ম্যাককেইনের বিদায়: শোক, শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র

ম্যাককেইনের বিদায়: শোক, শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র

ওয়াশিংটন, ২৭ আগস্ট (জাস্ট নিউজ): জন ম্যাককেইনের বিদায়ে বেদনাবিধুর পুরো যুক্তরাষ্ট্র। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও সেসব ভুলে গিয়ে দেশটির প্রভাবশালী সিনেটর ও সাবেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী আর সাহসী এক যােদ্ধাকে শোক, সমবেদনা এবং শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে গোটা দেশ। ডেমোক্রেট বা রিপাবলিকান নয়, বর্তমান এবং প্রাক্তন সব নেতারাই ম্যাককেইনের স্মৃতিচারণ করছেন শ্রদ্ধা বিগলিত হয়ে ।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় বরেণ্য এ নেতার বিদায়ে শোক প্রকাশ করেছেন যুক্তরাজ্য, জার্মান, ফ্রান্সের রাষ্ট্রনায়কবৃন্দ।

বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একজন কড়াসমালোচক ছিলেন ম্যাককেইন। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য। তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত ট্রাম্প এক টুইট বার্তায় লিখেছেন, সিনেটর জন ম্যাককেইনের পরিবারের প্রতি রইলো আমার গভীর শ্রদ্ধা আর সহানুভূতি। আমাদের হৃদ্যতা আর প্রার্থনা রইলো আপনাদের জন্য।

বর্তমান প্রেসিডেন্টের মতোই ম্যাককেইনের মৃত্যুতে শোক এবং সমবেদনা জানিয়েছেন দেশটির জীবিত পাঁচ প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বুশ, বিল ক্লিনটন, জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং জিমি কার্টার।

২৫ আগস্ট বিকাল ৪টা ২৮ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেনজন ম্যাককেইন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮১।

৬০ বছর ধরে যু্ক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন ম্যাককেইন। আরিজোয়ানা থেকে ছয়বারের নির্বাচিত সিনেটর ছিলেন তিনি। তাঁকে দেশটির সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের অন্যতম বিবেচনা করা হয়।

শোক প্রকাশ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, জন ম্যাককেইন যে পথে হেঁটেছেন এবং সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন সে পথে খুব কম লোকই হাঁটতে পারে। সবাই সে সাহসের মহত্তকে নিজেদের মধ্যে ধারণ করার প্রত্যাশা আমরা করতে পারি।

বুশ বলেন, কিছু জীবন আছে যা খুবি প্রেরণার। এ রকমের জীবেনর অবসান ঘটেছে এটা মেনে নেয়া কঠিন। কিছু কন্ঠ আছে সাহসী, সেটা চুপ হয়ে যাবে সেটা ভাবা যায় না। জন ম্যাককেইন ছিলেন গভীর পরিধির একজন, সেই সঙ্গে উঁচু মাপের দেশপ্রেমিক।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ম্যাককেইন ছিলেন মহান রাষ্ট্র নেতা, নিজের চাইতে সেবা ধারণাকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁকে যুক্তরাজ্যের বন্ধু হিসেবে ভাবাটা সম্মানের।

সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো-বাইডেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাককেইনের প্রভাব ফুরিয়ে যাবার মতো কোনো বিষয় নয়।

ম্যাককেইনকে বন্ধু আখ্যা দিয়ে এবং দুইজনের একটি ছবি শেয়ার করে ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সারাহ পলিন বলনে, পৃথিবী সত্যিকারের একজন আমেরিকানকে হারালো।

গত একবছর ধরে মস্তিষ্কের ক্যান্সারে ভুগছিলেন ভিয়েতনাম যুদ্ধের বীর সৈনিক ও বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ। চিকিৎসাও চলছিলো তাঁর।

ম্যাককেইনের পরিবার জানিয়েছে, শুক্রবার নিজের চিকিৎসা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন ম্যাককেইন। তাঁর কন্যা ম্যাগান বলেন, বাবাই তার বাকি জীবনে প্রত্যাশা আর ভালোবাসার উদাহরণ হয়ে থাকবেন।

ওয়াশিংটন ন্যাশনাল ক্যাথেড্রালে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে আরিজোয়ানা প্রদেশের পোনিক্স শহরে ম্যাককেইনকে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার।

ম্যাককেইনের বাবা এবং দাদা দুজনেই ছিলের নেভী অ্যাডমিরাল। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে লড়েছেন একজন পাইলট যোদ্ধা হিসেবে। তাঁর বিমনাটিকে যখন গুলিতে ভূপাতিত করার পর পাঁচ বছর কারাগারে যুদ্ধ বন্ধির জীবন অতিবাহিত করেছেন। বন্দি থাকা অবস্থায় তাঁকে চরম নির্যাতিত হতে হয়েছে।

সর্বপ্রথম ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থীতার লড়াইয়ে মাঠে নামেন ম্যাককেইন। তার জনপ্রিয়তা আরো বেশি গতি পায় ২০০৮ সালে, এ বছর তিনি রিপাবলিকানের মনোনয়ন পান।

 

(জাস্ট নিউজ/জিএস/০/০১২ঘ.)