প্রেমের টানে যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফরিদপুরে

প্রেমের টানে যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফরিদপুরে

ফরিদপুর, ১৮ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়। ছয় মাস কথা বলতে বলতে প্রেম। একপর্যায়ে প্রেমিককে বিয়ের প্রস্তাব দেন প্রেমিকা। এরপর হঠাৎ সূদুর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন সেই নারী।

গত ৬ এপ্রিল বাংলাদেশে আসেন প্রেমিকা শ্যারুন খাঁন (৪০) নামের ওই মার্কিন নারী। এরপর গত ১০ এপ্রিল বিয়ে করেন বাংলাদেশি মো. আশরাফ উদ্দিন সিংকু (২৬) নামের তার প্রেমিককে।

মো. আশরাফ উদ্দিন সিংকুর বাড়ি ফরিদপুরের সদর উপজেলার ঝাউখোলা গ্রামে। তিনি ঢাকার কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের মাষ্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র। বাবা মায়ের দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে তিনি সবার বড়। বাবা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গাড়ি চালক। সে হিসেবে বাবাকে থাকতে হয় ঢাকায়। তবে তার পরিবার থাকে ফরিদপুর নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্টাফ কোয়াটারে। প্রেমিকা শ্যারুন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। তার পরিবারের সবাই মুসলমান।

এদিকে মার্কিন নারীকে বিয়ের ঘটনায় আশরাফ উদ্দিন সিংকুর পরিবারসহ গোটা এলাকা এখন আনন্দে ভাসছে। শত শত লোকজন দেখতে আসছে শ্যারুনকে। এ বিষয়টা দারুন উপভোগও করছেন শ্যারুন। তিনিও এলাকার সকলকে আপন করে নিয়েছেন। ভাঙা ভাঙা বাংলায় কথাও বলছেন এই মার্কিন নারী।

এ ব্যাপারে আশারাফ উদ্দিন সিংকু জানান, ছয় মাস আগে ফেসবুকে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত প্রথম শ্রেণির ব্যাংকার শ্যারুন খাঁনের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। নিয়মিত কথা বলতে বলতে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে শ্যারুন তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৬ এপ্রিল বাংলাদেশে আসেন শ্যারুন। গত ১০ এপ্রিল ঢাকায় মুসলিম রীতি-নীতি মেনে বিয়ে করেন তারা। দুজনই মুসলিম হওয়ায় তাদের বিয়ে নিয়ে কোন জটিলতা হয়নি।

আশারাফ উদ্দিন সিংকু আরো বলেন, আমার ও আমার বউয়ের বয়সের কিছুটা ব্যাবধান থাকলেও আমরা দুজন দুজনকে পেয়ে খুবই আনন্দিত। আমরা সকলের কাছে দোয়া প্রার্থী।

শ্যারুন খানঁ বলেন, বাংলাদেশে এসে আমার খুবই ভালো লাগছে। আমার স্বামী, তার পরিবার ও এ দেশের মানুষসহ গোটা পরিবেশ খুবই ভালো লেগেছে। ২১ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার পর দ্রুত আবার এখানে ফিরে আসব।

শ্যারুন আরো বলেন, আমি বাংলার প্রেমে পড়ে গেছি। এ দেশের মানুষের প্রেমে পড়ে গেছি।

এদিকে ঢাকায় বিয়ে হওয়ার পর শ্যারনকে নিয়ে ফরিদপুরে গ্রামের বাড়িতে আসে আশরাফ। আশরাফের পরিবার শ্যারুনের মতো বউ পেয়ে খুশিতে ব্যাকুল। পাড়াপ্রতিবেশীরাও শ্যারনকে দেখে মুগ্ধ। তারা এই বিয়েকে স্বাগত জানিয়েছে বলে জানান পরিবারের সদস্যরা।

আশরাফের মা নার্গিস আক্তার বলেন, আমি এমন বউ পেয়ে এতো খুশি, তা বলার নয়। আমার ছেলেকে যদি বাংলাদেশে বিয়ে দিতাম তবুও এতো ভালো বৌমা হয়তো আমি পেতাম না। তিনি বলেন, শ্যারুন আমাকে আম্মু বলে যখন ডাক দেয় তখন আমার খুব ভালো লাগে।

আশরাফের বাবা মো. আলাউদ্দিন মাতুব্বর বলেন, আমার স্ত্রীর অসুখের কথা শুনে সেই সূদুর আমেরিকা থেকে শ্যারুন আমাদের কাছে ছুটে এসেছে। এতে আমরা এতো খুশি হয়েছি তা বলার নয়। এরপর সে বাংলাদেশের সব কিছু দেখে আমাদের দেশের প্রেমে পড়ে গেছে।

তিনি বলেন, শ্যারুন আমার ছেলেকে গত ১০ এপ্রিল বিয়ে করেছে। এখন ওরা দুজনে খুব সুখেই আছে। আমরা ওদের জন্য দোয়া করি, ওরা যেন ভালো থাকে। এ ছাড়া দেশের সবার কাছে আমার ছেলে ও ছেলের বউয়ের জন্য দোয়া চাই, ওরা যেন সুখে থাকে।

আশরাফের প্রতিবেশী মাসুম বলেন, আমরা প্রতিবেশী হিসেবে খুবই গর্বিত যে আমাদের প্রতিবেশী আশরাফ আমেরিকান এক মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। আমরা এখন তাদের দুজনের মঙ্গল কামনা করি সব সময় তারা যেন সুখে থাকে।

এদিকে শ্যারুন ও আশরাফ ফরিদপুরে তাদের গ্রামের বাড়ি অবস্থান করছেন। তবে খুব দ্রুত তাদের ফরিদপুর থেকে ঢাকায় চলে যাওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে পরিবারের লোকজন।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১২৩০ঘ.)