বরিশালের বর আর আমেরিকান কনে নিয়ে ফেসবুকে কেন এই বিরুপ আলোচনা

বরিশালের বর আর আমেরিকান কনে নিয়ে ফেসবুকে কেন এই বিরুপ আলোচনা

ঢাকা, ২৩ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : ছেলে বাংলাদেশের। মেয়ে আমেরিকান। প্রেমের টানে উড়ে এসে বরিশাল শহরের ছেলে মাইকেল অপু মণ্ডলের সাথে বাগদান করলেন ক্যালিফোর্নিয়ার মেয়ে সারা কুন।

ফেসবুকে এনিয়ে খবর এবং ছবি প্রকাশের সাথে সাথে তা ভাইরাল। সেই সাথে শুরু অঝোর ধারায় মন্তব্য।

কিন্তু এসব মন্তব্য বিচার করলে দেখা যায় এর মধ্যে অনেকগুলো একেবারেই বর্ণবাদী এবং অবমাননাকর।

এই আন্ত-মহাদেশীয় প্রেমের পাত্রপাত্রীদের গায়ের রঙ নিয়ে কালোজাম-চমচমের উপমা টানা হয়েছে। মো. ফারুক হাসান জয় নামে একজন মন্তব্য করেছেন, "আবারো প্রমাণ হলো কালো কালো কাউয়ার কপালে সাদা সাদা পরি আসে।"

নিয়ামুল হাসান লিখেছেন, "আমরা জিআরই, আইএলিএস-এর পেছনে ছুটবো ক্যান! রং মিস্ত্রির থেকে দিকনির্দেশনা নিয়ে এগুতে হবে।"

এই বিয়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও নানা রকম শঙ্কা এবং সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। মোস্তাফিজুর আর কামাল মন্তব্য করেছেন, "বিয়ের পরে কি হয় সেটারও নিউজ কইরেন।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মাহবুবা নাসরীন বলছেন, এ ধরনের মন্তব্যের পেছনে নানা ধরনের মনোভাব কাজ করে। প্রথমত, এগুলো যে বর্ণবাদী মন্তব্য এবং এতে করো অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে সে সম্পর্কে অনেকেরই কোন ধারণা নেই।

পাশাপাশি, এর মধ্যে একধরনের পরশ্রীকাতরতাও কাজ করে, বলছেন তিনি, যেন এই প্রেম তার সাথেও হতে পারতো।

অধ্যাপক নাসরীন বলছেন, মানুষ যে ধরনের গণ্ডীর মধ্যে বসবাস করে, যে শ্রেণিকে প্রতিনিধিত্ব করে এসব মন্তব্য থেকে সে সম্পর্কেও একটা ধারণা পাওয়া যায়।

এনগেজমেন্টের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর মি. মণ্ডল জানিয়েছেন, গত বছর ফেসবুকের মাধ্যমে তার সাথে পরিচয় ঘটে সারা কুন-এর। এরপর থেকে নিয়মিত কথাবার্তা, অনুরাগ এবং প্রণয়। তার পরই নিজেদের যৌথ ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিরিয়াস চিন্তাভাবনা।

গত ২০শে নভেম্বর সারা বরিশালে গিয়ে পৌঁছানোর পর তাদের এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান হয়।

এরপর সারা ফিরে যাবেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। পরে কোন এক সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ে হবে।

তবে নেতিবাচক মন্তব্যের পাশাপাশি এই বাগদানের প্রসঙ্গে ফেসবুক অনেক ইউজার একে ভালবাসার বিজয় বলে বর্ণনা করেছেন।

আসলাম নামে একজন ইউজার বলছেন, প্রকৃত ভালোবাসা এখনো আছে বলেই পৃথিবী এতো সুন্দর।

কাজী নাহিদ বলছেন, বাংলাদেশ আর আমেরিকার এই সেতুবন্ধন মাইলফলক হয়ে রইবে।

কামরুন নাহার মুন্নী বলছেন, ভালবাসা মোরে ভিখারি করেছে তোমারে করেছে রাণী। আশরাফুল আলম বলেছেন, আমাদের প্রেম আন্তর্জাতিক মানের।

এই ঘটনাটি নিয়ে নানা রকম রসালো মন্তব্যও করা হয়েছে ফেসবুকে।

হেনা ইসলাম জারা বরিশালের কথ্য ভাষায় লিখেছেন, "ওরে এ দি মোগো বাড়ির সামনে, মুইতো খবরও পাইলাম না।"

বিয়ের বাজারে বরিশালের বরদের চাহিদাকে তুলে ধরে রেজওয়ান চৌধুরী অনিক-এর মন্তব্য: "বরিশাইল্লা পোলা কত টাকা তোলা?"

রাবিয়া সুলতানা নিসার আশা: "এই কিছুদিন আগে এক ব্রাজিলের মেয়ে আসছিলো। বিয়েও করছে। আর এখন আমেরিকান। আমিও কি তাহলে একটা ব্রিটিশ ছেলে পটাতে পারবো?"

এস এম মঞ্জুর হাসান লিখেছেন, "হায়রে কপাল! আমরা কি রত্ন উন্নত বিশ্বের ভিনদেশী মেয়েরা তা চিনল, কিন্তু দেশের মেয়েরা চিনলো না!"

মোসাদ্দেক মাহমুদ আক্ষেপ করেছেন: প্রেমের টানে কেন অন্য জেলায় যেতে হবে, প্রেমের টানে কেন ঢাকায় আসতে পারে না?" সূত্র: বিবিসি

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/০৯২৬ঘ.)