অবশেষে যে কৌশলে শিশু দুটিকে উদ্ধার করা হলো

অবশেষে যে কৌশলে শিশু দুটিকে উদ্ধার করা হলো

ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : বুধবার সকালে রাজধানীর বাংলামোটরের লিংক রোডের একটি বাসায় পিতা তার দুই শিশুসন্তানকে ‘জিম্মি’ করে রেখেছেন—এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে কিছুক্ষণ পর র‌্যাব, পুলিশ, আনসার ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা বাড়িটি ঘিরে ফেলেন। এ ঘটনার পর আশপাশের এলাকায় ছিল মানুষের জটলা। পাশের বহুতল ভবন থেকেও কৌতূহলী মানুষ অপেক্ষায় ছিল, কখন উদ্ধার হবে শিশু দুটি।

তবে পুলিশ, র‌্যাব ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, তারা চেয়েছেন কোনো রকম রক্তপাত ছাড়াই যেন ঘটনার সমাপ্তি ঘটে। এরপর থেকেই শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। আর অভিযানে অংশ নেয় পুলিশ, র‌্যাব আর ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

রাজধানীর বাংলামোটরের লিংক রোডের খোদেজা খাতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উল্টো দিকের ১৬ নম্বর বাড়িতে ঘটে এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড।

কীভাবে সবকিছু সামলে এই উদ্ধার তৎপরতা শেষ করা গেল? এ প্রশ্নের জবাবে পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সকালে আমরা শিশু মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়ার পর থেকে কাজ শুরু করি। খবর পাই ঘরের ভেতরে শিশুর লাশ আছে, আরেক শিশু বাবার সঙ্গে আছে। ঘটনাস্থলে আসার পর দরজার ফাঁক দিয়ে দেখে এর সত্যতার বিষয়ে নিশ্চিত হই। দেখা যায়, ভেতরে টুপি ও পাঞ্জাবি পরা ব্যক্তিও আছেন। শুরুতে আমরা আসার খবর পেয়ে শিশুদের বাবা নুরুজ্জামান কাজল ক্ষিপ্ত হন। আমাদের চলে যেতে বলেন। না হলে অপর শিশুকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। তার হাতে রামদা। পরে কৌশল বেছে নিই।’

মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘ভেতরে থাকা সবার নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিই আমরা। ধৈর্য ধরি। হুট করে কিছু করতে যাইনি আমরা। রক্তপাত ছাড়াই কীভাবে কাজ করা যায়, সেভাবে কৌশল করি। নুরুজ্জামান কাজলকে আমরা শান্তভাবে বলি, বাইরে আপনাদের জন্য মানুষ অপেক্ষা করছে। শিশুটির জানাজার জন্য মসজিদে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। শিশুটির জানাজার কথা বলাতে নুরুজ্জামান কিছুটা শান্ত হন। একপর্যায় দরজা খুলে তিনি বের হন। আগে থেকেই দরজার আশপাশে কিছু পুলিশ সদস্যকে লুকিয়ে রেখেছিলাম। কাজল দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে আটক করে ফেলি। উদ্ধার করি জীবিত শিশু এবং অপর শিশুর লাশ।’

শিশুটিকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে—জানতে চাইলে মারুফ সরদার বলেন, ‘বাসার ভেতরে আমরা ঢুকে দেখি, পুরো বাসাটা বিশৃঙ্খল অবস্থায় রয়েছে। নুরুজ্জামানকে দেখে স্বাভাবিক মনে হয়নি। শিশুটির ময়নাতদন্তের আগে বলতে পারছি না, এই শিশুর মৃত্যুর কারণ কী।’

ফায়ার সার্ভিসের হেডকোয়ার্টারের ইন্সপেক্টর আবদুর সহিদ গণমাধ্যমকে বললেন, ‘আমরা কৌশলী হওয়ার কারণে সবকিছু ঠিকভাবে করা গেছে। বাড়িটিতে আসার পর আমরা দরজার ফাঁক দিয়ে নুরুজ্জামান কাজলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করার পর তিনি খেপে যান। আমাদের চলে যেতে বলেন। পরে ভেতরে আলেম সাহেবের সহায়তায় কাজলকে বলা হয়, ছেলের জানাজা পড়াতে হবে। মানুষ অপেক্ষা করছে। এতেই মন গলে যায় কাজলের। একপর্যায়ে দরজা খুলে দিলে সবাইকে উদ্ধার করা হয়।’

র‍্যাব-২-এর এসআই শহীদুল ইসলাম বলছিলেন, ‘আমি বাড়ির ভেতরে ঢুকেছিলাম। সেখানে গিয়ে দেখি, শিশুটির বাবা বসে আছেন, তার পাশে একজন হুজুর বসে আছেন। শিশুটিকে কাফনের কাপড়ে মোড়ানো একটি টেবিলের ওপর রাখা হয়েছে। শিশুটির বাবাকে কোনো সাহায্য লাগবে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কারো সাহায্য লাগবে না। আপনারা কেন এসেছেন? আপনারা চলে যান। দুপুর ১টার দিকে আমি নিজে আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে আমার ছেলেকে দাফন করব।’

শহীদুল বলেন, ‘এই কণ্ঠ শুনে মনে হয়েছে, হুট করে কিছু করা যাবে না। পরে কৌশলে জানাজার কথা বললে তিনি বেরিয়ে আসেন।’

নুরুজ্জামান মাদকাসক্ত ছিলেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হোসেন। তিনি বলেন, কাজলকে আগেও মাদকাসক্ত থাকার কারণে জেলে পাঠানো হয়েছিল।

নুরুজ্জামানের ভাই উজ্জ্বল সাংবাদিকদের জানান, বাংলামোটরের এ বাসায় দুই শিশুসন্তান সাফায়েত ও সুরায়েতকে নিয়ে থাকেন তার ভাই। এ ছাড়া তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মাসখানেক আগে তার স্ত্রী বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।

তিনি আরো বলেন, আজ সকালে তার ছোট ছেলে নূর সাফায়েত বিদ্যুৎস্পর্শ হয়ে মারা গেছে বলে মসজিদে গিয়ে ঘোষণা দিতে বলেন কাজল। তার পর মাদ্রাসার ছাত্রদের পবিত্র কোরআন খতম দেয়ার জন্য নিয়ে যেতে চান। এ কথা শোনার পর আবদুল গাফফার নামে একজন খাদেম মাদ্রাসা থেকে তার সঙ্গে যান।

(জাস্ট নিউজ/একে/১৭০৩ঘ.)