সম্পাদক পরিষদের তীব্র আপত্তি, আট ধারা সংশোধনের তাগিদ

সম্পাদক পরিষদের তীব্র আপত্তি, আট ধারা সংশোধনের তাগিদ

ঢাকা, ২২ মে (জাস্ট নিউজ) : প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আটটি ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদ তীব্র আপত্তি জানিয়েছে বলে জানা গেছে। সম্পাদক পরিষদ প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আট ধারা সংশোধনের তাগিদও দিয়েছেন সরকারকে।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে সংসদের ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল নিয়ে আলোচনা হয়। প্রস্তাবিত এই আইন নিয়ে সাংবাদিক, কূটনীতিক, মানবাধিকারকর্মীসহ বিভিন্ন পক্ষের আপত্তি ছিল। বিলটি সংসদে ওঠার পর পরীক্ষার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

জানা যায়, সংসদীয় কমিটিতে নিজেদের আপত্তির কথা তুলে ধরেছেন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। এই ধারাগুলোর প্রয়োজনীয় সংশোধনের বিষয়ে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে সংসদের ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি। প্রস্তাবিত আইনটির খসড়া পর্যালোচনা শেষে আবার গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করা হতে পারে।

সংসদীয় কমিটির আমন্ত্রণে আজকের বৈঠকে পত্রিকার সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাটকোর শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। বৈঠকে প্রস্তাবিত আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা নিয়ে আপত্তি জানানো হয়।

বৈঠক শেষে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকতার অবাধ বিচরণের ক্ষেত্রে যেসব ধারায় বাধা আসতে পারে, সেগুলোতে আমরা তুলে দিতে বলেছি। তা না হলে আমরা গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আন্দোলন করেছি; আমরা সাংবাদিকতা রক্ষার জন্য আন্দোলনে যাব, সেটা বলে এসেছি।’

গোলাম সারওয়ার বলেন, তারা সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে একটি লিখিত বক্তব্য কমিটিকে দিয়েছেন।

সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, তারা মোট আটটি ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে সংজ্ঞায় অস্পষ্টতা ছিল, সেটা জানিয়েছেন। সংসদীয় কমিটি এই দাবির সঙ্গে একমত হয়েছে। যেসব ধারাতে বিন্দুমাত্র স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতিরোধক ও স্বাধীন সাংবাদিকতার বাধা রয়েছে, সেগুলো তারা তুলে ধরেছেন। কমিটিও এ বিষয়গুলো সহানুভূতিশীল ও আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছে। তারা আশা করছেন, আইনের কয়েকটি বিষয়ে আমূল পরিবর্তন আসবে।

এক প্রশ্নের জবাবে মাহ্‌ফুজ আনাম বলেন, ‘পুরো আইনটিকেই সাংবাদিকদের কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য তারা সব চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন। স্বাধীন সাংবাদিকতার সাংবিধানিক যে অধিকার রয়েছে, তার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে কমিটি বারবার আমাদের আশ্বস্ত করেছে।’

সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত আইনে কিছু অস্পষ্টতা আছে। পরিষ্কার করতে হলে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। সংসদীয় কমিটির পরবর্তী বৈঠকে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। প্রয়োজন হলে আবারও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হবে।

বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে। গণমাধ্যম যাতে সংকুচিত না হয়, সাধারণ মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যাতে ব্যাহত না হয়, সে কথা তারা বলেছেন। সাংবাদিকেরা যাতে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে পারেন; অনুসন্ধান সাংবাদিকতা আর গুপ্তচরবৃত্তি যাতে একসঙ্গে মিলিয়ে না যায়, সেটা বলেছি। আমরা বৈঠকের বিষয়ে খুবই সন্তুষ্ট যে তারা আমাদের বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে শুনেছেন। তারা আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

অ্যাটকোর সভাপতি ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমরা আইনের যেসব বিষয় নিয়ে চিন্তিত, সেগুলো কমিটিকে জানিয়েছি। কমিটি আমাদের আশ্বাস দিয়েছে যে তারা আমাদের উত্থাপিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবেন। তারা বর্তমানে আইনটি যেভাবে রয়েছে, তা সংশোধন করে সংসদে তুলবেন।’

একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু বলেন, আইনমন্ত্রী, সংসদীয় কমিটির সভাপতিসহ সবাই নিশ্চিত করেছেন, গণমাধ্যমকে বাধাগ্রস্ত করা নয় বরং সোশ্যাল মিডিয়ার নামে অনিয়ন্ত্রিত গুজবনির্ভর মিডিয়ার হাত থেকে মূলধারা গণমাধ্যমকে প্রটেকশন দেওয়ার জন্যই এই আইন তারা প্রণয়ন করছেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আমরা কোনো ব্যক্তিবিশেষ নয়, সব দেশের জন্যই এই আইনটি করতে চাই। সাংবাদিকতা ব্যাহত বা সাংবাদিকদের টার্গেট করে কোনো আইন আমরা করছি না। সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিপরীতে কোনো আইন আমরা সাংবিধানিকভাবে করতেই পারি না।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘যে আটটি ধারা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেখানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংজ্ঞা স্পষ্ট নয়, সেটা স্পষ্টকরণের কথা বলা হয়েছে। আটটি ধারায় যে অসুবিধার কথা গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, আমরা সেগুলোরে ব্যাখ্যা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আমরা বক্তব্য দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে আমি পরিষ্কারভাবে বলেছি, এগুলো আমরা স্পষ্টকরণের সুপারিশ করব। যেসব সংযোজন-বিয়োজন দরকার, তা করে আমরা সুপারিশ করব। তারপরে নতুন করে এটি নিয়ে সমালোচনা না হয়, সে জন্য সংসদীয় কমিটি এই আইনের সংশোধনসহ চূড়ান্ত রূপ দেবে, তখন আমরা গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে আবারো বসে এটি সংসদে পাস করার জন্য প্রেরণ করব।’

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘আমরা উভয় পক্ষ একমত হয়েছি যে এ রকম একটি আইন আমাদের দরকার। সেই আইনের যেসব জায়গায় সংশোধনী করা প্রয়োজন, সেটা আমরা করব।’

কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, শওকত হাচানুর রহমান, কাজী ফিরোজ রশীদ, হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া এবং বিশেষ আমন্ত্রণে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বৈঠকে অংশ নেন। কমিটির আমন্ত্রণে সম্পাদক পরিষদের সভাপতি গোলাম সারওয়ার, সাধারণ সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের সভাপতি সালমান এফ রহমান, সহসভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু, বিএফইউজের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, মহাসচিব ওমর ফারুক বৈঠকে যোগ দেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৯২৭ঘ.)