বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

নরওয়েতে ইলেকট্রিক ব্যাটারিচালিত পরিবহন বিপ্লব

নরওয়েতে ইলেকট্রিক ব্যাটারিচালিত পরিবহন বিপ্লব

ঢাকা, ২১ জুন (জাস্ট নিউজ) : নরওয়ে হচ্ছে পুরো বিশ্বের মধ্যে প্রথম দেশ যারা তাদের পুরো পরিবহন ব্যবস্থাকে বৈদ্যুতিক জ্বালানি নির্ভর ব্যবস্থায় রূপান্তরের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েছে। একটি লক্ষ্য হচ্ছে, ২০৪০ সাল নাগাদ নরওয়ের সব স্বল্প দূরত্বের প্লেন ইলেকট্রিক ব্যাটারি দিয়ে চালানো।

২০২৫ সাল নাগাদ দেশটিতে বৈদ্যুতিক ব্যাটারি চালিত গাড়ি ছাড়া আর সব গাড়ি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। কীভাবে এই লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে নরওয়ে, তা দেখতে গিয়েছিলেন বিবিসির রজার হারাবিন- অসলো বিমান বন্দরের এক হ্যাঙ্গারে জড়ো হয়েছেন সাংবাদিকরা। ইলেকট্রিক ব্যাটারিচালিত যে বিমানটি একটু পরে আকাশে উড়বে, তার প্রস্তুতি চলছে।

নরওয়ে তার পুরো পরিবহন ব্যবস্থাকে বিদ্যুৎচালিত ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করতে চায়। সেই লক্ষ্যেই তৈরি করা এই বিমান। আকারে একেবারেই ছোট। এতটাই ছোট যে, তার ভেতর একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ঢোকা এবং আসনে বসাটা যেন রীতিমতো একটা লড়াই।

একটা কাগজের মতো যেন নিজেকে ভাঁজ করতে হলো এই আসনে বসতে গিয়ে। যেন অনেকটা বাচ্চাদের পার্কের কোনো রাইডে চড়ার মতো ব্যাপার। কিন্তু এটি আসলে বিশ্বের সবচেয়ে অত্যাধুনিক বিমানগুলোর একটি। এই বিমানটির ইঞ্জিনের শব্দ অন্য বিমানের মতো নয়। মনে হবে যেন কোনো বড় ফ্যান ঘুরছে। আর কোনো ধোঁয়া বের হয় না এই ইঞ্জিন থেকে।

২০৪০ সাল নাগাদ নরওয়ে চাইছে তাদের সব স্বল্প দূরত্বের ফ্লাইট এই ব্যাটারি চালিত বিমান দিয়ে চলবে। এটা কি আসলেই বাস্তবে সম্ভব?

এই ইলেকট্রিক প্লেনের উদ্ভাবক টিনা টিমোজোয়েকি বলছেন, খুবই সম্ভব। নরওয়ে স্বল্প দূরত্বের যেসব ফ্লাইট ইলেকট্রিক ব্যাটারিচালিত বিমান দিয়ে পরিচালনার কথা বলছে, সেগুলো মূলত দুশো হতে তিনশো কিলোমিটারের পথ পাড়ি দেয়।

টিনা টিমোজোয়েকির ভাষায়, আমাদের হাতে এখনই যে প্রযুক্তি আছে সেটাকে কিন্তু আরো বড় পরিসরে ব্যবহারের বিরাট সুযোগ রয়েছে। আমাদের স্বপ্ন হচ্ছে এমন একটি মেশিন তৈরি করা বোতাম চাপা মাত্র যেটি আপনাকে নিঃশব্দে এবং অনেকটা অগোচরে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাবে। এটি হবে এক নতুন প্রজন্মের ফ্লাইং মেশিন।

শুধু বিমান নয়, নরওয়েতে আরো অনেক ধরনের যানবাহনকেই ইলেকট্রিক ব্যাটারিচালিত বাহনে পরিণত করা হচ্ছে। পশ্চিম নরওয়েতে ইলেকট্রিক ব্যাটারিচালিত ফেরি চলাচল শুরু হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। এই ফেরিটিতে শব্দ বলতে গেলে শোনাই যায় না। কেউ ফেরিটিতে চড়লে মনে করতে পারেন, তিনি ফেরিতেই নেই।

স্টাইন ইয়োহানসন এরকম একটি ফেরির ক্যাপ্টেন। একটি মজার অভিজ্ঞতার কথা বললেন তিনি। কয়েক মাস আগে আমি আমাদের একটি পুরোনো ফেরিতে ওভারটাইম করতে যাই। সেই ফেরিটি ছিল ডিজেল ইঞ্জিনচালিত। এক সপ্তাহ আমি সেই জাহাজে ছিলাম। তারপর আমি এখানে এসে এই ব্যাটারিচালিত ফেরি চালাতে শুরু করলাম। তো শুরুতে আমার মনে হলো, আমি বোধহয় আমার ফেরির ইঞ্জিন স্টার্ট দিতে ভুলে গেছি। কারণ এই ফেরির ইঞ্জিন শব্দ এত কম করে....। আমি আসলে ইঞ্জিন স্টার্ট দিতে ভুলিনি। আমি ভুলে গিয়েছিলাম যে এই ইঞ্জিনে আসলে প্রায় কোনো শব্দই হয় না... আর এই ইঞ্জিন থেকে কোন ধোঁয়াও বের হয় না।

বার্গেনের রাস্তায় উনিস ফেয়ারেন একটি ইলেকট্রিক কার চালান। নরওয়ের সরকার এই ইলেকট্রিক গাড়ি চালানোর জন্য তাকে বেশ ভালোই ভর্তুকি দেয়। এটিতে করেই তিনি বাচ্চাদের স্কুলে আনা নেয়া করেন।

এটি দামে সস্তা, এটির চালানোর এবং মেরামত করার খরচও বেশ কম। নরওয়েতে সরকার আমাদেরকে ইলেকট্রিক কার চালানোর জন্য প্রচুর ভর্তুকি দেয়। ইলেকট্রিক কারের জন্য এমনকি পার্কি এবং ফেরি পারাপারের ফি পর্যন্ত কম। এটা তো পরিবেশের জন্যও খুব ভালো, বলেন তিনি।

নরওয়েতে তেলের ইঞ্জিনের গাড়ি ২০২৫ সালে নিষিদ্ধ করা হবে। বিদ্যুৎচালিত যানবাহনের ক্ষেত্রে নরওয়ে যে অন্যদের তুলনায় অনেক দূর এগিয়ে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১১৩৩ঘ.)