রোহিঙ্গা সংকট: চাপে পড়ে অপপ্রচারে মিয়ানমার

রোহিঙ্গা সংকট: চাপে পড়ে অপপ্রচারে মিয়ানমার

ঢাকা, ৩ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : জাতিসংঘের সর্বশেষ প্রতিবেদন প্রকাশের পর রোহিঙ্গা নিপীড়ন নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে নতুন করে চাপে পড়েছে মিয়ানমার। এই চাপ কাটাতে অপপ্রচারের পুরোনো কৌশল নিয়ে দেশটি মাঠে নেমেছে।

ইয়াঙ্গুন থেকে শনিবার কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিন অর্থাৎ গত ২৮ আগস্ট মিয়ানমার সরকার মানবাধিকারকর্মী পরিচয়ে ৪ জন রোহিঙ্গাকে জেনেভায় পাঠিয়েছে। জেনেভায় গিয়ে রোহিঙ্গারা কী বলবেন, এ নিয়ে এর কয়েক দিন আগে তাদের নেপিডোতে নিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

জানা গেছে, ওই চার রোহিঙ্গার দুজন স্থানীয় পর্যায়ে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অন্য দুজনের একজন চিকিৎসক ও অন্যজন ব্যবসায়ী। জেনেভায় গিয়ে ওই চার রোহিঙ্গা মিয়ানমারের সরকারের পক্ষে সাফাই গাইবেন। রাখাইনে সন্ত্রাসীদের ভয়ে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে গেছে, এমন বিবৃতি দেবেন।

ওই চারজনের একজন মিয়ানমারের সাবেক প্রেসিডেন্ট থেন সেইনের শাসনামলে রাখাইন রাজ্যের সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। এলাকায় তার পরিচিতি থাকলেও মুসলমানদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা কিছুটা কম। অন্যজন স্থানীয় কাউন্সিলর হলেও সরকারি এজেন্ট হিসেবে তার বদনাম রয়েছে।

জানা গেছে, মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশ থেকে প্রথম দফায় যে ৫০০ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছে, ওই চার রোহিঙ্গার আত্মীয়স্বজন তাদের মধ্যে রয়েছে। কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়টি হলো, বাংলাদেশ তালিকা দেওয়ার আগেই শুরুতে শ-পাঁচেক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফিরিয়ে নিতে চেয়েছে।

এদিকে চার রোহিঙ্গাকে জেনেভায় পাঠানোর পাশাপাশি অপপ্রচারের অংশ হিসেবে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক এক বইতে বাংলাদেশ নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার করা হয়েছে। গত জুলাইতে মিয়ানমার পলিটিকস অ্যান্ড দ্য টাটমাডো: পার্ট ওয়ান শিরোনামে ১১৭ পৃষ্ঠার বইটি প্রকাশ করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জনসংযোগ ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ বিভাগ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, মিয়ানমারের বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনের বড় বইয়ের দোকানগুলোয় বইটি বিক্রি হচ্ছে। এতে প্রকাশিত বেশ কিছু ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সেগুলো বাংলাদেশ ও তানজানিয়ার। অথচ মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেগুলোকে রোহিঙ্গাদের ছবি হিসেবে উপস্থাপন করেছে।

মিয়ানমারের বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করা বাংলাদেশের কূটনীতিক আর দেশটির নির্বাসিত ভিন্ন মতাবলম্বীরা এ প্রতিবেদককে বলেছেন, দেশটির অপপ্রচারের এ কৌশলটি নতুন নয়। এটি তাদের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডের নতুন মাত্রা। এর সঙ্গে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতৃত্ব অং সান সু চিও জড়িত।

তাদের দাবি, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ট্রু নিউজ আর মিয়াওয়াদির মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে এ ধরনের অপপ্রচার চালায়। ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ঢল শুরুর পর সে দেশের সেনাবাহিনীর মুখপত্রগুলো প্রচার করেছিল রোহিঙ্গারা হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে আগুন দিয়েছে। পরে ওই সব খবর যে মিথ্যা, তা বিবিসি প্রমাণ দিয়ে দেখিয়েছিল।

মিয়ানমারের রাজনৈতিক নেতৃত্বের অপপ্রচারের কৌশলে যুক্ততার বিষয়ে সূত্রগুলো বলছে, মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তর এ কাজটি করে থাকে। এর নেতৃত্বে থাকেন মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র। অপপ্রচারের বেসামরিক প্রক্রিয়ায় নেপথ্যে যুক্ত স্টেট কাউন্সেলরের দপ্তরে মন্ত্রী টিন্ট সোয়ে, সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থং তুন ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী উইন মিয়াত আয়ে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সি আর আবরার এ প্রতিবেদককে বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন নিঃসন্দেহে মিয়ানমারের জন্য বড় ধরনের আঘাত। তবে অপপ্রচারের চেষ্টা মিয়ানমারের জন্য হিতে বিপরীত হবে। তার মতে, মিথ্যা দিয়ে নির্মম সত্যকে আড়াল করা যায় না। কাজেই মিয়ানমারের এসব অপপ্রয়াস শেষ পর্যন্ত কোনো কাজে আসবে না। -প্রথম আলো।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২১৩২ঘ.)