বিদেশি কর্মী নিতে নতুন নিয়ম করছে মালয়েশিয়া

বিদেশি কর্মী নিতে নতুন নিয়ম করছে মালয়েশিয়া

ঢাকা, ১৬ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : বাংলাদেশ থেকে দশটি এজেন্সির মাধ্যমে জনশক্তি নেয়া বন্ধ করার পর এখন নতুন একটি পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া সরকার, যে নিয়ম সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য হবে এবং সব লাইসেন্সধারী এজেন্টই শ্রমিক নেয়ার সুযোগ পাবে।

মালয়েশিয়ার ইংরেজি দৈনিক স্টার অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরেন।

মাহাথির বলেন, অবৈধভাবে অবস্থানরত শ্রমিকদের নিয়ে তার দেশকে অনেক জটিলতা পোহাতে হচ্ছে। এ কারণে যেসব দেশ থেকে মালয়েশিয়া লোক নেয়, সব দেশের ক্ষেত্রেই এক নিয়ম চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

‘বাংলাদেশ, নেপাল আর অন্যান্য দেশ- সব ক্ষেত্রেই এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে।’

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ বাজার। সরকারি হিসাবে পাঁচ লাখের বেশি নিবন্ধিত বাংলাদেশি সেখানে বিভিন্ন পেশায় কাজ করেন; যদিও বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর ২০১৬ সালে ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। পাঁচ বছর মেয়াদী এই চুক্তির আওতায় লোক পাঠানোর অনুমতি দেয়া হয় ওই দশটি জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সিকে।
কিন্তু প্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগসাজশে একটি চক্র ওই দশ এজেন্সিকে নিয়ে সিন্ডিকেট করে শ্রমিকদের কাছ থেকে দুই বছরে অন্তত ২০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠার পর গত জুনে ওই ব্যবস্থা স্থগিত করে দেশটির সরকার।

সেই প্রসঙ্গ টেনে মাহাথির বলেন, দশ এজেন্টের ওই ব্যবস্থায় একটি মনোপলি তৈরি হয়েছিল। আর সেটা ভাঙতেই মালয়েশিয়া সরকার সব নিবন্ধিত এজেন্টের জন্য সুযোগ উন্মুক্ত করে দেয়ার একটি পথ খুঁজছে।

গত জুনে মালয়েশিয়ার স্টারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ এজেন্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে মাথাপিছু সর্বোচ্চ দুই হাজার রিংগিত খরচ হওয়ার কথা। সেখানে এজেন্টরা বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে ২০ হাজার রিংগিত আদায় করছিল। এর অর্ধেক টাকা যাচ্ছিল সেই সিন্ডিকেটের হাতে, যার বিনিময়ে তারা ওয়ার্ক পারমিট ও উড়োজাহাজের টিকেটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছিল।

২০১৬ সাল থেকে গত জুন পর্যন্ত এক লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক ওই প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় গেছেন এবং আরও অন্তত একলাখ লোক মালয়েশিয়ায় যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন বলে স্টারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়।

প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ জানান, নতুন ব্যবস্থা চালুর জন্য তার সরকার একটি ‘স্বাধীন’ কমিটি করে দেবে, যে কমিটি সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে সুপারিশ করবে।

এছাড়া স্বরাষ্ট্র ও মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে আরেকটি যৌথ কমিটি করা হবে জানিয়ে মাহাথির বলেন, সরকারি পর্যায়ে শ্রমিক নেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে এখন মালয়েশিয়ার যেমন চুক্তি আছে, নেপালের সঙ্গেও সেরকম একটি সমঝোতা স্মারক স্বক্ষরিত হবে শিগগিরই।

স্টার অনলাইন জানিয়েছে, মালয়েশিয়া সরকারের নতুন এই পদক্ষেপের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও কম্বোডিয়া দূতাবাসের কর্মকর্তারা। তবে বাংলাদেশি কর্মী আমদানির সঙ্গে যুক্ত রিক্রুটিং এজেন্টগুলো সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।

কুয়ালালামপুরের একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক মো. মকবুল মকুল বলেন, আমরা আমাদের কর্মীদের কথা ভেবে খুশি। এখন আর তাদের মালয়েশিয়া আসার জন্য ২০ হাজার রিঙ্গিত দিতে হবে না। ওই সিন্ডিকেটই তার মধ্যে ১০ হাজার রিঙ্গত নিয়ে নিত। ফলে শ্রমিকদের আসার খরচ অযৌক্তিকভাবে বেড়ে যেত।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৪৪৮ঘ.)