ঢাকা, ১৩ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : ফোর-জি বা চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল এবং ইন্টারনেট সেবার জন্য বেতার তরঙ্গ বিক্রি করে বাংলাদেশ পেয়েছে পাঁচ হাজার কোটি।
কিন্তু বাংলাদেশে যেখানে থ্রী-জি সেবা নিশ্চিত করা যায়নি, সেখানে ফোর-জি মানের সেবা কতটা পাওয়া যাবে তা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ টেলিকম রেগুলেটরি কমিশন বা বিটিআরসি মঙ্গলবার ঢাকায় উন্মুক্ত নিলামে ফোর-জি ফ্রিকোয়েন্সী বা তরঙ্গ বিক্রি করে। বাংলাদেশের দুটি বড় মোবাইল ফোন কোম্পানি গ্রামীন ফোন এবং বাংলা লিংক এতে অংশ নেয়।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহাজাহান মাহমুদ বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, এই নিলাম থেকে বাংলাদেশ সরকারের কোষাগারে এসেছে ৫ হাজার ২শ ৬৮ কোটি টাকা।
তিনি জানান, মোট ৪৬ মেগাহার্টয ফ্রিকোয়েন্সি নিলামে তোলা হয়েছিল। এর মধ্যে নিলামে ১৫ মেগাহার্টয বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ তিন ভাগের এক ভাগ বিক্রি হয়েছে।
তিনি বলেন, বাকী ফ্রিকোয়েন্সি ভবিষ্যতে বিক্রি হবে বলে আশা করি। যে রেটে আজ ফ্রিকোয়েন্সী বিক্রি হলো, সেই রেট আগামী ছমাস বলবৎ থাকবে। বাকীটা সেই রেটে কেউ চাইলে নিতে পারবে আগামী ছ'মাস।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাজাহান মাহমদু বলেন, এই মার্জারের কারণে রবি মনে করছে তাদের হাতে যথেষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি আছে। সেজেন্য তারা নিলামে অংশ নেয়নি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের পর এখন সম্ভবত এই টেলিযোগাযোগ খাত থেকেই সবচেয়ে বেশি রাজস্ব পাচ্ছে সরকার।
নিলাম থেকে পাওয়া রাজস্ব সহ এবার এই খাত থেকে বাংলাদেশের সামগ্রিক উপার্জন দশ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। রেডিমেড গার্মেন্টস খাতের পর এটি সর্বোচ্চ। এবং এই অর্থের বেশিরভাগটাই আমরা বৈদেশিক মূদ্রায় পাই।
তিনি জানান, নিলামের অর্থের শতকরা ৬০ ভাগ মোবাইল অপারেটরদের আজ হতে এক মাসের মধ্যেই পরিশোধ করতে হবে। বাকিটা আগামী দুই বছরে ধাপে ধাপে দেবে।
ফোর-জি সার্ভিস চালু হওয়ার পর বাংলাদেশের গ্রাহকরা আগের চেয়ে অনেক দ্রুত গতিতে ইন্টারনেটে তথ্য-আদান প্রদান করতে পারবেন বলে আশা করছে বিটিআরসি।
তবে ফোর-জি'র পুরো সুবিধে ভোগ করতে গেলে যে ধরণের অবকাঠামো এবং মোবাইল ফোনের হ্যান্ডসেট থাকা দরকার, তার ঘাটতি আছে বলে স্বীকার করেন বিটিআরসির চেয়ারম্যান।
ফোর-জি বলতে কি বোঝায়
আক্ষরিক অর্থে ফোর-জি হচ্ছে ফোর্থ জেনারেশন বা চতুর্থ প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তি। এর আগের প্রজন্মের প্রযুক্তি ছিল টু-জি এবং থ্রী-জি। টু-জি প্রযুক্তি চালু হয় নব্বুই এর দশকের শুরুতে। এতে কেবল ফোন কল করা এবং টেক্সট মেসেজ পাঠানো যেত। এরপর ২০০৩ সালে আসলো থ্রী-জি প্রযুক্তি। এর ফলে মোবাইল ফোন থেকে ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ভিডিও কল করা এবং মিউজিক ও ভিডিও ডাউনলোড করার সুযোগ তৈরি হলো।
মোবাইল ফোনের ফোর-জি প্রযুক্তি আসলে থ্রী-জি প্রযুক্তিরই আরেক ধাপ অগ্রগতি। থ্রী-জি'তে যা যা করা সম্ভব, তার সবকিছু ফোর-জি'তেও করা যাবে, তাবে অনেক দ্রুতগতিতে এবং ভালোভাবে। ফোন কলের কোয়ালিটি হবে অনেক ভালো, ভিডিও কল করা যাবে ভালোভাবে, দ্রুত ভিডিও ডাউনলোড করা যাবে।
সেবার মান নিয়ে সংশয়
কিন্তু বাংলাদেশে মোবাইল ফোন অপারেটররা যেখানে থ্রী-জি সেবা ঠিকমত দিতে পারেনি, সেখানে এই নতুন সেবা কতটা দিতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন একজন বিশ্লেষক আবু সাঈদ খান।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোন অপারেটরই গ্রাহকদের মান সম্পন্ন থ্রী-জি সেবা দেয়নি। আর এই নিম্নমানের সেবার কারণে সরকারও কোন অপারেটরের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা নিয়েছে সেটা আমরা দেখিনি। এই ফোর-জি'তে ইন্টারনেট স্পীড কি হবে, তা নিয়ে সরকার ইতোমধ্যেই মোবাইল অপারেটরদের কাছে নতি স্বীকার করেছে। মিয়ানমারে যেখানে ফোর-জি গ্রাহকরা পাঁচশ এমবিপিস স্পীড পাচ্ছেন সেখানে বাংলাদেশে নাকি বিশ এমবিপিএসের ওপরে স্পীড যাবে না। -বিবিসি
(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২২৩০ঘ.)