উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দুদকের ভূ‌মিকায় প্রশ্ন তু‌লে‌ছে টিআইবি

উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দুদকের ভূ‌মিকায় প্রশ্ন তু‌লে‌ছে টিআইবি

ঢাকা, ৯ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জা‌নি‌য়ে‌ছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর প্রধান নির্বাহী ড. ইফতেখারুজ্জামান। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আমরা এখনো ব্যর্থ ব‌লেও ম‌নে ক‌রেন তি‌নি। পাশাপা‌শি দে‌শের উচ্চ পর্যা‌য়ের দুর্নী‌তিবাজ‌দের বিরু‌দ্ধে দুর্নী‌তি দমন ক‌মিশনের (দুদক) ভূমিকায় প্রশ্ন তু‌লেন তি‌নি।

রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতি প্রতিরোধ দিবস ২০১৮’ উপলক্ষে টিআইবি কর্তৃক আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব বিষ‌য়ে কথা বলেন।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, জনগণকে দুর্নীতি প্রতিরোধে সচেতন করা। জনগণকে বাদ দিয়ে কখনো কোনো দেশে দুর্নীতিকে রোধ করা যায় না। এ কারণে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি বিষয়ক জরিপের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের ৬৩ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ৯৩ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছে।

দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আমরা এখনো ব্যর্থ দা‌বি ক‌রে তি‌নি ব‌লেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। আমাদের আগে রয়েছে শুধু আফগানিস্তান। বাকি দেশগুলো দুর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের চেয়ে এগিয়ে। এছাড়া দেশের প্রশাসনের সাথে জড়িত ব্যক্তিরা দুর্নীতির সাথে জড়িত। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বড় দুর্নী‌তিবাজ‌দের ব্যাপা‌রে দুদ‌কের নীরব ভূ‌মিকার প্রশ্ন তু‌লে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যারা ব্যাংক লুট করেন, যারা উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিবাজ, তাদের বিরুদ্ধে দুদকের তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করার দৃষ্টান্ত নেই। এ কারণে আমরা উদ্বিগ্ন।

সাম্প্রতিক নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে উঠে আসা সরকা‌রের একজন মন্ত্রীর ভূ‌মিকা এনে তিনি ব‌লেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দুর্নীতির সহায়ক পরিবেশ রয়েছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনেও দেখা গেছে একজন শ্রমিক নেতা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। এই সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা পালন করা হয়নি।

সরকারের আই‌নের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের বাকস্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫৭ ধারা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে দেশের মানুষের বাকস্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। তিনি এসব কালো আইন বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দুর্নীতি প্রতিরোধে ১০ দফা সুপারিশ করে। সুপারিশগুলো হলো- আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃক গণতন্ত্র ও সুশাসনের বিদ্যমান ঘাটটি পূরণে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার থাকতে হবে এবং কিভাবে বাস্তবায়িত হবে তার সুনির্দিষ্ট রূপরেখাও থাকতে হবে; নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব কমাতে প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসেব পর্যবেক্ষণ করা; সরকারি খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে ‘সরকারি চাকরি আইন-২০১৮’ এর বিতর্কিত ধারাসমূহ বাতিল করা; ঋণ খেলাপীতে জর্জরিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি ও জালিয়াতি এবং বেসরকারি ব্যাংকের নজিরবিহীন আর্থিক কেলেঙ্কারির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গকে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা; বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় পেশাদারি উৎকর্ষ ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সমন্বিত ও পরিপূরক কৌশল গ্রহণ করা; সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগে যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে,তথ্য অধিকার আইনে ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যমকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; আইনের বাস্তবায়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তথ্য প্রকাশকারী এবং তথ্যের আবেদনকারী উভয় ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; সব‌শে‌ষে দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদককে শক্তিশালী করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত কর‌তে হ‌বে।

(জাস্ট নিউজ/এমজে/১৪১০ঘ.)