গাজীপুরে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে নতুন সম্ভাবনা

গাজীপুরে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে নতুন সম্ভাবনা

গাজীপুর, ৩ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : গাজীপুরের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল বিজ্ঞানী আবিস্কার করেছেন জলাশয়ে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ। সনাতন পদ্ধতি থেকে আলাদা এ চাষাবাদ পদ্ধতিতে রোগ বালাই কম এবং দেশের চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি সবজি উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের সবজি বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান জানান, ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সনাতন পদ্ধতিতে চালু রয়েছে। আমরা কৃষি বিজ্ঞানীরা পদ্ধতিটিকে আরো বৈজ্ঞানিক উপায়ে সুসংহত করে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার চিন্তা ভাবনা করছি। এ পদ্ধতিতে জলাশয় কাজে লাগিয়ে দেশের সবজির চাহিদা মেটানোর জন্য এই প্রকল্পে গবেষণা করা হয়। ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে দেশের চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি উৎপাদন সম্ভব।

এ পদ্ধতির সুবিধা হলো, যাদের আবাদি জমি নেই, তারা পুকুর, জলাশয়ে স্বল্প খরচে চাষাবাদ করতে পারবেন। এ পদ্ধতিতে চাষী বেড থেকে সারা বছর ফসল সংগ্রহ করতে পারবেন এবং ভালো দামে বিক্রি করে লাভবান হবেন। আর ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষাবাদে রাসায়নিক সার তেমন একটা ব্যবহার করা হয় না। ফলে বিষমুক্ত এবং নিরাপদ সবজি হিসেবে এর গ্রহণযোগ্যতা বেশি।

যেসব এলাকা বন্যাপ্রবণ এবং বেশিরভাগ সময় জলাবদ্ধতা থাকে সেসব জমিতে ফসল ও সবজি উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কৃষি বিজ্ঞানীরা ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন হাইড্রোপনিক চাষাবাদের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ কে এম সেলিম রেজা মল্লিক।

তিনি জানান, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যার কারণে আমাদের চাষাবাদের বৈচিত্র্য আনতে হচ্ছে। এজন্য নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং তা কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। আর এ ভাসমান পদ্ধতিতে বাঁশ বা পিভিসি পাইপ ও জাল দিয়ে অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সাধারণত ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩ ফুট প্রস্থের বেড বানিয়ে জালের ওপর কচুরিপানা বিছানো হয়। এই বিছানাই সবজির ক্ষেত। এর ওপর সবজির চারা রোপণ করা হয়। বর্তমানে দেশে বছরে সবজির চাহিদা প্রায় ১১ দশমিক ২৪ মিলিয়ন মেট্রিকটন। আর উৎপাদন হয় মাত্র ৩ দশমিক ১৩ মিলিয়ন মেট্রিকটন।

ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে এর উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে বলে তিনি দাবি করেন। এ পদ্ধতিতে লাউ, শসা, কুমড়া, মিষ্টিকুমড়া, টমেটো, বেগুন, কাঁচামরিচ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাল শাক, ডাঁটাশাক প্রভৃতিসহ সব ধরনের সবজি উৎপাদন করা যায়।

তিনি আরো জানান, দেশে নিচু জলাশয়ের পরিমাণ প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর, যেখানে প্রায় সারা বছর পানি থাকে। বর্তমানে শূন্য দশকি ৩৭৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। জলাশয়ে ভাসমান পদ্ধতিতে ৩০ লাখ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা গেলে ২৪দশমিক ৮৬ মিলিয়ন মেট্রিকটন উৎপাদন করা যাবে।

অল্প জমি ও ছাদে অ্যারোফনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ:

প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে অল্প জমি ও ছাদের চাষাবাদের জন্য এখানকার কৃষি বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন অ্যারোফনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ। এ পদ্ধতিতে একটি বালতিতে ৬ফুট লম্বা একটি পাইপ বসিয়ে সেখানো মোটর বসানো থাকে। পাইপের মধ্যে ২৪টি গর্ত করে বিভিন্ন এঙ্গেলে গাছ রোপন করা হয়। পরে মোটরের মাধ্যমে পানি উপরের দিকে বাহিত হয়ে গাছের শেকড় ভিজিয়ে নিচে আসে। আর পানির মধ্যে খাদ্য ও পুষ্টি উপাদান মিশ্রিত থাকে বলে মাটি ছাড়াই এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ সম্ভব।

এতে ক্যাপ্সিকাম, স্ট্রবেরী, টমেটো চাষাবাদ করা যাবে। অ্যারোফনিক পদ্ধতির এই যন্ত্র তৈরিতে খরচ হবে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা। পদ্ধতিটি শহরাঞ্চলে ছড়িয়ে দিতে পারলে সবজি উৎপাদন বাড়বে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

ভাসমান পদ্ধতিটি একটি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত চাষাবাদ পদ্ধতি দাবি করে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটি একটি অর্গানিক পদ্ধতি। এটিকে উন্নয়ণ ও কিভাবে উন্নত বীজের মাধ্যমে চাষাবাদ করা যায় সেলক্ষে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করা হয়। বর্তমানে এই প্রকল্পের উদ্ভাবিত পদ্ধতিটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতার মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এছাড়া মাঠ দিবস এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হাতে কলমে শেখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।-আমাদের সময়

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২০১৯ঘ.)