যে রায়ের পর খালেদা জিয়ার নির্বাচনের সম্ভাবনা বাড়লো, নড়েচড়ে বসেছে সরকার

যে রায়ের পর খালেদা জিয়ার নির্বাচনের সম্ভাবনা বাড়লো,  নড়েচড়ে বসেছে সরকার

ঢাকা, ৩০ নভেম্বর (জাস্ট নিউজ) : বাংলাদেশে বিরোধীদল বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কিনা সেবিষয়ে যখন পাল্টাপাল্টি যুক্তি দেওয়া হচ্ছে তখন হাইকোর্টের নতুন একটি রায়ে সরকার নড়েচড়ে বসেছে।

হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার বিএনপির একজন প্রার্থী সাবিরা সুলতানার সাজা স্থগিত করার পর সরকারের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে আগামীকালই আপিল করার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

সরকারের এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন, আদালত বন্ধ থাকার পরেও শনিবার চেম্বার জজ আদালতে এই আপিলের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, ২রা ডিসেম্বর, রবিবার মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই-এর জন্যে দিন নির্ধারিত থাকার কারণে তারা আর দেরি করতে চান না।

“যদি এই আদেশের সুযোগ নিয়ে তিনি নির্বাচন করেন তাহলে সেটা সংবিধানের পরিপন্থী হবে,” বলেন মি. আলম।

বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন। বিএনপির নেতারা আশা করছেন, তাদের নেত্রী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন এবং সেজন্যে তাকে পাঁচটি আসনে মনোনয়নও দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সাবিরা সুলতানার ব্যাপারে হাইকোর্টে দেওয়া সবশেষ রায়ের পর অনেকে মনে করছেন, নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার অংশ নেওয়ার ব্যাপারে এই রায়টি নতুন পথ খুলে দিতে পারে।

কিন্তু এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলছেন, “সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে স্পষ্টভাবে বলা আছে নৈতিক স্খলনের কারণে কেউ যদি দুই বছর কিম্বা তারও বেশি সাজাপ্রাপ্ত হন তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না।”

“এমনকি মুক্তিলাভের পরেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্যে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে আরো পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে,” বলেন মি. আলম।

সাবিরা সুলতানার মামলা
সম্পদের তথ্য গোপন করা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা এক মামলায় নিম্ন আদালত বিএনপির নেত্রী সাবিরা সুলতানাকে তিন বছর করে মোট ছ'বছরের কারাদণ্ড দেয়।

সাবিরা সুলতানা তখন এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন।

এরপর জামিনে থাকা অবস্থায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্যে তিনি বিরোধী দল বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। দলটি তাকে যশোর-২ আসনে মনোনয়নও দিয়েছে।

তার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, তখন প্রথম আলো পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয় যাতে বলা হয় যে দণ্ডিত ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।


সংবাদটি দেখার পর তার মক্কেল দণ্ড স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে হাইকোর্টে একটি আবেদন করেন। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একক একটি বেঞ্চ বৃহস্পতিবার তার সাজা স্থগিত করেছেন।

মি. ইসলাম বলেন, হাইকোর্টের এই আদেশের কারণে তার মক্কেল এখন নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলে তারা আশা করছেন।

এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, “বর্তমান সংসদের কয়েকজন সদস্য সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পর তারাও একইভাবে আবেদন জানালে হাইকোর্ট তাদের সাজা স্থগিত করেছিল এবং তারা পরে নির্বাচনে অংশ নিয়ে নির্বাচিতও হয়েছেন। তারা মন্ত্রীও হয়েছেন।”

সাবিরা সুলতানার আইনজীবীরা আদালতের সামনে এরকম কিছু উদাহরণ তুলে ধরে বলেছেন, “তার সাজা স্থগিত হলে তিনিও নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন।”

মি. ইসলাম জানান, আদালত তাদের এই আবেদন মঞ্জুর করেছেন।

বিএনপির পাঁচ নেতার ব্যাপারে রায়
কিন্তু কয়েকদিন আগে বিএনপির পাঁচজন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে তাদের সাজা ও দণ্ড স্থগিত করার জন্যে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন।

তখন হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ তাদের আবেদন খারিজ করে রায় দিয়েছিল যে কারো দু'বছরের বেশি দণ্ড বা সাজা হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

তাদের একজন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে গিয়েছিলেন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করার জন্যে। এবং আপিল বিভাগ সেটা গ্রহণ করেনি।

সরকারের এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “আপিল কোর্টে শুধু সাজা স্থগিত করা যায়। কিন্তু দোষী সাব্যস্ত হওয়াটাকে মামলার শুনানি করে, খালাস কিম্বা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা যায় না।”

তাহলে কোন রায়টি প্রযোজ্য হবে- এই প্রশ্নের জবাবে সাবিরা সুলতানার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, “এর আগে হাইকোর্টে এমন রায়ও হয়েছে যেখানে সাজা স্থগিত করার পর তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। ফলে নির্বাচন করতে পারবে না বলে যে রায় দেওয়া হয়েছে সেটিও প্রশ্নাতীত নয়।

মি. ইসলাম বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অধস্তন আদালত মানতে বাধ্য হলেও হাইকোর্টের একটি আদালতের আদেশ আরেকটি আদালত মানতে বাধ্য নন।

কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্ত থাকা সত্ত্বেও এবিষয়ে হাইকোর্টের আরেকটি আদালত এরকম রায় দিতে পারে কিনা সেনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এটর্নি জেনারেল।

তিনি বলেন, “সাংবিধানিক আইন দেশের সর্বোচ্চ আইন।

এই আইন অন্যান্য আইনের উপরে থাকবে।” সূত্র- বিবিসি বাংলা

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/১৯৪২ঘ.)