তড়িঘড়ি ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে

তড়িঘড়ি ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে

ঢাকা, ২৪ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : নির্বাচন কমিশনের আচরণ ও তড়িঘড়ি করে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্ত আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচণকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলতে পারে। বিরোধী দল ও জোটগুলোর পক্ষ থেকে বারবার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবি করা হলেও এ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কোনো নজর নেই। বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের নিয়মিত গ্রেফতার করা হচ্ছে। আইণ শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর ভয়ে তারা ঘরে থাকতে পারছে না। তাহলে কিভাবে তারা নির্বাচন করবে?

শনিবার সেন্টার ফর গভর্ণেন্স আয়োজিত ‘নির্বাচনের রাজনীতি ও জনগণের ভোটাধিকার’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যামণাল স্ট্রাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) সম্মলন কক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে গেস্ট অব অনার ছিলেন, বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতাদের একজন ও সুপ্রিম কোর্টের বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিঃজেঃ ড. এম সাখাওয়াৎ হোসেন।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন- সাবেক তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজুদ্দিন খান, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপত আবুল কাশেম ফজলুল হক, ফেমার সভাপতি মুনিরা খান, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়র হোসাইন, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমদ, সাবেক বিজিবি প্রধান লেঃ জেঃ এম মইনুল ইসলাম, বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, জহির উদ্দিন স্বপন ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।

গেস্ট অব অনার ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচণ পরিচালনার জন্য যে নির্বাচন কমিশনের হাতে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তারা তাদের সে ক্ষমতা সম্পর্কে মোটেই সচেতন বলে মনে হয় না। এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিড তৈরি হয়নি। বিরোধী জোট ও দলের নেতা কর্মীরা এখনো জামিনের জন্য আদালতে ঘোলাঘুরি করছে। অনেকে ঘরে থাকতে পারছে না। তাহলে তারা নির্বাচন করবে কিভাবে? অন্যদিকে নির্বাচনে যারা প্রিসাইডং অফিসার ও পুলিং অফিসারের দ্বায়িত্ব পালন করবেন পুলিশের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ নিয়ে নির্বাচন কমশন নির্বিকার। এটা কোনোভাবেই নির্বাচনী পরিবেশ হতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের অতিআগ্রহও বিভিন্ন সন্দেহের জন্ম দিচ্ছে। কারা এ মেশিন বানিয়েছে বা এ মেশিনে কোথাও নির্বাচন অনষ্ঠিত হয়েছে কিনা তা না জেনে তড়িঘড়ি করে এটি ব্যবহার করা হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতেই পারে। কারণ ইভিএম ব্যবহারে আমাদের ভোটাররা এখনো অভ্যস্ত নন। সাধারণ মানুষ যাতে তাদের ভোটাধিকারের যথাযথ ব্যবহার করতে পারে তা নির্বাচন কমিশনকে নিশ্চিত করতে হবে। আবার শুধু ভোট দিতে পারলে হবে না ভোট গণনায় জনগণের ভোটের প্রতিফলন থাকবে হবে। এটাই গণতন্ত্র। এটাই উন্নয়নের পথ। এটাই জনগণকে ক্ষমতায়নের পথ। আর জাতীয় নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে হলে সাধারণ মানুষের ওপর আস্থা রাখতে হবে।

মূল প্রবন্ধে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘অনেক ইতিহাস আছে যে, নির্বাচন ফ্রি হলো কিন্তু ফেয়ার হলো না। দীর্ঘলাইনে মূর্তির মতো শতশত মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন ভোট দেওয়ার জন্য অথচ বুথে ঘটে অন্য ঘটনা। বুথে গিয়ে তাকে বলা হলো তুমি হাতে কালি মেখে চলে যাও আর ব্যালট পেপার দিয়ে দাও- এমন যেন না হয়।’

‘এসব দেখার বিষয় ইসির। কিন্তু এখন ইসি নিজেরা মাঝে মধ্যে এমন সব কথা বলছে যা তারা নিজেদের বিতর্কিত করে ফেলছে। মনে রাখতে হবে বিশ্ব তাকিয়ে আছে আগামী নির্বাচনের দিকে। সরকারের অধীনে এর আগে নির্বাচন হলেও এবারই প্রথম দলীয় সরকারের অধীনে সব দল অংশ নিচ্ছে। মনে রাখতে হবে, আগামী ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ফ্রি ও ফেয়ার করতে ইসির জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ। একে গ্রহণযোগ্য করতে সব রকম সহযেগিতা করতে হবে সরকারকে।’

হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন তাদের ওপর অর্পিত ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন বলে মনে হয় না। যেখানে নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কেই ধারনা নেই সেখানে তারা স্বাধীণভাবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কিভাবে করবে? নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি চাইতে তারা ইভিএম নিয়ে বেশি তৎপর। অথচ তড়িঘড়ি করে জাতীয় নির্বাচনে এটি ব্যবহারের কোনো যৌক্তিকতা নেই।

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমরা এখন একটি মারাত্মক সংকটের মধ্যে রয়েছি। ২০১৪ সালের মতো আবার একটি নির্বাচন হলে তা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের চরম লজ্জাজনক অবস্থায় পড়তে হবে। এখন যা পরিস্থিতি তাতে প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে নির্বাচন যারা করতে চায় তারা নির্বাচন করতে পারবে কিনা? যারা ভোট দিতে চান তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন কিনা? যাকে ভোট দিতে চান তাকে দিতে পারবেন কিনা? আবার শুধু ভোট দিলে হবে না। এ ভোট গণনায় তাদের রায়ের প্রতিফলন ঘটবে কিনা। এভাবে পুরো প্রক্রিয়টাকে গ্রহণযোগ্য করা যাবে কিনা? এসব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে নির্বাচন কমিশনের কাছে। আর কমিশন যদি নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে তা করতে চায় তাহলেই তা সম্ভব। কিন্তু এ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের এ ভূমিকা কেউ দেখতে পাচ্ছে না।

(জাস্ট নিউজ/একে/২১১০ঘ.)