সাগরে বিধ্বস্ত বিমানের কোনো আরোহী বেঁচে নেই

সাগরে বিধ্বস্ত বিমানের কোনো আরোহী বেঁচে নেই

ঢাকা, ২৯ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : জাভা সাগরে বিধ্বস্ত ইন্দোনেশীয় বিমানের কোনো আরোহী বেঁচে নেই বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার।

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের মাত্র ১৩ মিনিট পর জাভা সাগরে ১৮৯ আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হয় দেশটির লায়ন এয়ারের ওই বিমান। সোমবার সকাল ৬টা ৩৩ মিনিটে জাভা সাগরে বিধ্বস্ত হয় বিমানটি।

ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থার এক মুখপাত্র বলেছেন, গভীর সাগরে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ায় যাত্রীদের জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে।

বিধ্বস্ত বিমানের পাইলট ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভব্য সুনেজার মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাস। ভব্য সুনেজার বাড়ি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে। তিনি স্ত্রীসহ জাকার্তায় বসবাস করছিলেন। মাত্র দুই বছর আগে বিয়ে করেছিলেন পাইলট ভব্য সুনেজা।

দেশটির ইংরেজি দৈনিক জাকার্তা পোস্ট বলছে, লায়ন এয়ার লাইন্সের বোয়িং ৭৩৭, জেটি ৬১০ জাকার্তা বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করে সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ২০ মিনিটে। ইন্দোনেশিয়ার ব্যাংকা দ্বীপের প্যাঙ্কাল পিন্যাংয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল বিমানটি। ফ্লাইটের ডাটা বলছে, হঠাৎই বিমানটি সাগরে আছড়ে পড়েছে।

লায়ন এয়ার লাইন্সের এক মুখপাত্র বলেছেন, চলতি বছরেই বিমানটি যাত্রী পরিবহন শুরু করেছে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত পাইলট ভব্য সুনেজার সঙ্গে কো-পাইলট ছিলেন হার্ভিনো। কর্তৃপক্ষ বলছে, বিমানটি বিধ্বস্তের আগে পাইলট জাকার্তা বিমানবন্দরে ফিরে আসার অনুমতি চেয়েছিল।

এক বিবৃতিতে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা কমিশন বলছে, বিমানের ১৮৯ আরোহীর মধ্যে দুই পাইলট ও ছয়জন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ছিলেন। এছাড়া বিমানটিতে দেশটির অর্থ বিভাগের ২০ কর্মকর্তাও ছিলেন। জাভা সাগরের কারাওয়াং এলাকার ৩০-৩০ মিটার গভীরে বিমান বিধ্বস্তের স্থানে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে।

ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বোর্ডের প্রধান সুতোপো নুগরোহো টুইটারে দেয়া এক বার্তায় বলেছেন, লায়ন এয়ারের বিধ্বস্ত জেটি ৬১০ বিমানের বেশ কিছু খণ্ডাংশ পাওয়া গেছে। উদ্ধারকারীরা বিমানের ধ্বংসাবশেষ, যাত্রীদের ব্যাগ, পোশাক, মোবাইল ফোন, আইডি কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্স উদ্ধারের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। এসব ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বিমানের আসনও দেখা গেছে।

দেশটির জাতীয় অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থার প্রধান মুহাম্মদ সায়াগি বলেছেন, আমরা জানি না যাত্রীদের কেউ বেঁচে আছেন কি-না। তবে আমরা আশা করছি, প্রার্থনা করছি; কিন্তু নিশ্চিত করতে পারছি না।

লায়ন এয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এডওয়ার্ড সিরাইত বলেছেন, রোববার রাতের ফ্লাইটে বিধ্বস্ত বিমানটিতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। তবে সেই ত্রুটি সমাধান করার পর নির্ধারিত সময়েই যাত্রা শুরু করে। এই দুর্ঘটনার আগে আবহাওয়াও চমৎকার ছিল, সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল।

জাকার্তা বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পরপর পাইলট বিমানটি ফিরে আনার অনুমতি চেয়েছিল; লায়ন এয়ার কর্তৃপক্ষ এই তথ্যের সত্যতা জানতে তদন্ত শুরু করেছে। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বলেছেন, আমি সবসময় প্রার্থনা করছি, যাতে শিগগিরই হতাহতদের খুঁজে পাওয়া যায়।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স ৮ বিমানটি একেবারে নতুন ব্র্যান্ডের। নতুন ব্র্যান্ডের একটি বিমানের বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় পুরো বিশ্বের নজর এখন ইন্দোনেশিয়ায়। নতুন ব্র্যান্ডের বড় ধরনের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাও এটি প্রথম।

সোমবার দুর্ঘটনার কবলে পড়া বিমানটির যাত্রা শুরু হয় গত ১৫ আগস্ট। দেশটির জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা কমিশনের প্রধান সোয়েরজান্ত জাহজ্যানো বলেছেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০০ ঘণ্টা উড়েছে বিমানটি।

(জাস্ট নিউজ/একে/২৩০৮ঘ.)