ফেলানী হত্যাকাণ্ড : ১৮ জানুয়ারি রিটের শুনানি

কেবল ভারতের সুপ্রিমকোর্ট পারে বিচার নিশ্চিত করতে

কেবল ভারতের সুপ্রিমকোর্ট পারে বিচার নিশ্চিত করতে

ঢাকা, ৭ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : সাত বছর আগে সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার বিচার পেতে ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের দিকেই তাকিয়ে আছে ফেলানীর পরিবার ও আইনজীবী৷ ওই আদালতে করা রিটের আদেশের ওপরই নির্ভর করছে ন্যায় বিচার৷ ১৮ জানুয়ারি রিটের শুনানি হতে পারে৷

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পার হতে গিয়ে বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী৷ কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর লাশ ঝুলে ছিল চার ঘণ্টা৷ আর ওই লাশের ছবি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হলে তখন নিন্দার ঝড় ওঠে৷

বিএসএফের ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে ফেলানী নিহত হওয়ার ঘটনা প্রমাণিত হলেও বিএসএফ-এর বিশেষ আদালত তাকে নির্দোষ ঘোষণা করে৷ আদালত তার গুলি করাকে ‘যথার্থ ' বলে মনে করেছে৷ একই আদালত রায় পুনর্বিবেচনা করে ২০১৪ সালের ২২ ডিসেম্বর অমিয় ঘোষের খালাস বহাল রাখে৷

এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ এবাং ২০১৫ সালে ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে দু'টি রিট আবেদন করে সেখানকার মানবাধিকার সংগঠন৷ দীর্ঘ বিতর্কের পর দু'টি রিটই একসঙ্গে চলতে পারে বলে ভারতের সুপ্রিমকোর্ট আদেশ দিয়েছে৷ এখন শুনানির অপেক্ষা৷ ফেলানী হত্যা মামলার বাংলাদেশি আইনজীবী কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, আগামী ১৮ জানুয়ারি ভারতের সুপ্রিমকোর্টে রিটের শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে৷ এর আগেও একবার শুনানির দিন ধার্য ছিল কিন্তু হয়নি৷

ফেলানী হত্যার ঘটনায় ন্যায় বিচার চেয়ে ভারতের আদালতে রিট করেছে ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ(মাসুম)৷ মাসুম-এর প্রধান কিরিটী রায় বলেন, সমস্যা হচ্ছে ভারত সরকার চায় না এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক৷ বার বার শুনানির তারিখ পড়লেও তা পিছিয়ে যাচ্ছে৷ আশা করছি ১৮ জানুয়ারি শুনানি হবে৷

এই রিটে বাংলাদেশ থেকে কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন ছাড়াও ‘মাসুম'কে সহায়তা করছেন পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন৷ তিনি বলেন, রিটে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার আবার শুরু করতে এবং তা সিভিল আদালতে নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে৷ তদন্তের জন্য কলকাতার বাইরে স্বাধীন কোনো সংস্থাকে নিয়োগের দাবি জানানো হয়েছে৷ আর ক্ষতিপূরণের বিষয়ও আছে৷

তিনি বলেন, ভারতীয় মানবাধিকার কমিশন এরইমধ্যে ফেলানীর পরিবারকে পাচঁ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে৷ ভারতীয় মানবাধিকার কমিশন সেখানকার সরকারের অংশ৷ কমিশনের এই আদেশ প্রমাণ করে ফেলানীকে হত্যা করা হয়েছে৷ এখন ভারতের সুপ্রিমকোর্টই শেষ ভরসা৷ কারণ ফেলানী হত্যার মামলা করেছে ভারত৷

বিএসএফ-এর বিশেষ আদালত হত্যাকারীকে খালাস দিয়েছে৷ এখন ভারতের সুপ্রিমকোর্টই পারে এই মামলার বিচার পুনরায় শুরুর আদেশ দিতে৷ আর সেটা যদি না হয় তাহলে ফেলানী হত্যার বিচার পাওয়ার আর কোনো আশা থাকবে না৷ তবে আদালত যেহেতু দু'টি রিটই একসঙ্গে শুনানি করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই আমি আশাবাদী৷

আব্রাহাম লিংকন বলেন, ভারত ফেলানী হত্যায় মামলা করেছে৷ সেদেশের সরকার চাইলে বিএসএফ-এর আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারত, কিন্তু করেনি৷

ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম এখনও সন্তান হত্যার বিচারের আশায় দিন গুনছেন৷ তিনি বলেন, আমি যেকোনো মূল্যে আমার শিশু সন্তান ফেলানী হত্যার বিচার চাই৷ ভারতের আদালতে রিটের সময় আমি সেখানে গিয়েছিলাম৷ শুনেছি শুনানি হবে৷ তবে আমি বিস্তারিত কিছু জানি না৷ আমার সঙ্গে এখন আর কেউ যোগাযোগও করে না৷

তিনি জানান, ভারতের মাবাধিকার কমিশন যে পাঁচ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে তা আমি জানি৷ তবে সেই টাকা আমি এখনো পাইনি৷ আর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো সহায়তা পাচ্ছি না৷

ফেলানী হত্যার পর ভারত বার বার সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার কথা বললেও সীমান্তে হত্যা বন্ধ হয়নি৷ বন্ধ হয়নি সীমান্তে মারণাস্ত্রের ব্যবহার৷ বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বিএসএফ-এর গুলিতে ২০০৯ সালে ৬৭ জন, ২০১০ সালে ৬০ জন, ২০১১ সালে ৩৯ জন, ২০১৫ সালে ৪৫ জন এবং সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত গত বছর ২১ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন৷ -ডয়চে ভেলে।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২০১২ঘ.)