লোক দেখানো মশক নিধন কর্মসূচি অকার্যকর

লোক দেখানো মশক নিধন কর্মসূচি অকার্যকর

ঢাকা, ৮ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : রাজধানীতে মশা নির্মূলে বিশেষ ক্রাশ কর্মসূচি পরিচালনা করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নগরবাসী। প্রজননস্থলের মশা নিধনে কোনো উদ্যোগ না থাকা এবং লোক দেখানো কার্যক্রমে এই কর্মসূচি কতটা সফল হবে, সেই প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। একই চিত্র ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেও (ডিএসসিসি)।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গাড়ির ওপরে দাঁড়িয়ে আছেন ডিএনসিসির প্যানেল মেয়র সদস্য আলেয়া সারোয়ার ডেইজী। তার দুপাশে দাঁড়িয়ে ফগার মেশিন দিয়ে মশা মারার ওষুধ স্প্রে করছেন করপোরেশনের দুই কর্মী। এটি আবার ভিডিও করছেন ডেইজী নিজেই। প্যানেল মেয়র সদস্য নারী কমিশনারের মশা মারার এই কার্যক্রমের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই এ কর্মসূচিকে লোক দেখানো এবং অর্থের অপচয় বলে সমালোচনা করেছেন।

তারা বলেছেন, লোক দেখানো কর্মসূচির পরিবর্তে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে মশা নির্মূল সম্ভব। এ ক্ষেত্রে কেবল দুই সিটি করপোরেশন নয়, সেবা সংস্থাগুলোকেও সমান ভূমিকা রাখতে হবে।

কীটতত্ত্ববিদরা বলেছেন, রাজধানীর চিহ্নিত কিছু স্থান মশার প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় নিচু স্থান, ঝিল, লেকগুলো হয়ে উঠেছে আবর্জনার ভাগাড়। নোংরা এসব আবর্জনায় জন্মাচ্ছে মশা।

রাজধানী ও এর আশপাশে ২৬টি খালের অস্তিত্ব রয়েছে। এ ছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি লেক। খালের অস্তিত্ব থাকলেও এতে নেই পানিপ্রবাহ। ফলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে তৈরি হচ্ছে ময়লার স্তূপ। এসব স্থান থেকে মশার বংশ বিস্তার হচ্ছে। তা ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন কাজের জন্য খোলা, ভাঙাচোরা নর্দমাগুলোও মশার বংশবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

বাউনিয়া খালের পাশের দেওয়ানপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, খাল এবং দুপাশের নিচু জমিতে পানি জমে আছে। ডোবাগুলোও কচুরিপানায় ভর্তি। পানিতে ভাসছে মশা, লার্ভা। একই অবস্থা দেখা গেছে বনশ্রী থেকে মেরাদিয়া বাজার পর্যন্ত বহমান খালেও।

ঢাকাবাসীর নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতের দায়িত্বে থাকা দুই সিটি করপোরেশন বলছে, রাউজক, গণপূর্ত অধিদপ্তর, সিভিল এভিয়েশন, রেলওয়েসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান জলাশয়গুলোর মালিক। তবে এ ক্ষেত্রে বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও কখনো এসব জলাশয়গুলো পরিষ্কারে উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।

রাজধানীর কল্যাণপুর, মিরপুর, বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, ভাটারা, বাড্ডা, বনশ্রী, গোড়ান, খিলগাঁও, বাসাবো, মুগদা, শনির আখড়া, মাতুয়াইল, দোলাইরপাড়, মোহাম্মদপুর, কুড়িল, জোয়ারসাহারা, আদাবরসহ বেশ কিছু এলাকার জলাশয়গুলো মশার প্রজনন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া নগরের সৌন্দর্যের অন্যতম উত্তরা, গুলশান, বনানী এবং ধানমন্ডি লেকও মশার আবাসস্থল হিসেবে গড়ে উঠেছে।

নগরবাসী বলছেন, মশার উপদ্রব বাড়ার পরই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখা যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের কার্যক্রম দেখাতেই এমন আয়োজন। তারা বলছেন, মশার অন্যতম প্রজনন কেন্দ্র বলে পরিচিত স্থানগুলোতে যথাযথ পরিষ্কার ও ওষুধ ছিটানোর উদ্যোগ নিতে পারলে মশা নিধনে সফলতা মিলবে।

কল্যাণপুর, পাইকপাড়া, বিশিল, মাজার রোড, গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় মশার ব্যাপক প্রকোপ। মূলত নিচু জমি এবং ঝিলের পানিতে জন্ম নেওয়া মশার কারণে দুর্ভোগে আছেন এলাকাবাসী। এ ছাড়া মাতুয়াইল, শনির আখড়াসহ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া এলাকাগুলো ঘুরেও একই চিত্র দেখা গেছে। নিচু জমি আর খালগুলো ভরাট হয়ে ময়লার ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে। এসব স্থানের আবদ্ধ পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা। দিন-দুপুরেও এসব স্থানে মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারাবিশ্বে যত সংক্রামক ব্যাধি হয়, তার ১৭ শতাংশ কীটপতঙ্গের (মশা-মাছি) মাধ্যমে ছড়ায়। এসব রোগের কারণে আর্থসামাজিক ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েকদিনের জলাবদ্ধতা হলেই সেখান থেকে মশার উৎপত্তি হয়। মশার কামড়ে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, কালাজ্বরসহ বিভিন্ন রোগ ছড়ায়। আর রাজধানীতে অপরিচ্ছন্ন ডোবা-নালার সংখ্যা এত বেশি যে, মশা নিয়ন্ত্রণ রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে মশার উপদ্রব থেকে মুক্তি পেতে শুধু দুই সিটি করপোরেশনই নয়, অন্য সংস্থাগুলেকেও সমানভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতাও অন্যতম অনুসঙ্গ হিসেবে কাজ করবে।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির সচিব দুলাল কৃষ্ণ সাহা বলেন, মশা নিধনে আমাদের ক্রাশ প্রোগ্রাম চলমান। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, আমরা নিয়মিত কাজগুলো করছি। তবে শীতকালে বৃষ্টি না হওয়ায় মশার প্রকোপ কিছুটা বেড়েছে। খাল এবং অন্যান্য জলাশয় রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে। এর পরও সিটি করপোরেশন নিজস্ব উদ্যোগে ডোবানালা পরিষ্কার করছে। মশার উপদ্রব কমাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১১১০ঘ.)