নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল!

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল!

ঢাকা, ২৫ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাতের পর তফসিল ঘোষণা করবে সাংবিধানিক সংস্থাটি। এর আগে ৩১ অক্টোবর নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ডেকেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।

বৃহস্পতিবার ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, তফসিল কবে হবে বা কবে নির্বাচন হবে এগুলো নিয়ে এখন পর্যন্ত আলোচনা হয়নি। ১ নভেম্বর বিকাল ৪টায় রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাত করবে কমিশন। তারপর নির্বাচনের তফসিল ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করে কমিশন সিদ্ধান্ত নিবে।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, রেওয়াজ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশে ভাষণের মাধ্যমে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে থাকেন। নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ এখনি বলা যাচ্ছে না। কারণ একজন নির্বাচন কমিশনার দেশের বাইরে রয়েছেন। উনি আসলে পরে সবাই মিলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমরা আশা করছি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে এমনটাই আশা করছি। ভোটের তারিখ ও তফসিল নিয়ে বিভ্রান্ত না ছড়ানোর জন্য গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানান ইসি সচিব।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্বাচন কমিশনার জানান, ৪ তারিখে কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) তফসিল ঘোষণা করবেন এবং জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন। রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাতের বিষয়ে তিনি বলেন, ভোটগ্রহণের জন্য দুটি তারিখ পরিকল্পনায় রাখা হয়েছে। কবে ভোটগ্রহণ হবে তা চূড়ান্ত হয়নি।

ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পৃথক দুটি পরিকল্পনায় ১৮ বা ২০ ডিসেম্বরের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাতের পর এটি চূড়ান্ত হবে। ভোটকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সব ধরনের আগাম প্রচার সামগ্রী স্ব উদ্যোগে তফসিল ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে নির্দেশ দেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়ে অপসারণে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার পর আচরণ বিধি লঙ্ঘনে অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে তফসিল ঘোষণার আগে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। ইসি কর্মকর্তারা জানান, তফসিলের আগে নেয়া সব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়-বিভাগের সহযোগিতার জন্যই এ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা। এ সভায় ভোটকেন্দ্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার, মালামাল পরিবহন, পরীক্ষার সময়সূচি পর্যালোচনা, ঋণখেলাপির তথ্য, আগাম প্রচার সামগ্রী অপসারণ, নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সার্বিক বিষয় তুলে ধরা হবে।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে এ সভায় উপস্থিতির জন্যে ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার যুগ্মসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

ভোটকেন্দ্রের স্থাপনা মেরামত ও ভৌত অবকাঠামো সংস্কার; পার্বত্য দুর্গম এলাকায় হেলিকপ্টারে নির্বাচনী মালামাল পরিবহন এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের আনা-নেওয়ার পদক্ষেপ; নির্বাচনী প্রচার; পর্যবেক্ষক নিয়োগ; পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানে সহায়তা; নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে পরিকল্পনা; ঋণখেলাপি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ; নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনে নির্বাহী হাকিম নিয়োগ; বার্ষিক ও পাবলিক পরীক্ষার সময়সূচি পর্যালোচনা; আবহাওয়ার পূর্বাভাস; আগাম প্রচারণা সামগ্রী অপসারণ ও বিবিধ বিষয় সভার আলোচ্যসূচিতে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর মহাব্যবস্থাপক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব বা তদূর্ধ্ব কর্মকর্তাদের বৈঠকে ডাকা হয়েছে। সেইসঙ্গে তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা, ডাক অধিদপ্তর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক; স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী; মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড এর চেয়ারম্যান এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালককে সভায় অংশ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই হিসেবে ৩০ অক্টোবর থেকে সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন গণনা শুরু হচ্ছে। মনোনয়ন দাখিল, বাছাই, প্রত্যাহারের শেষ সময় এবং প্রতীক বরাদ্দ শেষে প্রচারের পর্যাপ্ত সময় দিয়ে তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত ৪০-৪৫ দিন ব্যবধান রাখা হয়ে থাকে। নবম সংসদ নির্বাচনে ৪৭ দিন সময় নিয়ে ভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। দশম নির্বাচনে ৪২ দিন সময় নিয়ে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। সূত্র: নয়া দিগন্ত

(জাস্ট নিউজ/একে/১৯৪৭ঘ.)