থাইল্যান্ডের গুহায় শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান, ৬ কিশোর ফুটবলার উদ্ধার

থাইল্যান্ডের গুহায় শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান, ৬ কিশোর ফুটবলার উদ্ধার

ঢাকা, ৮ জুলাই (জাস্ট নিউজ) :  থাইল্যান্ডের গুহায় আটকে পড়া কিশোর ফুটবল দলের অন্তত ৬ জন সদস্যকে উদ্ধার করে বাইরে আনা হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। পানিতে ডুবে যাওয়া গুহার সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে এক অভূতপূর্ব অভিযানের মাধ্যমে ১২ জন কিশোর ফুটবলার এবং তাদের কোচকে উদ্ধারে অভিযান শুরু হয় রবিবার সকালে।

থাইল্যান্ডের স্থানীয় গণমাধ্যম জানাচ্ছে, যে ৬ জনকে এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে, তাদেরকে এখন ডাক্তাররা পরীক্ষা করছেন। পানিতে ডুবে যাওয়া সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে এদের বাইরে আনার জন্য ডুবুরিরা নানা ধরণের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছেন। প্রতিটি ছেলের সঙ্গে দুজন করে ডুবুরি থাকছে।

এই উদ্ধার অভিযানে আরো সময় লাগতে পারে। গত দু সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ১২ জন কিশোর ফুটবলার এবং তাদের কোচ সেখানে আটকে পড়েছিল। একটি আন্তর্জাতিক উদ্ধারকারী দল এই আটকে পড়া ছেলেদের উদ্ধারে নিয়োজিত রয়েছে। এতে থাই নৌবাহিনীর সীল সদস্য এবং বিদেশি ডুবুরিরা আছে।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, স্থানীয় কর্মকর্তার ৬ কিশোরকে নিরাপদে উদ্ধার করে আনার কথা জানিয়েছেন। অন্যদের উদ্ধারের তৎপরতা চলছে। শীঘ্রই সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানাবেন কর্মকর্তার। সামাজিকে যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, দুটি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি হেলিকপ্টার ওই স্থান থেকে চলে গেছে নিকটস্থ শহরের দিকে। রয়টার্স জানিয়েছে, প্রথম বাচ্চাটিকে নিকটস্থ চাইয়াং রাই শহরের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে হেলিকপ্টারে করে। বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় হাসপাতালটি ওই স্থান থেকে সড়ক পথে একঘণ্টার দূরত্বে। কিশোরদের পরিবারগুলো সেখানে অপেক্ষা করছে প্রিয় সন্তানদের জন্য।

বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রথম দুই কিশোরকে বের করে আনা হয়। মোট আঠারো জন ডাইভার এই উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছেন। দলের সাথে থাকা অস্ট্রেলীয় চিকিৎসকের পরামর্শে দুর্বল হয়ে পড়া কিশোরদের আগে বের করা হচ্ছে।

থাই সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আরো ৪ কিশোর অল্প সময়ের ব্যবধানে হেঁটে বাইরে আসবে। তারা সফলভাবে ডাইভারদের বেস ক্যাম্পে এসে পৌঁছেছে। লেফট্যানেন্ট জেনারেল কংচিপ তানত্রাওয়ানিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডাইভারদের তিন নম্বর চেম্বারে এসে পৌঁছেছে চার কিশোর, তারা অল্প সময়ের মধ্যে হেঁটে বাইরে আসবে’। এই চেম্বারটি গুহামুখ থেকে দুই কিলোমিটার ভেতরে।

উদ্ধারকারী দলের প্রধান নারংসাক ওজতনাকন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজকের দিনটি ডি-ডে। কিশোরেরা যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত।’

উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা বলছেন, তারা একে একে কিশোর ফুটবলারদের বের করে আনার চেষ্টা করে যাবেন।

গুহার ভেতরের কর্দমাক্ত মাটি ও পানিকে এক ডুবুরি ক্যাফে লাতের সঙ্গে তুলনা করেছে। অন্ধকারের মধ্য দিয়ে আসার সময় কিশোরদের সুবিধার্থে দড়ি বাধা হয়েছে। দুজন ডুবুরি একজন কিশোরকে বের করে আনবেন।

অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে গুহার প্রবেশমুখের কাছের এলাকা পরিষ্কার করা হয়েছে। সরিয়ে নেওয়া হয় উদ্ধারকারী দলের বাইরের সব লোকজন। এখন সেই এলাকায় কেবল ডুবুরি দল, চিকিৎসক ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীরা রয়েছেন।

কর্তৃপক্ষ আগে জানিয়েছিল, শত শত সাংবাদিক সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু উদ্ধার অভিযানের জন্য তাদের সরানোটা প্রয়োজন ছিল।

অন্য আরেকজন অপারেশন কমান্ডার বলেন, একজন একজন করে সবাইকে বের করার মধ্য দিয়ে এই অভিযান শেষ করতে দু-তিন দিন লাগতে পারে। আর এ সময়টা নির্ভর করবে আবহাওয়া পরিস্থিতির ওপর।

প্রথমে ডুবসাঁতারের মাধ্যমে তাদের বের করে আনার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগ কিশোর সাঁতার জানে না। ডুবসাঁতারের মাধ্যমে কীভাবে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার কাদাযুক্ত ও অনেক স্থানের সংকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে তারা বাইরে আসবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে সামান কুনান নামের এক ডুবুরি আটকে পড়া ব্যক্তিদের অক্সিজেন সরঞ্জাম দিয়ে ফেরার পথে মারা যান। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসও দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে গত শুক্রবার উদ্ধার পরিকল্পনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসে। কিশোরদের কাছে পৌঁছাতে গুহার পাহাড়ের পেছনের দিকে অনেকগুলো জায়গায় খনন শুরু হয়। গতকাল পর্যন্ত ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক গর্ত খনন করা হচ্ছে। তবে রাতেই আবারো বৃষ্টি হয় এবং আরো বৈরী আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়। তাই কর্তৃপক্ষ যা করার আজই করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।

নারংসাক বলেন, ‘অন্য এমন কোনো দিন আসবে না, যেদিন আমরা আজকের চেয়ে বেশি প্রস্তুত থাকব। আজ না হলে হয়তো আমরা সব সুযোগই হারাব।’

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২০০৯ঘ.)