এমপিওভুক্তির দাবিতে অনশনে অসুস্থ ৮৬ শিক্ষক

এমপিওভুক্তির দাবিতে অনশনে অসুস্থ ৮৬ শিক্ষক

ঢাকা, ৩ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : সকল স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো আমরণ অনশন অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ব্যানারে গত রোববার থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শুরু হওয়া এ অনশন কর্মসূচিতে বুধবার বিকেল অবধি অন্তত ৮৬ শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

বুধবার সন্ধ্যায় অনশন কর্মসূচির সমন্বয়ক ও ফেডারেশনের যুগ্মসম্পাদক শফিকুল ইসলাম টেলিফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, এ পর্যন্ত মোট ৮৬ শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তার মধ্যে ২৪ জন রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কারও কারও অবস্থা গুরুতর।

বুধবার দুপুরে অনশনস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ ড. বিনয় ভূষণ রায়সহ অসুস্থ শিক্ষকরা স্যালাইনরত অবস্থায় রয়েছেন। সেসময় শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি জানাতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পাশে বসে ছিলেন বিশিষ্ট গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ।

এ সময় শিক্ষক নেতা গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার সাংবাদিকদের জানান, অনশনে অসুস্থ হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তবে আবার ফিরে এসেছেন অনশনস্থলেই। দাবি আদায় না হলে অনশনস্থলেই মরতে চান।

তিনি বলেন, তারা এমপিওভুক্তির সুনির্দিষ্ট ঘোষণা চান। এজন্য শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করেননি। ঘোষণা না আসা পর্যন্ত অনশন ভাঙবেন না; আমরণ কর্মসূচি চলবে।

এরপর অসুস্থ শিক্ষকদের জন্য এবং দাবি পূরণে প্রধানমন্ত্রীর সদয় বিবেচনা পেতে সর্বশক্তিমানের কাছে কায়মনোবাক্যে মোনাজাত করা হয়। এসময় অনেক শিক্ষককে কাঁদতে দেখা যায়।

বুধবার অনশন কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে সংহতি জানান কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা এটিএম হেমায়েত উদ্দিন, বাসদের রাজেকুজ্জামান রতন, ডা. আবু সাইদ, ডা. ওবায়দুল ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী ড. ফরিদুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন মাসুদ, শিক্ষক নেতা নজরুল ইসলাম রনি, রবিউল আলম, অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, এমপিওভুক্তির দাবিতে গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকার কয়েকশ' শিক্ষক অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। দাবি আদায় না হওয়ায় গত রোববার থেকে অবস্থান কর্মসূচি রূপ নেয় আমরণ অনশনে।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ দাবি পূরণের আশ্বাস নিয়ে মঙ্গলবার অনশন ভাঙাতে অনশনস্থলে যান। তবে শিক্ষকরা মন্ত্রীর আশ্বাস প্রত্যাখ্যান করে এমপিওভুক্তির সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণের দাবিতে অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

উল্লেখ্য, সরকার স্বীকৃত সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার দাবিতে শিক্ষকদের এ আন্দোলন। স্বীকৃতি পেলেও নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পান না। সারাদেশে এরকম নন-এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। অন্যদিকে বর্তমানে দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী ৪ লাখের বেশি। সর্বশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৮৫৫ঘ.)