পরিবর্তনের ডাক কেউ রুখতে পারবে না : ওবামা

পরিবর্তনের ডাক কেউ রুখতে পারবে না : ওবামা

ঢাকা, ২৭ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : যুক্তরাষ্ট্রে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের দাবিতে রাজপথে নেমে এসেছেন হাজার হাজার জনতা। তাদের সমর্থন জানিয়ে টুইট করেছেন সাবেক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বলেন, তরুণদের এই দুর্দান্ত মিছিলে মিশেল ও আমি অনুপ্রাণিত। লেগে থাকো। তোমরাই আমাদের সামনে নিয়ে যাচ্ছো। পরিবর্তনের ডাক দেওয়া এই লাখো কণ্ঠকে রুখতে পারবে না কেউই।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে শনিবার মার্চ ফর আওয়ার লাইভস শীর্ষক এই পদযাত্রায় শিশু, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ক্ষুব্ধ শিক্ষকসহ অনেকে অংশ নেন। সকাল থেকেই ঘরে বানানো প্ল্যাকার্ড নিয়ে ইউনিয়ন রেলস্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে তারা। কোনো ব্যানারে এনআরএ’র সমালোচনা ছিল। তাদের দাবি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ওপর তাদের প্রভাব অনেক। কেউ কেউ কংগ্রেসের কাছে আবেদন জানায়, যেন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন আরো কঠোর করা হয়।

১৪ ফেব্রুয়ারি ফ্লোরিডার ফোর্ট লডারডেলের মারজোরি স্টোনম্যান ডগলাস হাইস্কুলে বন্দুক হামলা চালানো হয়। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে গোলাগুলির পর হামলাকারী হিসেবে আটক করা হয় স্কুলটির সাবেক ছাত্র নিকোলাস ক্রুজকে। এ ঘটনায় নতুন করে সামনে আসে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পুরনো বিতর্ক। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের ওপর সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণের প্রত্যাশা থাকলেও গান লবির দোসর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দিতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতে দেশটির নাগরিকদের ব্যক্তিগতভাবে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার বৈধতা দেওয়া হয়। তবে এখন অনেক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকই আগ্নেয়াস্ত্র রাখার বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।

মূলত তরুণরাই ওয়াশিংটনের এই পদযাত্রার আয়োজন করে। পার্কল্যান্ডসহ অন্যান্য শহরের শিক্ষার্থীরাও এতে অংশ নেন। তাদের বেশিরভাগই বন্দুক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত। অনেক তরুণ কর্মী তাদের সহপাঠীদের পদযাত্রায় অংশ নিয়ে জনমত তৈরির আহ্বান জানায়। এই পদযাত্রার পর সারাদেশেই এর প্রভাব পড়েছে। হাওয়াই থেকে আলাস্কা, টেক্সাস থেকে মেইন সবখানেই র‌্যালির জন্য নিবন্ধন করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা, বালটিমোর, বোস্টন, শিকাগো, লস অ্যাঞ্জেলেস, মিয়ামি, মিনেপোলিস, নিউইয়র্ক, স্যান ডিয়েগো ও সেন্ট লুইসেও এই মিছিল হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও লন্ডন, মরিশাস ও স্টকহোমেও এমন মিছিলে অংশ নিয়েছেন তরুণরা। সব মিলে বিশ্বজুড়ে ৮০০ এরও বেশি মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে একদিনে।

ধারাবাহিক বন্দুক হামলার যুক্তরাষ্ট্র ক’দিন আগে রক্তাক্ত হয়েছে ভালোবাসার দিনে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডের এক স্কুলে ঘণ্টাব্যাপী বন্দুক হামলায় ঝরে গেছে ১৭টি তরতাজা সবুজ প্রাণ। শিশুরাও শামিল হয়েছে মিছিলে। এদেরই একজন ১১ বছর বয়সী নাওমি ওয়াডলার। সাফ জানিয়েছে, বড়দের ‘খেলনা’ নয় সে। ৭ বছর পর ভোটার হবে জানিয়ে নাওমি হুঁশিয়ার করেছে, যেন এমনটা আর না হয়।

গড়ে প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুকের গুলি কেড়ে নেয় ৯৬ মানুষের প্রাণ। বছরের পর বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে চলমান হামলায় ক্ষোভ বাড়তে শুরু করে সমাজের অভ্যন্তরে। ফ্লোরিডার হামলার পর নতুন করে সামনে আসে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পুরনো বিতর্ক। গোলাগুলির পর হামলাকারী হিসেবে আটক করা হয় স্কুলটির সাবেক ছাত্র নিকোলাস ক্রুজকে। হামলার শিকার হওয়া এক শিক্ষার্থীর নামও নিকোলাস। মিছিল যোগ দেওয়া তার এক স্বজন আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘শুভ জন্মদিন নিকোলাস দুয়ার্তে। তুমি বেঁচে থাকলে আজ তোমার ১৮ বছর হতো।’

মিছিলে যোগ দেওয়া ড. মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের ৯ বছর বয়সী নাতনি ইয়োন্ডা রিনি কিং বলে, ‘আমার একটি স্বপ্ন আছে। তা হলো যথেষ্ট হয়েছে।’
আয়োজকরা বলেন, প্রতিদিন যুক্তরাষ্ট্রে গুলির আঘাতে প্রাণ হারান ৯৬ জন মানুষ। তারপরও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। হগল্যান্ড নামে এক অংশগ্রহণকারী বলেন, ‘আমরা এই বিষয়টি সব নির্বাচনেই তুলে ধরবো। সবাইকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সামনে আসতে হবে। ডেমোক্রেট বা রিপাবলিকান হিসেবে নয়। মানবাধিকার কর্মী এমা গনজালেজ ছয় মিনিট মঞ্চে ছিলেন। এ সময় হতাহতের নাম পড়ে শোনান তিনি। শোকস্তব্ধ এমার চোখ বেয়ে পড়ে তখন অশ্রুধারা। পার্কল্যান্ডে বেঁচে যাওয়া ডেলানি টার বলেন, ‘এটা শুধু মিছিল নয়। এটা একটা দিনের চেয়ে বেশি কিছু। এটা আমাদের আন্দোলন। আমাদের অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ দরকার। ভাঙা হাঁড়ে ব্যান্ড এইড লাগালে হবে না।’

তিনি বলেন, আমরা ছেড়ে দিতে পারি না। তাহলে এনআরএ’র মতো প্রতিষ্ঠান জিতে যায়। তারা চায় আমরা যেন ভুলে যাই। কিন্তু আমরা আজ ও আগামী দিনেও এই লড়াই চালিয়ে যাবো। আমরা এখানে থেকেই সব রাজনীতিবিদকে আহ্বান জানাই তারা যেন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন জোরদার করেন।’

আটলান্টার মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন নাগরিক অধিকার কর্মী জন লুইস। তিনি বলেন, ‘আমরা কথা বলার জন্য খুব তরুণও নই, আবার খুব বৃদ্ধ নই। আমরা সবসময়ই অস্ত্র সহিংসতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবো।’

তিনি বলেন, এই অস্ত্র সহিংসতার কারণেই আমরা ৫০ বছর আগে মার্টিন লুথার কিংয়ের মতো একজন নেতা হারিয়েছিলাম। আমরা আমাদের অনেক বন্ধুকে, স্বজনকে হারাচ্ছি। আমি ক্ষুব্ধ। এটা এখনই বন্ধ হওয়া উচিত।’

ভার্জিনিয়ার এলিমেন্টারি স্কুলশিক্ষক ক্যাথি গর্ডন অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন জোরদারের দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘এটা শুধু স্কুলের ব্যাপার নয়। দেশে অনেক গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। অরল্যান্ডো, লাস ভেগাস, চার্লসটোনে স্কুলে হামলা হয়নি। তাই শিক্ষকদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া যথেষ্ট নয়।

পার্কল্যান্ডের ঘটনায় পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়া সামান্থা ফুয়েন্তস এসেছেন মিছিলে। পড়ে শুনিয়েছেন স্বরচিত কবিতা, ‘আমি সে সময় কাঁদছিলাম, রক্তও ঝরছিল।’ কিছুক্ষণ পর এমা গনজালেজ সামনে এসে হতাহতদের নাম ঘোষণা করেন। তখন ছিল পিনপতন নীরবতা। শুধু ক্যামেরার শাটারের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছিল।

এ রপর শিক্ষার্থীদের সোচ্চার কণ্ঠে অস্ত্রবাজির বিরুদ্ধে সম্মিলিত দাবি ধ্বনিত হয়: ‘আর না, আর না।’ পার্কল্যান্ড গোলাগুলি স্থায়ী ছিল ৬ মিনিট ২০ সেকেন্ড। মিছিলে ওই ৬ মিনিট ২০ সেকেন্ডের নীরবতা পালন করেন সবাই। প্রতিবাদী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা তখন উঁচু করে তুলে ধরে হাতে থাকা ব্যানার। যেখানে লেখা রয়েছে ‘এটাই গণতন্ত্র’।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২১৫৯ঘ.)