ঈশ্বরগঞ্জে যুবলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ, গুলি, আহত ২০

ঈশ্বরগঞ্জে যুবলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ, গুলি, আহত ২০

ময়মনসিংহ, ১৫ ফেব্রুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে উপজেলা যুবলীগের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১৩ রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ভাঙচুর করা হয় উপজেলা চেয়ারম্যানের সরকারি বাসভবন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয় ও দুই বাসায়।

গত ২২ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা যুবলীগ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমনের ছোট ভাই মো. আবুল খায়েরকে আহ্বায়ক ও যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুছ ছালামকে এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৩৩ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয়। এতে বিলুপ্ত হয়ে যায় সাবেক এমপি আবদুছ ছাত্তারের শ্যালক মতিউর রহমানের নেতৃত্বাধীন যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি।

নতুন কমিটি গত ২৮ জানুয়ারি আনন্দ র‌্যালি ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান করতে চাইলে বিলুপ্ত কমিটির পক্ষের লোকজন বাধা দেয়। এতে দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ালে উপজেলা প্রশাসন পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে।

এদিকে বৃহস্পতিবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমনের পক্ষের লোকজন বিএনপি-জামায়াতের নাশকতার বিরুদ্ধে বিকালে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি প্রতিহতের জন্য সাবেক এমপি আবদুছ ছাত্তারের পক্ষের লোকজন ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। ওই পরিস্থিতিতে দুই পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় জড়িয়ে পড়ে। প্রায় ২ ঘণ্টাব্যাপী চলে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ অন্তত ১৩ রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষের ফলে যুবলীগের দেলুয়ার জাহান মামুন, সুজন, একেএম অমিত উল্লাহ, হিরণ, আব্দুল্লাহ, কামালসহ উভয় পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে দেলুয়ার জাহান মামুন ও সুজনকে মারাত্মক আহত অবস্থায় ময়মনসিংহ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

সংঘর্ষের ফলে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। ওই সময় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়াররম্যান মাহমুদ হাসান সুমনের থানারোডস্থ সরকারি বাসভবনে হামলা চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় বাসার ভেতরে থাকা অন্তত ১০টি মোটর সাইকেল। ছিঁড়ে ফেলা হয় বাসার দেয়ালে লাগানো বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত উপজেলা চেয়ারম্যানের পোস্টার। ভাঙচুর চালানো হয় উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবদুছ ছালামের বাসা। অপরদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল হেকিমের থানা রোডস্থ একটি কার্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর করা হয় ছাত্রলীগ কর্মী মঞ্জুর মোর্শেদের বাসায়।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দুই পক্ষ দুদিকে অবস্থান নেয়ায় উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ময়মনসিংহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) এস. এ নেওয়াজীর নেতৃত্বে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মতিউর রহমান জানান, বর্তমান যুবলীগ কমিটিতে জামায়াত বিএনপির লোকজন থাকায় আওয়ামী লীগের লোকজন তা মানতে পারেনি। তাই এই কমিটি বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবেই। বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, নতুন কমিটির লোকজন ছবিটি ভাঙচুর করে তাদেরকে দোষারূপ করার চেষ্টা করছে।

নবগঠিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালাম জানান, সাবেক কমিটির নেতারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমনের সরকারি বাসভবনে হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি ও বেশ কটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর চালায়। ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি বদরুল আলম খান বলেন, এক পক্ষ মিছিল করতে চাইলে অপরপক্ষ তা প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৩ রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে হয়েছে।

(জাস্ট নিউজ/একে/২২৩০ঘ.)