ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পালিত হচ্ছে পবিত্র লাইলাতুল কদর

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পালিত হচ্ছে পবিত্র লাইলাতুল কদর

ঢাকা, ১২ জুন (জাস্ট নিউজ) : সারাদেশে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পবিত্র লাইলাতুল কদরের রজনী পালিত হচ্চ্ছে। পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।

মঙ্গলবার মাগরিবের পর থেকেই শুরু হয়েছে শবে কদরের আনুষ্ঠানিকতা। চলবে সারারাত। ফজরের নামাজের পর মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই আনুষ্ঠানিকতা।

যেসব মসজিদে খতমে তারাবি হচ্ছে সেখানে আজ খতম হবে। খতমে কোরআনকে কেন্দ্র করে মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন মসজিদে ওয়াজ মাহফিলও অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

‘হাজার মাসের চেয়েও উত্তম’ পবিত্র লাইলাতুল কদর সমগ্র মানবজাতির জন্য অত্যন্ত বরকত ও পুণ্যময় রজনী। পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ আল কোরআন লাইলাতুল কদরে নাজিল হয়। তাই মুসলিম উম্মাহর কাছে শবে কদরের গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত অত্যধিক।

পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পৃথক বাণী দিয়েছেন।

এদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আজ বাদ জোহর বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ‘পবিত্র লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শিরোনামে ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে ওয়াজ করেন রাজধানীর মিরপুরের বায়তুল মামুর জামে মসজিদের খতিব ড. মাওলানা আবদুল মুকিত আল আজহারী।

এছাড়া আজ দিবাগত রাতে তারাবির নামাজের পর রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে ‘পবিত্র লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও করণীয়’ শিরোনামে ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ড. মাওলানা কাফিলুদ্দীন সরকার সালেহী ও বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ মিজানুর রহমান পবিত্র লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও করণীয় বিষয় নিয়ে বক্তব্য দেন।

শবে কদরের তাৎপর্য
রমজানের শেষ দশকের যেকোনো বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর হতে পারে। তবে হাদিস শরিফের বর্ণনা অনুযায়ী ২৬ রমজান দিবাগত রাতটি পবিত্র লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। মহিমান্বিত এ রাতের ফজিলতের সঙ্গে অন্য কোনো রাতের তুলনা হয় না। লাইলাতুল কদর বা শবে কদর অর্থ সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ রাত। বছরের যে কটি দিন ও রাত বিশেষভাবে মহিমান্বিত, তার মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম ও ফজিলতপূর্ণ এই শবে কদর। পবিত্র রমজানের এ রাতে লাওহে মাহফুজ থেকে নিম্ন আকাশে মহাগ্রন্থ আল কোরআন অবতীর্ণ হয়। কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে রমজান যেমন বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত, তেমনি কোরআন নাজিলের কারণেই শবে কদর অতি ফজিলত ও তাৎপর্য বহন করে। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তুমি জান লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (জিবরাইল) তাদের রবের অনুমতিক্রমে সব সিদ্ধান্ত নিয়ে অবতরণ করেন।’

অসংখ্য হাদিসে শবে কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। প্রিয়নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লায়লাতুল কদরে ঈমানের সঙ্গে সওয়াব লাভের আশায় ইবাদত করে তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) পুরো রমজান, বিশেষত রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদরের অন্বেষায় ব্যাকুল হয়ে ওঠতেন। পরিবার-পরিজন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও লাইলাতুল কদর তালাশ করতে বলতেন।

লাইলাতুল কদর উম্মতে মোহাম্মদির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আর কোনো নবীর উম্মতকে এ ধরনের ফজিলতপূর্ণ রাত বা দিন দান করা হয়নি। আগের যুগের উম্মতেরা অনেক আয়ু পেতেন। সে জন্য তারা অনেকদিন ইবাদত করারও সুযোগ পেতেন। সে তুলনায় উম্মতে মোহাম্মদীর আয়ু নিতান্তই কম। এজন্য আল্লাহতায়ালা তার বিশেষ দয়ায় মহানবীর (সা.) উম্মতকে মহিমান্বিত এ রাত দান করেছেন। যারা এ রাতে ইবাদত করে কাটাবেন তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। এ রাতে নির্দিষ্ট কোনো ইবাদত নেই। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল, দান-সদকা সবই এ রাতে করা যায়। আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে যেকোনো ইবাদত করলে অভাবনীয় প্রতিদান পাওয়া যাবে।

(জাস্ট নিউজ/একে/২৩৪২ঘ.)