পৃথিবীর ছায়ায় ঢাকা রক্তিম চাঁদ

পৃথিবীর ছায়ায় ঢাকা রক্তিম চাঁদ

ঢাকা, ৩১ জানুয়ারি (জাস্ট নিউ) : সাড়ে চারশ' কোটি বছরের চেনা চাঁদটা বুধবারও উদিত হয়; তবে অচেনা রুপে। আলোয় উদ্ভাসিত নয়, তামার মতো রক্তিম। কিন্তু ঘণ্টা না যেতেই, হাপিস! পুব আকাশ থেকে গোটা চাঁদটাই উধাও হয়ে গেলো। মেঘে হারালো না তো! কিন্তু মেঘ কই? আকাশ ভরা কত তারা। সোয়া ঘণ্টা বাদে ছায়ার আড়াল থেকে উঁকি দেয়। পৃথিবীর ছায়ায় ঢাকা পড়ে গ্রহণ লেগেছিল, চাঁদে। ঘণ্টা বাদে স্বমহিমায় মধ্যগগণে অধিষ্ঠিত হয়, অন্যদিনের তুলনায় আয়তনে ও আলোয় বেড়ে। যাকে বিজ্ঞানিরা বলেছেন, 'সুপার মুন'।

বুধবার সূর্য, পৃথিবী, চাঁদ ছিল একই সমান্তরালে। ১৫২ বছর বছর পর, এমনটা হলো। এ কারণেই সন্ধ্যায় ঘন ঘন মুখ বদল হয় চাঁদের। উদিত হয় রক্তিম রুপে 'ব্লাড মুন' হয়ে। পৃথিবীর আড়ালে পড়ে, সূর্যের আলো হারিয়ে অন্ধকারে ডুবে। পৃথিবীর ছায়া সরে যেতেই আলোয় উদ্ভাসিত চাঁদে রঙ হয়ে গেলো নীলচে। বিজ্ঞান যাকে বলে, 'ব্লু মুন'।

প্রায় দেড়শ' পর পূর্ণগ্রহণ; এ সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়! উৎসবমুখর পরিবেশে আগারগাঁওয়ের বিজ্ঞান জাদুঘরে ও কুয়াকাটা সৈকতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে চাঁদ দেখেন সাধারণ মানুষ। টেলিস্কোপে চোখ লাগিয়ে চাঁদের রুপ দেখেন। প্রকৃতি ও মহাকাশপ্রেমী বিভিন্ন সংগঠনও আয়োজন চাঁদ দেখার উৎসব।

রাজধানীর মান্ডায় গ্রীন মডেল টাউনের উন্মুক্ত প্রান্তরে টেলিস্কোপে চাঁদ দেখার ক্যাম্প করে অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগ। রাশাহী ও পঞ্চগড়েও চাঁদ দেখার উৎসবে চন্দ্ররুপে মুগ্ধ, বিস্মিত হন দর্শনার্থীরা। শুধু ক্যাম্পে নয়, কেউ ছাদে কেউ জানালার গ্রিলের ফাঁকে দেখেছেন গ্রহণে রক্তিম চাঁদ। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের দেয়ালে দেয়ালে ঘুরছে পৃথিবীর ছায়ার আড়ালে পড়া ঘোলাটে চাঁদের ছবি।

মহাবিশ্বের বয়স সাড়ে তেরশ' কোটি বছর। সেই তুলনায় পৃথিবী একেবারে শিশু বয়েসী। মোটে ৪৬০ কোটি বছর। তার ক'দিন পর থেকেই চাঁদ পৃথিবীর অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। পৃথিবীর জন্মের নয় কোটি বছর বাদেই চাঁদের জন্ম। সেই থেকে ঘুরছে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে।

বিজ্ঞান বলে, মহাকর্ষের মায়ায় ঘুরছে চাঁদ। বিজ্ঞান যাই বলে বলুক, সাড়ে চারশ কোটি বছরের পুরনো চাঁদ আজো বিস্মিত করে মানব জাতিকে। যেমন করেছিল, ইতিহাসের প্রথম দিনে। বুধবারও করেছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো দক্ষিণ গোলার্ধ দেখেছে চাঁদের রক্তিম ও নীল রূপ। যা শেষ দেখা গিয়েছিল ১৮৬৬ সালে।

নাসার হিসাবে, বুধবার সাধারণ পূর্ণিমার চেয়ে ৭ শতাংশ বেশি বড় দেখা যায় চাঁদ। জোছনার আলো ছিল ১৫ শতাংশ বেশি। বুধবার বিকেল পাঁটা ৪৮ মিনিটে আংশিক চন্দ্রগ্রহণ শুরু হয়। সন্ধ্যা ছয়টা ৫১ মিনিটে পূর্ণগ্রহন শুরু হয়। সাতটা ২৯ মিনিটে পৃথিবীর ছায়া পূর্ণগ্রাস করে চাঁদকে। আটটা ৭ মিনিটে গ্রহণ সমাপ্ত হয়। ৯টা ১১ মিনিটে আংশিক গ্রহণও শেষ হয়। রাত ১০টা ৮ মিনিটে উপচ্ছায়াও সরে গিয়ে স্বমহিমায় অধিষ্ঠিত হয় নীলাভ পূর্ণচাঁদ।

কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সৈকতে রক্তিম চাঁদের গ্রহণ দেখতে হাজারো মানুষ ভিড় করেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আয়োজন করে সেমিনার। এতে বক্তৃতা করেন জাতীয় বিজ্ঞান যাদুঘরের মহাপরিচালক স্বপন কুমার রায়, অতিরিক্ত সচিব ইতি রাণী পোদ্দার, জেলা প্রশাসক ড. মোঃ মাছুমুর রহমান, ইউএনও তানভীর রহমান। সভাপতিত্ব করেন কুয়াকাটার মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২৩২৫ঘ.)