প্রধান ‘রাগ’ ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটায় : আসিফ নজরুল

প্রধান ‘রাগ’ ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটায় : আসিফ নজরুল

ঢাকা, ১২ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে সবচেয়ে বড় রাগ ছিল বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তার দাবি, এই কোটা দেয়ার কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি ছিল না।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আই এর টক শো তৃতীয় মাত্রায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন দেশের এই বুদ্ধিজীবী। তিনি সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার পুরোপুরি বিরোধী। তার মতে, এটি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ধনীরাও ছিল দাবি করে আসিফ নজরুল এমনও বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী নয়।

মুক্তিযুদ্ধের পর সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হয়। আর ১৯৯৭ সালের পর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকেও এই কোটার আওতায় আনা হয়।

তৃতীয় মাত্রায় এসে আসিফ নজরুলও বলেছেন, কোটা আন্দোলনে সবচেয়ে বড় রাগ ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে। তার দাবি, এর যুক্তি ছিল। কেন মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা উচিত হয়নি, সে জন্য আসিফ নজরুল কয়েকটি যুক্তি দেন। তার দাবি, প্রথমত. মুক্তিযোদ্ধা কোটার কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। কারণ, কোটা অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা অনগ্রসর নয়। ‘মুক্তিযুদ্ধ গরিবও করেছে ধনীও করেছে, চাষিরাও করেছে। তাদেরকে অনগ্রসর বললে তাদেরকে অপমান করা হয়।’

আসিফ নজরুলের দ্বিতীয় যুক্তি, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় দুর্নীতির আশঙ্কা ছিল। তিনি বলেন, ‘এই সরকারের প্রথম দিকে লিস্টে ছিল দুই লাখ দুই হাজার মুক্তিযোদ্ধা। তার মধ্যে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে এমন আপত্তি হয়েছিল ৬২ হাজার মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে। সেখানে চরম দুর্নীতির একটি আশঙ্কা রয়েছে।’

‘হঠাৎ একজন পুরুষ গিয়ে বলতে পারে না আমি নারী আমাকের নারী কোটা দাও। হঠাৎ একজন গিয়ে বলতে পারেন না যে আমি প্রতিবন্ধী। কিন্তু এই কোটাতে (মুক্তিযোদ্ধা কোটা একচ্ছত্র দুর্নীতি সম্ভব।’

আসিফ নজরুলের তৃতীয় যুক্তি, মুক্তিযোদ্ধা কোটার সংখ্যা ৩০ শতাংশ করা উচিত হয়নি। তিনি বলেন, ‘দেশে নারীর সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ আর আপনি তাকে কোটা দিচ্ছে ১০ শতাংশ। লিস্টেড মুক্তিযোদ্ধা হচ্ছে দুই লাখ, তাদের প্রতি পরিবারে যদি পাঁচটা করেও সন্তান থাকে তাহলে ১০ লাখ। ১০ লাখ হচ্ছে পুরো জাতীর জনগোষ্ঠীর এক শতাংশেরও কম। যারা পুরো জাতীর এক শতাংশের কম আধা শতাংশ তাদের জন্য আপনি কীভাবে ৩০ শতাংশ কোটা দেন?’।

এর বাইরে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নাতি পুতিদের জন্য সম্প্রসারিত করা, আর কোটা আবেদনকারীদের জন্য বয়সর সীমা ৩২ করাও অযৌক্তিক ছিল বলে মনে করেন আসিফ নজরুল। দেশের এই বুদ্ধিজীবীর দাবি, ‘মুক্তিযোদ্ধা কোটা যারা রেখেছে তারা বুঝে হোক না বুঝে হোক তারা মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করছে।’

‘মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে বৈষম্য ও বঞ্চনা দূর করার জন্য। যারা বৈষম্য ও বঞ্চনা দূর করার জন্য যুদ্ধ করেছে তাদেরকে দিয়ে বৃহত্তম একটা জনগোষ্ঠীর যদি বঞ্চনা আর বৈষম্য করান তাহলে এর চেয়ে বড় অপমান মুক্তিযোদ্ধাদের আর কারা করেছে?’

‘প্রধানমন্ত্রী কি অভিমান করেছেন?’
কোটা সংস্করের দাবি তোলার পর কোটা তুলে দেয়ার ঘটনাটি প্রধানমন্ত্রীর রাগ নাকি অভিমান নাকি ক্ষুদ্ধ হয়ে দিয়েছেন এটা বুঝাটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন আসিফ নজরুল।

‘এটা হালকা ব্যাপার না। উনি যদি কনভিনসড হয়ে দিয়ে থাকেন তাহলে এক রকম। আর উনি যদি কনভিন্সড না হয়ে, রাগ করে বা ভুল বুঝে বা অভিমান করে দিয়ে থাকেন তাহলে এর ইমপ্লিম্যান্টেশন হবে আরেক রকম। এটা মোটেও হালকা ব্যাপার না।’

‘যখন আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলন করছিলাম, আমাদের বেতন প্রশাসনে যারা আছেন তাদের সমান হতে হবে। এই আন্দোলনেও প্রধানমন্ত্রী খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন, পরে উনি সমান করে দিয়েছিলেন। তার কিছু দিন পর দেখা গেল, সচিবদের আরো বিভিন্নভাবে সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে।’

‘উপসচিব যারা আছেন, তাদেরকে পর্যন্ত গাড়ি দেয়ার বিধান করা হয়েছে, গাড়ি মেইন্টেন্সের জন্য তেলের খরচ বাবদ এক্সট্রা ৫০ হাজার টাকা মাসে দেয়া হচ্ছে।’

‘আলটিমেটলি দেখা গেল, আমাদের ছাত্ররা যারা উপসচিব হচ্ছেন, তাদের চেয়ে আমরা সুযোগ সুবিধা কম পাচ্ছি। কাজেই এভাবে দেখার কিছু নেই, উনি যেভাবে হোক দিয়েছেন।

‘আমার কাছে মনে হয়েছে, উনি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী। উনি যদি কনভিনসড হয়ে দেন তাহলে খুব ভাল। তারপর আমি একটা কথা বলি, কোটা যে উঠে গেছে, ছাত্ররা উল্লাস করছে না কেন? এটা আপনাদের কাছে বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছে, কিন্তু আমার কাছে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না।’

‘প্রধানমন্ত্রী কনভিন্সড হয়ে দিয়েছেন না রেগে দিয়েছেন এটা যদি তাদের কাছে ক্লিয়ার হতো তাহলে তারা অনেক খুশি হতো।’

‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাটের আন্দোলনের চেয়ে এটা অনেক বড় আন্দোলন। ভ্যাটের আন্দোলনের কারণে সরকারের পলিসি যতটা চেঞ্জ হবে এটার আন্দোলনের কারণে পুরো প্যারাডাইম চেঞ্জ হয়ে যাবে। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ এ আন্দোলনের কারণে অ্যাফেক্টেড হবে। ভ্যাট এত বড় ইস্যু ছিল না, অনেক বড় ইস্যু এটা।’

‘ছাত্ররা যারা আন্দোলন করছে তাদের মধ্যে বিরাট সংখ্যক সংগঠনের কর্মী। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী যারা আছেন তাদের অধিকারের ব্যাপারে তারা অত্যন্ত সোচ্চার। তাই চট করে উঠিয়ে দেয়ায় কতটা ভালো এটা তাদের বুঝতে সময় লাগছে।’

‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ছাত্রীরা কেন রাস্তায় বেরিয়ে আসলো, তাহলে মেয়েদের কোটার কি দরকার? আসলেই তো মেয়েদের কোটার দরকার নাই। মেয়েদের কোটা মাত্র ১০ শতাংশ। কোটা যদি থাকে তাহলে সে ৪৬ শতাংশ বঞ্চিত হচ্ছে। আর যদি ১০ শতাংশ কোটা যদি আপনি উঠিয়ে দেন তাহলে সে এক শতাংশও সে বঞ্চিত হচ্ছে না।’ ‘আমরা যারা পড়াই, আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখি অনেক ক্ষেত্রে ক্লাসে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে ভাল করে। ’

(জাস্ট নিউজ/একে/১৯২০ঘ.)