যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমের দাবি

সাংবাদিক খাসোগি ‘হত্যাকাণ্ড’ স্বীকার করবে সৌদি!

সাংবাদিক খাসোগি ‘হত্যাকাণ্ড’ স্বীকার করবে সৌদি!

ঢাকা, ১৬ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে খুন করা হয়েছে, এই দাবি স্বীকার করে নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সৌদি আরব। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রভাবশালী গণমাধ্যম সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এমনটি দাবি করা হয়েছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, খাসোগি খুনের ঘটনায় ভাড়াটে খুনিরা জড়িত থাকতে পারে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম দুটি এই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করল।

সৌদি রাজপরিবার বিশেষ করে প্রতাপশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক এই যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সৌদি সাংবাদিক গত ২ অক্টোবর বিয়ের কাগজপত্র সংগ্রহ করতে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে যান। তার পর তিনি আর সেখান থেকে বেরিয়ে আসেননি। তার আর কোনো খোঁজও মিলছে না।

তুরস্কের সরকার সমর্থক একটি গণমাধ্যম দাবি করেছে, সৌদি আরব থেকে বিমানে করে আসা ১৫ ব্যক্তি খাসোগিকে হত্যা করে চলে যায়। এ নিয়ে সারা দুনিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।

‌‘জিজ্ঞাসাবাদের সময় খাসোগিকে ভুলক্রমে হত্যা করা হয়েছে’ এমন দাবি করে সৌদি আরব একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করছে বলে দুটি সূত্রের বরাতে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এক সৌদি কর্মকর্তার বরাতে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রদিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি যুবরাজ খাসোগিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারটিতে অনুমোদন দিয়েছিলেন এবং এখন সৌদি যুবরাজকে রক্ষা করতে কোনো গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে ফাঁসানো হতে পারে।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়ে সাংবাদিকদের ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয়, এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সৌদি রাজপরিবার ওয়াকিবহাল নয়। তবে আমি তো তাদের মনের মধ্যে প্রবেশ করতে পারি না। কেই বা জানে, ভাড়াটে খুনিরা তাঁকে হত্যা করেছে কিনা?’

ট্রাম্পের সৌদি রাজপরিবারের পক্ষে এমন সাফাইসুলভ বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন ডেমোক্রেট সিনেটররা।

এদিকে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে তল্লাশি চালিয়েছে তুরস্কের পুলিশের একটি দল। সোমবার বিকেলে কনস্যুলেটে ঢ়ুকে মঙ্গলবার সকালে তারা তল্লাশি শেষ করেছে। তবে ওই তদন্তে কী পাওয়া গেছে তা নিয়ে তুর্কি সরকারের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য সাংবাদিক খাসোগি নিহতের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সরকার রিয়াদে অনুষ্ঠিতব্য একটি সম্মেলন বর্জন করার ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া গুগল ও জেপি মরগ্যানসহ বেশ কয়েকটি কোম্পানি সাংবাদিক খুনের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সৌদি আরবে হতে যাওয়া বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশ না নেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছে। ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দুটি কোম্পানি।

এদিকে সাংবাদিক খাসোগির ব্যবহৃত অ্যাপলের হাতঘড়িতে তাঁকে হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা রেকর্ড হয়ে থাকতে পারে বলে জানায় তুরস্কের একটি সংবাদপত্র।

খাসোগি নিখোঁজের ঘটনায় সৌদি আরব-তুরস্কের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ঘটনার পর থেকে তুরস্ক বলছে, ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। অন্যদিকে সৌদি কর্মকর্তারা বলে আসছেন, খাসোগি কনস্যুলেট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর নিখোঁজ হয়েছেন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিপরীতমুখী বক্তব্য দিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান ও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান।

সৌদি আরবের রাজপরিবারে ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে সৌদি সরকারের কড়া সমালোচনা করে আসছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। গত ২ আক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে ঢোকার সময়ও বাইরে তাঁর বাগদত্তা তুর্কি নারী হেটিজে জেঙ্গিস দাঁড়িয়ে ছিলেন। খাসোগি না ফিরলে সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি জানান ওই নারী।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/১১০৯ঘ.)