বাসবাসের অযোগ্য হচ্ছে ঢাকা

বাসবাসের অযোগ্য হচ্ছে ঢাকা

ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : বাংলাদেশের উন্নয়নে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও দ্রুত বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি জোর তাগিদ দিয়েছেন নগর পরিকল্পনাবিদ ও নগর বিষয়ক সাংবাদিকরা।

তারা বলেন, বর্তমানে দেশজুড়ে যে নির্মাণযজ্ঞ চলছে, তা অনেক ক্ষেত্রেই অপরিকল্পিত। উপযুক্ত পরিকল্পনার অভাবেই ঢাকা শহর বসবাসের অযোগ্য নগরীতে পরিণত হয়েছে। এখনই এ ব্যাপারে সোচ্চার না হলে রাজধানীর মতো পুরো দেশও ইট-কংক্রিটের জঞ্জালে পরিণত হয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। অপরিকল্পতি প্রকল্প বন্ধ করে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।

শনিবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) ও নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম, বাংলাদেশ আয়োজিত ‘নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় সাংবাদিকতার ভূমিকা’ শীর্ষক পরিকল্পনা সংলাপে এমন অভিমত দেন বক্তরা।

রাজধানীর বাংলামোটর সংলগ্ন প্ল্যানার্স টাওয়ারে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিআইপির সাধারণ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খানের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন বিআইপির সহসভাপতি অধ্যাপক আখতার মাহমুদ।

অনুষ্ঠানে মূল ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার তৌফিক আলী। ধারণাপত্রে ঢাকা শহরের বাসযোগ্যতা হারানোর পেছনের কারণ হিসেবে সরকারের সঠিক পরিকল্পনার অভাব, ভালো পরিকল্পনাগুলোকে কেটেছিড়ে তছনছ করা, বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের সাথে সরকারের জনস্বার্থবিরোধী কার্যক্রমে আপসরফা প্রভৃতি বিষয় উঠে আসে।

অনুষ্ঠানে বিআইপি ও নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে নগর বিষয়ক প্রতিবেদনের ওপর কয়েকটি ক্যাটাগরিতে সেরা রিপোর্টের পুরস্কার প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়। প্রতি বছরের ৮ই নভেম্বর নগর পরিকল্পনা দিবসে এ পুরস্কার দেয়া হবে বলে জানানো হয়।

অনুষ্ঠানে বিআইপির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক গোলাম রহমান বলেন, এক সময় বুড়িগঙ্গার পানি হাতে নিয়ে পান করা যেত। এখন সেই বুড়িগঙ্গার পাশ দিয়ে নাকে রুমাল দিয়ে হাটতে হয়। তিনি ঢাকা শহরের ওপর চাপ কমানোর জন্য স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নগরায়নের পরামর্শ দেন।

সভাপতির বক্তব্যে আখতার মাহমুদ বলেন, সরকারি যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হয়, সেগুলো কতটা সফলতা পেল সে বিষয়ে কোনো অডিট হয় না। এগুলো অডিটের আওতায় এনে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।

এসময় নগর ও সেবাখাতের রিপোটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, কাজের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা, উন্নয়ন পরিকল্পনার বিভিন্ন ত্রুটি তুলে ধরেন।

যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে রাজধানীতে রেল যোগাযোগ বৃদ্ধি, শহরের বিকেন্দ্রীকরণসহ নানা পরামর্শ দিয়ে সাংবাদিকরা বলেন, তুরাগ-বালু-বুড়িগঙ্গা-ধলেশ্বরী নদীর পানির মান ঠিক না করে এখন অর্ধশত কিলোমিটার দূর থেকে রাজধানীতে পানি নিয়ে আসতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। অথচ ওই টাকা দিয়ে ঢাকার আশপাশের নদীর পারি ভাল করে নগরীতে সরবরাহ করা সম্ভব ছিল। এতে রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোও বাঁচত। অথচ নদীগুলোকে ধ্বংস করে মেঘনা-পদ্মা থেকে পানি আনার প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। রাজধানীর জলাশয়-খালগুলোকে একের পর এক ধ্বংস করা হচ্ছে। অনৈতিকভাবে একের পর এক প্রভাবশালীদের আবাসন কোম্পানির অনুমোদন দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি অমিতোষ পাল, সহসভাপতি আবুল কাশেম, সাধারণ সম্পাদক মতিন আব্দুল্লাহ, যুগ্ম সম্পাদক মাহমুদা ডলি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহ, দপ্তর সম্পাদক কামরুন্নাহার শোভা, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ফয়সাল খান এবং বিআইপির সহসভাপতি পরিকল্পনাবিদ ফজলে রেজা সুমন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরামের নেতা জামাল উদ্দিন, মাসুদ রানা, হাসান ইমন, সাজিদা ইসলাম পারুল, সাইদুল ইসলাম প্রমুখ।

(জাস্ট নিউজ/ওটি/২০৪১ঘ.)