প্রথম ধাপে ৩৭৪ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে চায় মিয়ানমার

প্রথম ধাপে ৩৭৪ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে চায় মিয়ানমার

ঢাকা, ১৪ মার্চ (জাস্ট নিউজ) : বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে প্রথম ধাপে মাত্র ৩৭৪ জনকে ফেরত নিতে চায় মিয়ানমার।

বুধবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব মিন্ট থু এ তথ্য জানান বলে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের দেওয়া ৮ হাজার ৩২ জনের প্রথম তালিকা থেকে ৩৭৪ জনের তথ্য যাচাই বাছাই সম্পন্ন করেছে মিয়ানমার।

সংবাদ সম্মেলনে মিন্ট থু বলেন, 'বাংলাদেশের দেওয়া ৮ হাজার ৩২ জনের তালিকা থেকে আমরা ৩৭৪ জনের তথ্য যাচাই বাছাই করেছি। প্রত্যাবাসনের প্রথম ধাপে এই ৩৭৪ জনকে ফিরিয়ে আনা হবে।'

তিনি বলেন, তাদের (রোহিঙ্গা) সুবিধামতো সময়ে তারা ফিরে আসতে পারে।'

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে গত বছরের নভেম্বরে দেশ দু'টির মধ্যে সমঝোতা হয়। সমঝোতা অনুযায়ী দুই মাসের মধ্যেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও তা এখনও শুরু হয়নি। উল্টো মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গাদের এখনও সীমান্ত পেরিয়ে আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশে আগমন অব্যাহত রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মিন্ট থু জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৮ হাজার ৩২ জনের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে সেখানে ৩৭৪ জন বাদে বাকির আগে মিয়ানমারে বসবাস করতো কি-না সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত হতে পারেননি। কারণ হিসেবে তিনি জানান, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গাদের তথ্য সংবলিত যেসব কাগজপত্র দিয়েছে, সেখানে কিছু ক্ষেত্রে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও ব্যক্তিগত ছবি ছিল না।

একই সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমার পুলিশের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল উইন তুন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যে সমঝোতা হয়েছে 'কিছু কাগজপত্র তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়'।

তিনি জানান, বাংলাদেশ যে তালিকা দিয়েছে সেখানে তিনজন 'সন্ত্রাসী' পাওয়া গেছে।

এদিকে মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই সংবাদ সম্মেলনের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নিয়ে দেশটির সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যবাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেন, মিয়ানমারে কাছ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো জবাব পাননি বিধায় এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলতে পারবেন না। তবে বাংলাদেশের দেওয়া কাগজপত্র সঠিক কাঠামোতে ছিল না বলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যে অভিযোগ করেছে সে বিষয়ে তিনি পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন, কাগজপত্র সঠিক কাঠামোতে না থাকলে তিনশ'র বেশি মানুষকে তারা যাচাই করলো কীভাবে।

গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা অভিযানের নামে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এ অভিযানকে এরই মধ্যে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র 'জাতিগত নিধনযজ্ঞ' বলে অভিহিত করেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনে মানবতাবিরোধী অপরাধ। এরপর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৭ লাখের মতো রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

এছাড়া আগে থেকেই পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে অবস্থান করছে। এতে মোট রোহিঙ্গা সংখ্যা ১২ লাখ ছাড়িয়েছে। রাখাইনে শত শত বছর ধরে বসবাস করে এলেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিজেদের নাগরিক মনে করে না মিয়ানমার।

(জাস্ট নিউজ/একে/২০৪৭ঘ.)