গুম ও নিখোঁজের ঘটনায় আতঙ্কে মানুষ

গুম ও নিখোঁজের ঘটনায় আতঙ্কে মানুষ

ঢাকা, ১০ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : গুম ও নিখোঁজের ঘটনায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে বলে মনে করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। আর মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটনের ভাষ্য-গুম, খুন ও বিচারহীনতার কারণে দেশে এখন বিভীষিকাময় অবস্থা বিরাজ করছে।বিশ্ব মানবাধিকার দিবসকে সামনে রেখে গুম ও নিখোঁজের বিষয়ে শনিবার বাংলা ট্রিবিউনকে এসব কথা বলেন তারা।

গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাসহ বিভিন্ন বিষয়ে গত পাঁচ বছরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেই অভিযোগ পড়েছে দুই হাজার ৮৮১টি। এরমধ্যে এক হাজার ৯৭২টি অভিযোগ নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে আরো ৯০৯টি অভিযোগ।

কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহানা সাঈদ জানান, ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪৩৯টি অভিযোগ পেয়েছে কমিশন। এরমধ্যে নিষ্পত্তি করা হয়েছে ১৪০টি। একই সময়ে ২০টি গুমের এবং বিচার বহির্ভূত হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে ১৬টি। এ বছর নিজস্ব উদ্যোগে আমলে নেওয়া ৭১টি অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছিল, মানবাধিকার যেভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছিল, সেটা কতগুলো বিষয়ের মধ্য দিয়ে আমরা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি। যেমন- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যার বিচার করার মধ্য দিয়ে।

সম্প্রতি দেশে ঘটে যাওয়া গুম ও নিখোঁজ নিয়ে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা হচ্ছে। আমাদের অর্জন যেমন আছে, তেমনি লঙ্ঘনও আছে। অনেক কিছুই করেছি, আবার অনেক কিছুই করতে পারিনি আমরা। গুম ও নিখোঁজের কারণে মানুষের মধ্যে একটি আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি দ্বিমত পোষণ করছি না। গুম ও নিখোঁজের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক আছে, সেটা দূর করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দক্ষতার সঙ্গে নিখোঁজ ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনতে হবে। তাহলে মানুষের মধ্যে যে আতঙ্ক আছে, সেটা কেটে যাবে। এতে মানবাধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের যে অর্জন হয়েছে, সেই অর্জনটিও ধরে রাখা যাবে। সত্যিকার অর্থে মানুষের অধিকারের যে মূল লক্ষ্য, মানুষের অধিকারের উন্নয়ন ও সুরক্ষা করতে পারলে, তখন একটি সার্থক ও সফল রাষ্ট্র হিসেবে আমরা দেশকে পরিচিত করতে পারবো।

কাজী রিয়াজুল হক আরো বলেন, সংবাদপত্রের মাধ্যমে বা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যেসব নিখোঁজ ও গুমের খবর আমাদের নজরে এসেছে, সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো আমলে নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের আমরা বলেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা অত্যন্ত সজাগ। গুম ও নিখোঁজের ক্ষেত্রে তাদের খুঁজে বের করতে যেখানে যেটুকু বলা সম্ভব, আইনগত ও অন্যান্য দিক বিবেচনা করে আমরা সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

দীর্ঘদিন ধরে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছেন নূর খান লিটন। তিনি বলেন, মানবাধিকার দিবসের প্রাক্কালে স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বর্তমানে দেশে যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে, সেটা বিশেষ গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা দরকার। গুম ও ‘ক্রসফায়ার’-এর নামে যে হত্যাগুলো সংঘটিত হচ্ছে, তাতে মানবাধিকার পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটাচ্ছে। এক কথায় বলতে গেলে বর্তমানে মানবাধিকার পরিস্থিতি বিভীষিকাময়।

নূর খান বলেন, গুম ও ‘ক্রসফায়ার’ সমাজে ভয়ার্ত পরিবেশের জন্ম দিচ্ছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষ এখন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেও সাহস পাচ্ছে না। গুম, খুন ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি সমাজে একটি বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, প্রতিটি গুম ও ক্রসফায়ারের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, অর্থাৎ থানাকে মামলা গ্রহণ করতে হবে। যদি কোনও ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ থানায় যান, তাহলে প্রত্যেকটি ঘটনায় মামলা হওয়া উচিত এবং বিশ্বাসযোগ্য ও দৃশ্যমান তদন্ত হওয়া দরকার। তা না হলে পুরো সমাজটাই একটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হবে।

এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে করা প্রতিবেদনে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, নয় মাসে দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ‘হেফাজত’ ও ‘ক্রসফায়ারে’ ১২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকে ৫০ জনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে পরবর্তীতে তাদের মধ্য থেকে সাত জন ফিরে আসেন স্বজনদের কাছে। দুই জনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। তিন জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার দেখিয়েছে। এছাড়া, সংগঠনটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৯ মাসে দেশে গণপিটুনির শিকার হয়ে মারা গেছেন ৪০ জন।

সর্বশেষ গত ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে নিখোঁজ হন সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান। এর আগে নিখোঁজ হন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুবাশ্বার হাসান।এদুজন ছাড়াও গত তিন মাসে সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও ছাত্রসহ আরও অনেকেই নিখোঁজ হয়েছেন।

(জাস্ট নিউজ/ওটি/১০৫৫ঘ.)