বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ কেন প্রশ্নবিদ্ধ?

বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ কেন প্রশ্নবিদ্ধ?

ঢাকা, ১৪ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : বাংলাদেশে নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণার মধ্যে প্রতিনিয়ত গ্রেফতার আতঙ্কে থাকার অভিযোগ করেছেন বিএনপির কর্মী সমর্থকরা।

বৃহস্পতিবার ঢাকা ১২ আসনে বিএনপির প্রার্থী সাইফুল আলম নীরবের কয়েকজন কর্মী সমর্থককে পুলিশ হঠাৎ গ্রেফতার করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে।

ঘটনাস্থলে থাকা এমনই একজন সমর্থক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসি নিউজ বাংলাকে জানান যে তারা প্রতিনিয়ত গ্রেফতার আতঙ্কের মধ্যে আছেন।

"বিএনপির লিফলেট বিতরণ করছিল মেয়েরা। আওয়ামী লীগের কয়েকজন ওদেরকে পুলিশে ধরিয়ে দিল। অথচ ওই মহিলারা খালি সমর্থক হিসেবে লিফলেট বিলি করছিল। এরকম ঘটনা ঘটছে অহরহ।"

গ্রেফতারকৃত একজন নারীর ভাই জানিয়েছেন, তার বোনকে আটকের কারণ জানতে চাইলে পুলিশ কোন সদুত্তর দিতে পারে নি।

বিবিসিকে তিনি বলেন, "আমার বোনকে পুলিশে ধরেছে শুনে আমি থানায় গিয়েছি। তখন পুলিশ বলল যে উপর থেকে নির্দেশ আছে। ছাড়া যাবে না। তারা আমাকে কোন কারণই উল্লেখ করে নাই।"

ঐক্যফ্রন্টের গাড়ি বহরে হামলা

এছাড়াও শুক্রবার ঐক্যফ্রন্টের গাড়ি বহরে হামলা চালানো হয়েছে বলে জোটের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা আ.স.ম আবদুর রব জানান, মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ থেকে বের হওয়ার সময় তারা হামলার শিকার হন।

এ ঘটনার পেছনেও তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের দায়ী করে বলেন, "তারা রিভলভার দিয়ে ব্ল্যাংক ফায়ার করে দুই তিনটা। এরপরে হকিস্টিক, লাঠি, ইট, পাথর দিয়ে, আমাকে আহত করেছে।
আমার ড্রাইভার সিরিয়াসলি আহত, আমাদের শতাধিক নেতাকর্মী আহত।"

"ঘটনাস্থল থেকে ড. কামাল হোসেনের গাড়ি কোনভাবে চলে যেতে পারলেও বাকি ৮/১০টা গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।"

সরকার এ ধরনের একটা পরিস্থিতি তৈরি করে নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা করছে বলে আ.স.ম আবদুর রব অভিযোগ করেন।

তবে দারুসসালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিমুজ্জামান বলেছেন, এ ঘটনায় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

কি বলছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ?

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তাদের একটি প্রতিবেদনে দাবি করেছে যে, নির্বাচনী প্রচারণার মধ্যে বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের ওপর ধরপাকড়, ভয়ভীতি প্রদর্শন এবং নজরদারি চলছে।

সংস্থাটির মতে, নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনকে ঘিরে পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে এবং এ ধরনের সমস্যা মোকাবিলার মতো যথেষ্ট প্রস্তুতি প্রতিষ্ঠানটির নেই।

এজন্য বিভিন্ন দেশ ও বিদেশি সংস্থার পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন বলে মনে করেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি।

বিবিসিকে তিনি বলেন, "সরকার যখন নির্বাচন করে তখন তার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যেমন: নির্বাচন কমিশন, বিচার ব্যবস্থা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হতে হয়।"

কিন্তু নির্বাচন কমিশনসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা পক্ষপাতমূলক বলে তিনি উল্লেখ করেন।

মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, "নির্বাচন কমিশন একটি দলের লোকজনের মনোনয়ন বাতিল করছে, অন্য দলেরটা করছে না। শুধু এক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশে একটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ আমরা দেখছি না।"

এই পরিবেশে বিদেশি পর্যবেক্ষক না থাকলে বড় ধরনের সমস্যা না হতে পারে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

নির্বাচন কমিশনের যুক্তি

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এমন দাবিকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ।

তার মতে, নির্বাচন কমিশন একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার জন্য বাংলাদেশের সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

তার মতে, যেসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা মোকদ্দমা আছে, ওয়ারেন্ট পেন্ডিং আছে, বা যারা অনেকদিন ধরে পলাতক অবস্থায় ছিলেন, এখন নির্বাচনের সময় মাঠে ফিরে এসেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

হেলালুদ্দিন আহমেদ বলেন, "যেসব ক্রিমিনালের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধ আছে, তারা যদি মাঠে চলে আসে, পুলিশ তো তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেবেই।"

তবে কাউকে ওয়ারেন্ট ছাড়া যেন গ্রেফতার করা না হয়, কোন মানুষকে যেন অযথা হয়রানি না করা হয়, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলাকে কঠোর নির্দেশনা দেয়ার কথাও জানান তিনি।

নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক পাঠানোর প্রসঙ্গে হেলালুদ্দিন আহমেদ বলেন, "এবারের নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোন পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে না। কারণ তারা মনে করে যে বাংলাদেশে এবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হচ্ছে। এই দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কার্যকর আছে।"

তারপরও সব পক্ষের আস্থা অর্জনে দেশের ১১৮টি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমোদন দেয়ার কথাও জানান তিনি।

এছাড়াও কমনওয়েলথ, ওআইসি ও সার্ক-ভুক্ত দেশগুলোকে পর্যবেক্ষক পাঠানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ব্যাপারে যেসব দেশের রাষ্ট্রদূত আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাদের সেই সুযোগ দেয়া হবে বলে জানান নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দিন আহমেদ। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/২২২৬ঘ.)