দেশে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশ সাহায্য করছে: ব্যারিস্টার মইনুল

দেশে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশ সাহায্য করছে: ব্যারিস্টার মইনুল

ঢাকা, ৫ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেছেন, যতই কথা বলি কোনো লাভ নেই। তাদের কথাবার্তাকে ‘বাকোয়াস’ বলা হয়। দেশে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তারা সাহায্য করছেন। পুলিশ কখনও রাষ্ট্রে শান্তি আনতে পারে না। তারা শুধু সন্ত্রাসী ধরতে পারে। একমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোই আলোচনা করে রাষ্ট্রে শান্তি আনতে পারে।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

নাগরিক ঐক্য আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক হাফিজউদ্দিন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল প্রমুখ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুর্নীতিবাজদের শাস্তি না দিয়ে শুধু ওএসডি করে নিশ্চিন্তে অবসরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়। তাদের ওএসডি না করে শাস্তি দিন। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করুন। এদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ব্যাংক ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে দেখতে হবে আমরা কাকে টাকা দিচ্ছি। এই টাকা জনগণের। ব্যাংক আইনের বিধি-বিধানগুলো ঘন ঘন বদলানো যাবে না। যারা দুর্নীতি করেন, তাদের সাথে সাথে শাস্তি দেয়া দরকার যেন সবার কাছে দৃশ্যমান হয়।

আনু মুহাম্মদ বলেন, যে দেশের একজন অর্থমন্ত্রী বলেন চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকা নয়, সে দেশে দুর্নীতি হয় না- এটি একটি ভুয়া কথা। প্রতিটি দেশে সবচেয়ে সুরক্ষিত ব্যাংক হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর বাংলাদেশের সেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশাল অঙ্কের রিজার্ভ চুরি হয়ে যাচ্ছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, দেশে কী পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে। শুধু প্রবাসীদের টাকায় এখন দেশের অর্থনীতি কোনো রকম চলছে।

ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে যা দুর্নীতি হয়, তার প্রায় সব টাকাই বিদেশে পাচার হয়ে যায়। বিদেশে টাকা পাচার হওয়া রোধে সরকারকে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শাস্তি না দেওয়ায় দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

জবাবদিহির অভাবে দুর্নীতি হচ্ছে মন্তব্য করে সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক হাফিজউদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন প্রশ্ন ফাঁস আগেও হয়েছে তখন তা ঠেকানো যাবে না।

লেখক জাফর ইকবালের ওপর হামলা প্রসঙ্গে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, র‌্যাগিংয়ের দায়ে ছাত্রলীগের যে কর্মীদের বহিষ্কার করা হয়েছিল, তাদেরই কেউ হাবাগোবা দাড়িওয়ালা এই ছেলেকে দিয়ে ঘটনা ঘটিয়েছে কি-না, দেখতে হবে।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতি হচ্ছে। সব দুর্নীতির মূল কারণ সরকার।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জাফর ইকবালের ওপর হামলা প্রসঙ্গে সরকার বলেছে, এগুলো যারা করে তারা বিপদগামী। এটা করে বেহেশতে যাওয়া যায় না। খুন জখম করে বেহেশতে যাওয়া যায় না ঠিকই, তাহলে ক্রসফায়ার করে কিভাবে বেহেশতে যাওয়া যায়? মানুষ রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যান, মাসের পর মাস খোঁজ থাকে না। ছয় মাস পরে এক বছর পরে তার লাশ পাওয়া যায়। ওরা বেহেশতে যাবে কিভাবে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, দুর্নীতির পেছনে যে মহান শক্তির মানুষ আছে, তাদের খুঁজে বের করে আনতে হবে। যারা দুর্নীতি করেন, তাদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা শুনলে আমার প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হয়। তারাই মূলত সবচেয়ে বড় চেতনা ভঙ্গকারী। দুর্নীতি কোনো সমস্যা না, সমস্যার আলামত। যে দেশে সুশাসন নাই, সেদেশে দুর্নীতি হবে না তো কী হবে? বাংলাদেশ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল এককেন্দ্রিক সরকারের দেশ। নেপালের মতো অপেক্ষাকৃত কম জনসংখ্যার দেশেও প্রাদেশিক সরকার আছে। আমাদের দেশে ১৬ কোটি মানুষের জন্য একটি সরকার। এক ব্যক্তির কাছেই সব ক্ষমতা।

গবেষক গওহর নাঈম ওয়ারা বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হওয়ার কারণেই রাস্তায় আন্দোলন দেখতে পাই। আমাদের কর্মকর্তারা প্রজেক্টের কাজ খুব ভালোবাসেন। কারণ, সেখানে অনেক দুর্নীতি করা যায়। প্রজেক্টে ট্রান্সফার করা হলে একজন কর্মকর্তা খুব খুশি হন। কিন্তু তাকে যদি কুতুবদিয়ায় পাঠানো হয়, তার খুব মেজাজ খারাপ হয়।

(জাস্ট নিউজ/একে/২৩০৭ঘ.)