গা-বাঁচাতে শহিদুলের মুক্তি চাইলেন রেহানা কন্যা টিউলিপ!

গা-বাঁচাতে শহিদুলের মুক্তি চাইলেন রেহানা কন্যা টিউলিপ!

লন্ডন, আগস্ট ২৮ (জাস্ট নিউজ): আন্তর্জাতিক মহলের অব্যাহত নিন্দা, সমালোচনা আর উদ্বেগের পর খ্যাতিমান আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের মুক্তির জন্য অবশেষে মুখ খোলেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। ক্ষোভ ও সমালোচনা সামাল দিতে নিজের খালা এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহবান জানিয়েছেন শহিদুলকে যেন তড়িত মুক্তি দেয়া হয়।

কয়েক মাস আগেই বৃটেনে নিজ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদাসীনতার জন্য আলোচিত আর সমালোচিত হয়েছিলেন টিউলিপ, বিষয়টা এমন ছিল যে মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন করায় বৃটিশ সাংবাদিকদের সঙ্গে হুমকি এবং অশ্রাব্য ভাষায়ও কথা বলেন তিনি। তার এ বিবৃতিকে গা-বাঁচানোর চেষ্টা হিসেবেই দেখছেন বোদ্ধামহল।

মঙ্গলবার বৃটেনের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টাইমস’এ টিউলিপকে নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে উল্লেখ করা হয় লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক শহিদুল আলমের গ্রেপ্তারের বিষয়টি খুবি পীড়াদায়ক ও অবিলম্বে এটার সমাপ্তি ঘটা উচিত।

বলা হয়, জেলে আটক ফটো সাংবাদিক শহিদুল আলমকে মুক্তি দিতে নিজের খালা এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন টিউলিপ।

বাংলাদেশে কোনো নাগরিকের বিচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার আহবান জানিয়েছেন টিউলিপ। তার সে বক্তব্যকে কোট করে প্রতিবেদনে বলা হয়- টিউলিপ বলেছেন, ‘দেশের যে কোনে নাগরিকের বিচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা উচিত। আমি আশা করবো, বন্ধুরাষ্ট্র বিবেচনায় ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তর এ ব্যাপারে বাংলাদেশের কাছে স্পষ্ট বার্তা পাঠাবে।’

আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্টজন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আপন ভাগ্নি হওয়া স্বত্বেও বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বলে বার বার গণমাধ্যমের কাছে তা অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই বৃটিশ এমপি। গত বছরের নভেম্বরে চ্যানেল ফোরকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশি নন। মানবাধিকার ইস্যুতে বৃটেনে টিউলিপের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো হলেও বাংলাদেশের গুম, বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডসহ ক্রম অবনতিশীল মানবাধিকার ইস্যুতে তার নির্লিপ্ততা সমালোচনা আর নিন্দার ঝড় তোলে পুরো বৃটেন জুড়ে।

২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড এলাকায় ইরানে আটক এক বৃটিশ মহিলার পক্ষে প্রচারণা চালানোর সময় টিউলিপের সাক্ষাতকার নিতে যান বৃটেনের চ্যানেল ফোর এর এক সাংবাদিক।

এসময় ২০১৬ সালে বাংলাদেশে গুম হওয়া বৃটেন থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রি সম্পন্ন করা এক নাগরিকের মুক্তির ব্যাপারে টিউলিপ কোন ভূমিকা রাখতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিক ডেইজির ওপর ক্ষেপে উঠেন তিনি। ডেইজিকে সতর্ক করে দিয়ে টিউলিপ বলেন, আমি হ্যাম্পস্টেড এবং কিলবার্ন এর এমপি, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একজন সদস্য। খুবি সতর্ক থাকবেন।

বাংলাদেশের দীর্ঘদিন ধরে চলা গুম, খুন, অপহরণ আর মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে হঠাৎ করে তার মুখ খোলাটা অবাক করেছে অনেককেই। প্রশ্ন উঠেছে যিনি নিজ মুখে বাংলাদেশ এবং সেখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র নেই বলে কথা বলা থেকে বিরত থেকেছেন, এবার কেন কথা বললেন শহিদুলের মুক্তির বিষয়ে। এটা কি আন্তর্জাতিক চাপে নাকি নিন্দা আর সমালোচনায় গা-বাঁচিয়ে বৃটেনে নিজের মুখ উজ্জ্বল রাখতে?

শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে এরই মধ্যে সারা পৃথিবী থেকে নোবেল বিজয়ী, সাংবাদিক বুদ্ধিজীবি, চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, শিল্পী ও ব্যবসায়ীরা সরব হয়েছেন এবং দ্রুত তাঁর মুক্তির জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

দ্য টাইমসের খবরে বলা হয়, গত সপ্তাহান্তে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন অবিলম্বে শহিদুলের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। তার আগে স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন, শ্যারন স্টোন, রিচার্ড কার্টিস, আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটুসহ আরও অনেকেই তার মুক্তি চেয়েছেন।

উল্লেখ্য, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে রিপোর্ট করার কারণে গত ৫ই আগস্ট ৬৩ বছর বয়সী শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। আল জাজিরা টেলিভিশনকে ছাত্র বিক্ষোভ নিয়ে সাক্ষাতকার দেয়ার পর তার বাসভবনে অভিযান চালায় ৩০ জনের বেশি নিরাপত্তা কর্মকর্তা। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বাংলাদেশের তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অধীনে। এ আইনটিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অতিশয় কঠোর (ড্রাকোনিয়ান) হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

শহিদুল আলম অভিযোগ করেছেন, আটক করে তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। শহিদুল আলমের রয়েছে বৃটেনে বসবাসের অনুমতি।

(জাস্ট নিউজ/জিএস/২১০০ঘ)