক রহমানের সংগ্রাম মুখর এই পথচলায়।

লেখক : সাংবাদিক।