সরকারের হাতে ১৮৪ উপজেলার মানুষের মুঠোফোন নম্বর

সরকারের হাতে ১৮৪ উপজেলার মানুষের মুঠোফোন নম্বর

ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : বিদ্যুৎ বিষয়ে জরিপের কথা বলে অপারেটরদের কাছ থেকে ১৮৪টি উপজেলার মানুষের মুঠোফোন নম্বর নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। দেশের সব কটি অপারেটরকে চিঠি দিয়ে অতীব জরুরি ভিত্তিতে এসব নম্বর সংগ্রহ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিটিআরসি ৪ ডিসেম্বর এই চিঠি দিয়ে ১০ ডিসেম্বর নম্বর নেয়। এরপর তা সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দেওয়া হয়। চিঠির শিরোনাম ছিল ‘উপজেলাভিত্তিক মুঠোফোন নম্বরের ডেটা সেট প্রদান প্রসঙ্গে’। এতে বলা হয়, সব নেটওয়ার্ক অপারেটরকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ-বিষয়ক জরিপের প্রয়োজনে সংযুক্ত উপজেলার মুঠোফোন নম্বরের ডেটা সেট কমিশন বরাবর সফট কপি আকারে অতিসত্বর পাঠানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। বিটিআরসি নারী-পুরুষের নম্বর আলাদাভাবে চেয়েছে। অবশ্য এতে ব্যক্তির নাম-পরিচয় নেই বলে জানা গেছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, তারা এ ধরনের কোনো তথ্য চায়নি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এত বিপুল নম্বর চেয়েছে কি না, জানতে চাইলে সংস্থাটির মহাপরিচালক নিজে মন্তব্য না করে বিটিআরসির কাছ থেকে নিশ্চিত হওয়ার জন্য বলেন।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে সরকারের কিছু উন্নয়নমূলক বার্তা ও স্লোগান গ্রাহকদের মুঠোফোনে পাঠাতে অপারেটরগুলোকে চিঠি দেয় বিটিআরসি। অবশ্য অপারেটরগুলো আইনে অনুমতি দেয় না জানিয়ে এসব বার্তা পাঠাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

নম্বর চাওয়ার বিষয়ে বিটিআরসির কাছে ই-মেইল করে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য চেয়ে তা পাওয়া যায়নি। অবশ্য বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক গত মঙ্গলবার তার কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় কয়েকজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে নম্বর নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

দেশে মোট উপজেলার সংখ্যা ৪৯২। অক্টোবরের শেষে চার মুঠোফোন অপারেটরের গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ কোটি ৬৫ লাখ।

সূত্র জানিয়েছে, অতীতে মুঠোফোন অপারেটরগুলোর কাছ থেকে কিছু কিছু নম্বর নেওয়া হয়েছিল। তবে এই প্রথম এত বিপুলসংখ্যক নম্বর নেওয়া হলো। বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ে সর্বশেষ যে জরিপ হয়েছে, তাতে ২০ হাজার মানুষকে নমুনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ওই জরিপ করেছিল বিবিএস।

বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, ১৮৪টি উপজেলার মানুষের মুঠোফোন নম্বর পেতে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। গত বুধবার তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিবছর শীতকালে বিদ্যুৎ-গ্রহীতাদের ওপর একটি জরিপ করা হয়। এবারো করা হচ্ছে। জরিপটি বিবিএস করবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এ জরিপ প্রতিবছর আমার নেতৃত্বেই করা হয়। অতীতে কমসংখ্যক নমুনা নিয়ে জরিপ করা হয়েছে। এতে দেশের মানুষের ভাবনার যথাযথ প্রতিফলন কম ঘটে। সে কারণেই এবার বেশিসংখ্যক মানুষকে জরিপের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।’

বিবিএস এখন এ ধরনের জরিপ করছে কি না, তারা সবার মুঠোফোন নম্বর চেয়েছে কি না, তা জানতে সংস্থাটির বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, এমন জরিপের বিষয়ে তাদের জানা নেই। গত বুধবার মহাপরিচালকের দপ্তরে গেলে কর্মকর্তারা জানান, তিনি কাজে বাইরে আছেন। এমন কোনো জরিপ হচ্ছে বলে তাদের জানা নেই।

এরপর বিবিএসের উপ-মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যুৎ বিষয়ে নতুন কোনো জরিপ করা হচ্ছে না। ১৮৪টি উপজেলার মুঠোফোন নম্বরের তথ্যও তাদের পক্ষ থেকে চাওয়া হয়নি।

বৃহস্পতিবার পরিসংখ্যান ব্যুরোতে গিয়ে সেখানকার তথ্যপ্রযুক্তি রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী সি এস রায়ের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তার বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘স্যার আপনাকে খুঁজছেন।’ সি এস রায় তখন কার্যালয়ে ছিলেন না। তার মুঠোফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। সেখানে উপস্থিত এক কর্মকর্তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, এ রকম একটি জরিপ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।

বিবিএসের মহাপরিচালক কৃষ্ণা গায়েনের দপ্তরে বৃহস্পতিবার দুপুরে টেলিফোন করা হলে তার সহকারী কথা বলবেন কি না, তা জেনে জানাবেন বলে উল্লেখ করেন। মিনিট দশেক পর ফোন করা হলে সহকারী বলেন, ‘ম্যাডাম ব্যস্ত। এখন কথা বলতে চাচ্ছেন না।’ বিকেলে মহাপরিচালকের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা সামনে জরিপ করব।’ বিবিএসের পক্ষ থেকে ১৮৪ উপজেলার সবার নম্বর চাওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা আপনার দরকার হলে বিটিআরসির কাছ থেকে নিশ্চিত হন। আমরা একটা জরিপ করব, এটুকুই বললাম।’

জরিপের বিষয়ে জানে না বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ও। জানতে চাইলে এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বিষয়ে জরিপের জন্য মুঠোফোন নম্বর চেয়ে মন্ত্রণালয় থেকে বিটিআরসি বা অন্য কোনো সংস্থাকে কোনো চিঠি দেওয়া হয়নি। তবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে গ্রাহক সন্তুষ্ট কি না, এ-সংক্রান্ত একটি জরিপ এবার করা হচ্ছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মাইডাসকে দিয়ে। তারা জরিপের কাজ শেষও করেছে। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নীতি প্রণয়নকারী সংস্থা পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেইন এ বিষয়ে বলেন, এবার মাইডাস একটি জরিপ শেষ করেছে। তবে বিটিআরসির চিঠির বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। সুত্র: প্রথম আলো।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১২৫০ঘ.)