এবার ড. শহিদুল আলমের পাশে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন

এবার ড. শহিদুল আলমের পাশে নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেন

ঢাকা, ২৬ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : জেলবন্দি বাংলাদেশী সাংবাদিক ড. শহিদুল আলমের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ড. অমর্ত্য সেন। শহিদুল আলমের সমর্থনে ভারতের একদল ফটো সাংবাদিক প্রচারণায় নেমেছেন। তাদেরকে অমর্ত্য সেন বলেছেন, গণতন্ত্রের জন্য ফটো সাংবাদিকতাসহ চরমভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় তিনি শহিদুল আলমের প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, শহিদুল আলম অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এবং বহু বছর ধরে সাহসিকতার সঙ্গে যেসব কাজ করেছেন তার ভূয়সী প্রশংসা করার যথেষ্ট কারণ আছে আমাদের। তার কাজকে কঠোরভাবে দেখার পরিবর্তে প্রশংসা ও তারিফ করা উচিত। এ খবর দিয়েছে আউটলুক ইন্ডিয়া।

এতে উষিনর মজুমদারের লেখা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশী ফটো সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফির প্রদর্শক শহিদুল আলম এখন কারাগারে। তার সমর্থনে একটি বিবৃতি দিয়েছেন অমর্ত্য সেন। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মত প্রকাশের ক্ষেত্রে কণ্ঠরোধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে বিশ্বের অনেক মিডিয়া হাউজ ও সংগঠন। এর মধ্যে রয়েছেন নোয়াম চমস্কি, অরুন্ধতী রায়, পেন ইন্টারন্যাশনাল, বেশ কিছু ফটোগ্রাফি বিষয়ক সংগঠন, মিডিয়া বিষয়ক সংস্থা, আরএসএফ, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস। বিশ্বের এমন সব বোদ্ধাদের তালিকায় যোগ হলেন অমর্ত্য সেন।

গত ৫ আগস্ট রাতে শহিদুল আলমকে আটক করে পুলিশ। এরপর ‘সরকারের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার’ অভিযোগ আনা হয়। তাকে এক সপ্তাহের জন্য রিমান্ডে নেয় পুলিশ। ঢাকায় একজন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত তাকে ১২ আগস্ট থেকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে দিয়েছে। ২২ আগস্ট কেরানিগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন তার স্ত্রী ও শুভাকাঙ্খীরা। এরপর তাকে কারাগারের একটি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

ওই পরিদর্শকরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, ড. শহিদুল আলমের শ্বাস-প্রশ্বাসে জটিলতা দেখা দিয়েছে। তার চোয়ালে এবং মাড়িতে ব্যথা। চোখে সমস্যা দেখা দিয়েছে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর মামলার শুনানিতে তাকে আদালতে হাজির করার কথা। এ সময় পর্যন্ত তাকে জেলেই থাকতে হবে। তার আগে পর্যন্ত তাকে চিকিৎসার জন্য একটি উপযুক্ত হাসপাতালে পাঠানোর জন্য আর্জি জানান তারা। তার সঙ্গে জেলখানায় অশুভ আচরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। তারা অবিলম্বে তার চিকিৎসার প্রয়োজন বলে আবেদন জানিয়েছেন।

আউটলুক ইন্ডিয়া আরো লিখেছে, শহিদুল আলম একজন ফটোগ্রাফার। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন মিডিয়া হাউজে কন্ট্রিবিউট করেছেন। তিনি রয়েল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির একজন সম্মানিত ফেলো। এ ছাড়া ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্যও তিনি। ঢাকায় দৃক ফটো লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠা করেছেন পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইন্সটিটিউট। এ ছাড়া তার আরো অর্জন রয়েছে। আল জাজিরা টেলিভিশনকে একটি সাক্ষাতকার দেয়ার পরই ৫ আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয় শহিদুল আলমকে। বাংলাদেশে ওই সময় চলমান ছাত্র আন্দোলন নিয়ে তিনি বিস্তার কথা বলেন। সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনায় ওই আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্র হয়ে ওঠে। পুলিশের নির্মম দমনপীড়নের পর ওই বিক্ষোভ সহিংস হয়ে ওঠে। এতে শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ বেশ কিছু মানুষ আহত হন। ৬৩ বছর বয়সী শহিদুল বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড, ভিন্ন মতাবলম্বীদের গুম করে দেয়া, দুর্নীতি, মিডিয়ার কণ্ঠরোধ, সরকারি চাকরিতে কোটায় জালিয়াতির মতো বিষয়ে বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর সমালোচনা করেছিলেন। শহিদুল আলম বলেছিলেন, প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট ছুটেছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থন ও সশস্ত্র ব্যক্তিদের মুক্তভাবে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

আউটলুক ইন্ডিয়া আরো লিখেছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের মুড পাল্টে গেছে। শহিদুল আলম বলেছিলেন, ক্ষমতাসীনরা যেকোনো ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন করতে সম্ভাব্য সব উপায় অবলম্বন করছে। যাতে তারা নির্বাচনের আগে বিপদজনক পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে।

ওই রাতেই শহিদুল আলমকে প্রায় ৩০ জন পুলিশ সদস্য টেনেহিচড়ে নিয়ে যায়। তার পরিবার অভিযোগ করেছে, দীর্ঘ রিমান্ডের সময়ে তার ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অভিযোগ করেছেন, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সরকার বিরোধী উস্কানি দিচ্ছিলেন শহিদুল আলম।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/১৮১০ঘ.)