লন্ডনে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ব্যাপক বিক্ষোভ

গুম-হত্যা করে শেষ রক্ষা হবে না

গুম-হত্যা করে শেষ রক্ষা হবে না

লন্ডন থেকে বিশেষ প্রতিনিধি, ৪ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : বিশিষ্ট লেখক, কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহারকে অজ্ঞাত বাহিনী কর্তৃক উঠিয়ে নেয়া এবং উদ্ধারের নামে নাটক সাজানোর হীন চেষ্টার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছে বিশ্ববিবেক।

সোমবার লন্ডনের ঐতিহাসিক আলতাব আলী পার্কে অনুষ্ঠিত তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ একটি বৃহৎ বিক্ষোভ সমাবেশে রুপ নেয়। লেখক, সাংবাদিক, রাজনীতিক, আইনজীবী ও সর্বস্তরের ছাত্র জনতার উপস্থিতিতে বাংলাদেশের অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও ঘৃনা প্রকাশ করা হয়। এতে পেশাজীবী নেতারা বলেন, ফরহাদ মাজহারকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে আবার উদ্ধারের নামে নাটক সাজিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এ ঘটনায় সরকারকে চরম মূল্য দিতে হবে বলে হুশিয়ারি দিয়ে অবিলম্বে ফরহাদ মাজহারকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া এবং সকল ধরণের গুম-হত্যা-নির্যাতন বন্ধের আহবান জানান তারা।

পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ছাত্রনেতা নসরুল্লাহ খান জুনায়েদের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তারিক বিন আজিজের পরিচালনায় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালিক।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাস্টনিউজ সম্পাদক ও জাতিসংঘের স্থায়ী সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী, দৈনিক আমার দেশ-এর সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ ইউকে'র যুগ্ম-আহ্বায়ক সাংবাদিক আখতার মাহমুদ, ব্যারিস্টার তমিজ উদ্দীন, ব্যারিস্টার আশরাফুল আলম চৌধুরী, ইনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন (ইউসিএল)-এর শিক্ষক ড. খন্দকার রুহুল আমিন, সাংবাদিক এম মাহাবুবুর রহমান, নারী নেত্রী ফেরদৌস রহমান, এশিয়ান বাংলা‘র নির্বাহী সম্পাদক মাহবুবা জেবিন, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের নেতা সাংবাদিক এম এ কাইয়ুম, সাবেক ছাত্রনেতা ব্যারিস্টার গোলাম জাকারিয়া, বিএনপি নেতা শরীফুজ্জামান তপন চৌধুরী, নাসিম আহমেদ চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম মামুন, এমদাদ হোসেন টিপু, নাসির আহমেদ শাহীন, আবুল হোসেন, মাওলানা শামীম আহমেদ প্রমুখ।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী নেতা ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান, আতিকুর রহমান পাপ্পু, তাজউদ্দীন, সাবেক ছাত্রনেতা পারভেজমল্লিক, নাজমুল হাসান জাহিদ, জাহাঙ্গীর আলমশিমু, মাহাবুবুর রহমান, মো. আতিকুর রহমান, সোহেল আহমেদ, নারী নেত্রী অঞ্জনা আলম, সাংবাদিক আবদুর রকীব, লেখক মো. সাইফউল্লাহ, মানবাধিকার কর্মী ফরিদুল ইসলাম, লেখক মো. আবু তালেব, যুবনেতা মো. শাহজাহান, মো. খালেদমিয়া, মো. আবুল ালাম আজাদ প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, সোমবার সকালে অপহরণের পর রাত ১০টার পরে যশোহরে হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের নাটক করে র‌্যাব। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, এরপর তাকে যশোরের অভয় নগর থানায় আটক রাখা হয়। এর আগে গত রবিবার আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতে হিন্দু জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কথা বলেন। ভারতে গরুর মাংস বহন বা খাওয়ার অপরাধে মুসলমান হত্যার ঘটনায় ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির কড়া সমালোচনা করে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে ফরহাদ মজহারও অংশ নেন। ধারণা করা হচ্ছে, সংবাদ সম্মেলনের অন্যতম আয়োজক ছিলেন ফরহাদ মজহার। এছাড়া গোড়া থেকেই ফরহাদ মজহার বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের একজন কড়া সমালোচক।

লন্ডনে সোমবার বিকেলে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সমাবেশে বক্তারা অপহরণের ঘটনাকে জনগণের মৌলিক বাক স্বাধীনতা, বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌত্বের ওপর হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন।

সমাবেশে বিএনপির সভাপতি এম এ মালিক বলেন, ভারতের হিন্দ ুজঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের ২৪ ঘন্টা পারনা হতেই বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহারকে অপহরণ নাটক করা হলো। মূলতঃ তাকে অপহরণের পর সোসাল মিডিয়ায় জনগণের চাপএবং বিশ্ব মানবাধিকার কর্মীদের তোপের মুখে তাকে উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়েছে। এটা স্পষ্টতই বাংলাদেশকে সার্বভৌমত্বহীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণের ইঙ্গিত বলে তিনি অভিযোগ করেন।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার তারিক বিন আজিজ সূচনা বক্তব্যে বলেন, যদি সংবাদ সম্মেলনের জেরে এমন ঘটনা ঘটে, এটা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে বিলীন করার ষড়যন্ত্র বলেই আমরা মনেকরি। এমন ঘটনায় ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করে জনগণের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে।

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য আজ্ঞাবাহী এই সরকার গুম-খুনের যে সংস্কৃতি চালু করেছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। বিরোধী রাজনীতিক, সাংবাদিক, আইনজীবী, শ্রমিক নেতা এমনকি বুদ্ধিজীবীদেরকেও এরা বেছে বেছে গুম করছে। একজন জ্যেষ্ঠ নাগরিক ও বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের ঘটনায় বাংলাদেশের সরকারি আজ্ঞাবহ মিডিয়া দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ যারা নিজেদের নিরাপদ ভাবছে এবং দেখেও না দেখার ভাব করছে। তাদেরও শেষ রক্ষা হবেনা। আধিপত্যবাদীরা স্বার্থের প্রয়োজনে তাদেরকেও ছোবল দিতে পিছ পা হবেনা।

বাংলাদেশের সরকার সমর্থক মিডিয়াগুলো বিবেক বন্ধক দিলেও আন্তর্জাতিক মিডিয়া মজলুমদের পাশে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। বিশ্ব গণমাধ্যমের পাশাপাশি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীদের জোরালো ও শাহসী ভুমিকার কারনে আমরা ফরহাদ মজহারকে জীবিত ফেরত পেয়েছি।

সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমান বলেন, আমরা উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে বসে আপনি ভারতের বিরুদ্ধে কথা বললেই গুম-অপহরণের শিকার হবেন। টিপাই মুখের বিরুদ্ধে কথা বলে ইলিয়াস আলী গুম হয়েছে। মাহমুদুর রহমান দীর্ঘ কারাবাস করেছেন। এবার ভারতে হিন্দু জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কথা বলায় ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হলো।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আখতার মাহমুদ বলেন, একটি সুপরিকল্পিত সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা ছাড়া চলমান অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করা সম্ভব হবে না। এজন্য গণমুক্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশের সকল দেশপ্রেমিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই গড়ে তুলতে হবে।

শেষে সভাপতির বক্তব্যে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের যুগ্ম -আহ্বায়ক নসরুল্লাহ খান জুনায়েদ বলেন, ভারতের বিরুদ্ধে কথা বললে অপহরণ হতে হবে, এটা আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্রকে প্রশবিদ্ধ করেছে। সরকারকে এর জবাবদিহিতা করতে হবে। ফরহাদ মজহারকে অবিলম্বে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।

(জাস্ট নিউজ/জেআর/১৬৪০ঘ.)