সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে, ডাক্তার দেখাতে হবে : ড. কামাল

সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে, ডাক্তার দেখাতে হবে : ড. কামাল

ঢাকা, ২৫ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘পুরো দেশকে জঙ্গল বানিয়েছে। জংলিরাও এমনটা করে না। কেন এগুলো হচ্ছে? সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে! মাথা খারাপ হলে ডাক্তার দেখাতে হয়, তাদের ডাক্তার দেখাতে হবে।’

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. কামাল এই মন্তব্য করেন।

বক্তব্যের শুরুতেই ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে ড. কামাল বলেন, ‘দুটি মামলায় জামিন নেওয়ার পরও তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমি অবাক হয়েছি, তাকে সন্ধ্যায় নেওয়া হয়েছে, পরে তাকে অন্তরীন করা হয়েছে। ঢাকা এসে দেখি, তার এখনো মুক্তি হয়নি। এটা কী শুরু করেছে? একটা সভ্য দেশকে সুন্দরবন বানাতে চাচ্ছে নাকি? না, সুন্দরবনকেও অপমান করা হয়। এটা জঙ্গল বানানো হচ্ছে।’

প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘মইনুলকে গ্রেপ্তারের ঘটনা চরম স্বৈরতন্ত্রের পরিচয় দিয়েছে। এটা গণতন্ত্র নয়। সংবিধানে এমন ক্ষমতা কাউকে দেওয়া হয়নি। যে যা ইচ্ছা তা করতে পারবে। মইনুলকে অপমান করে কেন গ্রেপ্তার করা হয়েছে? কী অপরাধ করেছে সে? একই ঘটনায় আর কত মামলা করবে? এটা অত্যন্ত লজ্জাকর।’

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে আমি নিন্দা জানাই। একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি এখান (হাইকোর্ট) থেকে জামিন নিয়ে গেছেন। আমি অবাক হয়েছি, তাকে সন্ধ্যায় নেওয়া (গ্রেফতার) হয়েছে, পরে তাকে অন্তরীণ করা হয়েছে। ঢাকায় এসে দেখি তার এখনও মুক্তি হয়নি। এটা কী শুরু করেছে? একটা সভ্য দেশকে সুন্দরবন বানাতে চাচ্ছে নাকি? না, সুন্দরবনকেও অপমান করা হয়। এটা জঙ্গল বানানো হচ্ছে। সরকার যা করছে, তা তো জানোয়াররাও করে না। বিনা কারণে কেন সরকার এসব করছে? মাথা খারাপ হয়ে গেছে এদের।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক বলেন, ‘এ সরকারের নাকি তথাকথিত একটা আইনমন্ত্রী আছে। তোমার (আইমন্ত্রী আনিসুল হক) কাছে আমি উত্তর চাই। তুমি আমাদের একজন জুনিয়র ল ইয়ার। তোমার বাবা আমার সহকর্মী ছিলেন, সিরাজুল হক বাচ্চু ভাই, উনি আইনজীবী ছিলেন। তুমি কী হয়ে গেছ? তুমি আইন সব ভুলে গেছ? এসো তোমার সাথে আমরা আইনের বই দেখব। কেন গ্রেপ্তার করে মইনুল হোসেনকে কারাগারে নেওয়া হয়েছে, কৈফিয়ত চাই। গণতন্ত্র যখন দাবি করো জনগণকে কৈফিয়ত দিতে হবে। দায়িত্ব আছে তোমার (আইনমন্ত্রী)। বলতে হবে তোমায়।’

কামাল হোসেন বলেন, ‘অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে বলছি, কোনো দেশের প্রধানমন্ত্রী বলতে পারে না, “সবাই মামলা করো”। আইনমন্ত্রী তুমি যার (প্রধানমন্ত্রী) চাকরি করছো তাকে বুঝাও। এভাবে কথা বলা যায় না। তাকে বুঝানোর ক্ষমতা না থাকলে আমরা সাহায্য করব। বই খুলে চোখে আঙ্গুল দিয়ে তোমাকে দেখাব। স্বাধীনতার ৪৭ বছরে এসে এসব দেখতে হচ্ছে। আমি মনে করি, এটা আমার জন্য বড় শাস্তি। আমার এক বন্ধু সিনিয়র আইনজীবী আমাকে বলেছে, আওয়ামী লীগের নামে যা হচ্ছে তাতে কি বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে?’

প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘তুমি শপথ নিয়েছ সংবিধান অনুযায়ী দেশ পরিচালনার। তুমি যার চাকরি করছ তিনিও শপথ নিয়েছেন। তোমাদের শপথের প্রত্যেকটা শব্দের ব্যাখ্যা আমাকে বুঝাও। আমি তোমার কাছে সময় চাই। আমাকে বুঝাও, হচ্ছেটা কী দেশে। পার্লামেন্ট নাকি আছে। সেখানে দাঁড়িয়ে তোমরা কৈফিয়ত দাও। আরো দুই দিন পার্লামেন্ট আছে। সেখানে দাঁড়িয়ে তুমি কৈফিয়ত দাও। সেখানে বলো, যাতে মানুষ জানতে পারে।’

কামাল হোসেন বলেন, ইদানীং নতুন একটি বিষয় শোনা যাচ্ছে, গায়েবি মামলা। এটা তো বুঝি না। সিলেটে জনসভা করতে গিয়ে দেখেছি, কোনো কারণ ছাড়াই আমাদের ছেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে। বেআইনি কাজের জন্য আইনমন্ত্রীর বিচার হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, 'দ্রুত তোমার বিচার হবে। ১০ বছর পরে হলেও তোমার বিচার হবে। এসব কথা বলার জন্য আমাকে কী করবা? সর্বোচ্চ মেরে ফেলতে পারো, তাই তো? তোমার বিচার হবেই।'

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘যেসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে তা সংবিধানের কোথায় আছে। আমি সিলেটে যা দেখেছি, অবাক কাণ্ড। আমাদের হোটেলের সামনে থেকে আটটা-দশটা করে ছেলে ধরে নিয়ে গেছে। কেন নিয়ে গেছে? কী শুরু হয়েছে, এটা বাংলাদেশ?’

মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে এ ঐক্য করা হয়েছে উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, ‘আইনমন্ত্রী, চোখ খোল। দেশের অবস্থা বুঝার চেষ্টা কর। অন্ধকারে থাকা যাবে না। দেশে আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। এই সরকারের বিরুদ্ধে আজ সব মানুষ ঐক্যবদ্ধ। সিলেট থেকে আন্দোলন শুরু হয়েছে, সফল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। সভা পরিচালনা করেন জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, নিতাই রায় চৌধুরী, সুব্রত চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, এস এম কামালউদ্দিন, শাহ আহমেদ বাদল, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গোলাম মোস্তাফা খান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন- অ্যাডভোকেট আবদুর রাজ্জাক খান, মহসিন মিয়া, ইকবাল হোসেন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, গোলাম রহমান ভুইয়া, গোলাম মোস্তাফা, গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল, গাজী কামরুল ইসলাম, সাখাওয়াত হোসেন, ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান, মির্জা আল মাহমুদ, সগীর হোসেন লিয়ন, শরীফ ইউ আহমেদ, মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।

(জাস্ট নিউজ/একে/২২১৯ঘ.)