এরদোগানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণের নির্বাচন আজ

এরদোগানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণের নির্বাচন আজ

ঢাকা, ২৪ জুন (জাস্ট নিউজ) : তুরস্কে পার্লামেন্ট ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ। এক বছর আগেই দেশটিতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সবাই বলছেন, তুরস্কের এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। এরদোগানের জন্য এই নির্বাচন একটা লিটমাস টেস্ট। এর মধ্যদিয়েই নির্ধারিত হবে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ।

রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় শুরু হবে ভোটগ্রহণ। আর এ ভোটগ্রহণ একটানা বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে। ভোটাররা আইডি কার্ড বা যে কোনও শনাক্তকরণ নথি দেখিয়ে ভোট দিতে পারবেন।

দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানসহ ৬ প্রার্থী লড়াই করছেন। নির্বাচনে প্রায় ৫ কোটি ৬৩ লাখ ২২ হাজার ৬৩২ ভোটার তাদের রায় প্রদান করবেন।

৬ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হচ্ছেন- রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান, মুহাররেম ইনজে, ইয়ি বা গুড পার্টির মেরাল আকসেনার, কুর্দিদের সমর্থিত এইচডিপি’র সালাদিন দেমিরতাজ, ভাতান পার্টির ডোগু পেরিনজেক এবং সাদাত পার্টির তেমেল কারামুল্লাউলু।

ভোটগ্রহণের খবর সংগ্রহের জন্য ইতোমধ্যে ৩৪টি দেশের ৬০০-এর বেশি সাংবাদিক দেশটিতে অবস্থান করছেন।

নির্বাচনে মোট ৮টি রাজনৈতিক দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ৬ জন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এবং সিএইচপির প্রার্থী মুহাররেম ইনজে’র মধ্যে।

পার্লামেন্ট নির্বাচনে জোটগতভাবে অংশ নিচ্ছে বড় দুই দল। এরদোগানের একেপি’র নেতৃত্বাধীন জোটে রয়েছে একে পার্টি, জাতীয়তাবাদী দল এমএইচপি।

কামাল আতাতুর্কের দল সিএইচপি’র জোটে রয়েছে সিএইচপি, ইয়ি পার্টি, ইসলামপন্থী দল সাদাত পার্টি এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টি।

জনমত জরিপে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরদোগানের এগিয়ে থাকার আভাস মিলেছে। তবে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে পারে তার দল ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টি (একেপি)।

২০১৯ সালে দেশটিতে এ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর এক বছর আগেই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। এই নির্বাচনের মধ্যদিয়ে পুনর্বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে নিজের ক্ষমতা আরো সংহত করার চেষ্টা করছেন তিনি।

গত ১৫ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় রয়েছে তার দল একে পার্টি। ২০১৬ সালের এক ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর নিজের ক্ষমতা সংহত করার পদক্ষেপ নেন তিনি। তখন থেকে জরুরি অবস্থায় রয়েছে তুরস্ক।

মূলত ২০১৬ সালের ক্যু-এর পর তুরস্কের শাসন নীতি বদলে যেতে থাকে। পুরাতন ধারা থেকে নতুন ধারার দিকে তুরস্ক ধাবমান হয়। নতুন যুগের নতুন তুরস্কের প্রকৃত সংস্কারক হিসেবে এরদোগান আবির্ভূত হন। পার্লামেন্টারি থেকে প্রেসিডেন্সিয়াল সিস্টেমে প্রবর্তিত হয়।

এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, দ্বিতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছেন এরদোগান। তবে এবার সময় একটু অন্যরকম। ভোটের পর ২০১৭ সালের গণভোট মাধ্যমে অনুমোদিত প্রেসিডেন্টের জন্য বেশ কিছু নতুন ক্ষমতা বলবৎ হবে। এ নির্বাচনে এরদোগানের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। পুনর্বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে যে ক্ষমতা পাবেন এরদোগান-

১. মন্ত্রী ও ভাইস প্রেসিডেন্টসহ সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরাসরি নিয়োগ দেয়ার ক্ষমতা।
২. দেশের আইনি ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা।
৩. জরুরি অবস্থা ঘোষণার ক্ষমতা।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর পদ বিলুপ্ত করতে পারবেন তিনি।

নির্বাচনে ছয়জন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রয়েছেন। কেউ যদি ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পান, তিনিই প্রেসিডেন্ট হবেন। তবে কেউই যদি ৫০ শতাংশ ভোট নিশ্চিত করতে না পারেন, ৮ জুলাই দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

এবারের তুরস্কের নির্বাচন মূলত দুটি জোটে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একটি পিপলস অ্যালায়েন্স। এখানে আছে এরদোগানের একে পার্টি, ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টি ও গ্রেট ইউনিটি পার্টি। অপরটি ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স। এছাড়া চারটি দল আছে- শক্তিশালী রিপাবলিকান পিপলস পার্টি, ফ্যালিসিটি পার্টি, আই পার্টি ও ডেমোক্রেটিক পার্টি। নির্বাচনে একটি বড় সুবিধা হল, এরদোগান পিপলস অ্যালায়েন্সের একক প্রার্থী। অন্যরা নিজ নিজ পার্টি থেকে দাঁড়িয়েছেন।

রিপাবলিকান পিপলস পার্টির প্রার্থী মুহাররেম ইন্সে এরদোগানের জন্য হুমকি হতে পারেন।

এই মুহূর্তে এরদোগানের পক্ষে-বিপক্ষে ৫৫-৪৫ শতাংশ। গত নির্বাচনেও তিনি সামান্য ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন। তাই সঙ্গত কারণেই এই নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে বোঝা যাবে, এরদোগান ও তার আন্তর্জাতিক পলিসি থাকবে, না নুতনভাবে অন্য কিছু হবে। অনেক জেনারেল, পুলিশ অফিসার, সিভিল সার্ভিসের লোকজন ও সাধারণ সরকারি কর্মচারী দেশ ছেড়েছেন। তাদের শক্তি কতটুকু তাও পরিস্ফুট হবে এই নির্বাচনে, মানুষ ইসলাম না সেকুলারিজম চায় তাও নির্ধারিত হবে এবার।
দেশের মানুষ কি সত্যিই পরিবর্তন চায়, তার ভোট হবে এবার। এরদোগান ও তার দল আবার নির্বাচিত হলে তুরস্কে নতুন সিস্টেম পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে। দেশে ইসলামিকায়ন অভিযান জোরদার হবে। এরদোগান চান, তার রাজনৈতিক কর্মসূচি সঠিক কিনা, তা জনগণ চূড়ান্তভাবে নিরূপণ করুক। অবশ্য জনগণ এপ্রিল ২০১৭ সালে রেফারেন্ডামের মাধ্যমে তার প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন।

এরদোগান ভিশন ২০২৩-এর রূপরেখা দিয়েছেন। তিনি বিশ্বের সেরা ১০টি আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ দেশের মধ্যে স্থান করার ঘোষণা দিয়েছেন। এই প্রস্তাবে যোগাযোগ, কৃষি, জ্বালানি ও স্বাস্থ্য খাতে ইতিমধ্যে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। আর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে প্রতিশ্রুত উন্নয়ন কর্মসূচি শেষ করতে চান। বিরোধী দল এরূপ বিস্তারিত কোনো উন্নয়ন কর্মসূচি দিতে পারেনি।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০০০ঘ.)