কোটা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

কোটা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ) : সাম্প্রতিক সময়ে নজিরবিহীন ছাত্র আন্দোলন ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ইস্যু। তবে কোটা সংস্কার নিয়ে এখনো কার্যত অন্ধকারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। দেশের প্রায় সবক’টি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের লাগাতার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদ অধিবেশনে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ওই সময় তিনি বলেছিলেন, কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের ‘অন্যভাবে’ চাকরির ব্যবস্থা করা হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেছেন, তারা কোটা সংস্কার চান (৫৬ ভাগ থেকে ১০ ভাগে নামিয়ে আনা), বাতিল নয়। বিশিষ্ঠজনেরাও কোটা একেবারেই বাতিল নিয়ে দ্বিমত পোষণ করছেন।

গত রবিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সংসদ ভবনে এক বৈঠকে কোটার বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী বিদেশে অবস্থান করছিলেন। সভায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত কথা হলেও কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় আলোচনা।

পরে ওই বৈঠকে অংশ নেয়া সদস্যরা কোটা ইস্যু নিষ্পত্তি নিয়ে ভিন্ন মত জানিয়েছেন। কমিটির কিছু সদস্য সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি একেবারে বাতিল না করে সংস্কারের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

তারা জানান, বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে কোটা পদ্ধতি সহজীকরণের বিষয় আলোচনা হয়েছে। দেশের প্রতি, ইতিহাসের (মুক্তিযুদ্ধ) প্রতি, আঞ্চলিকতার প্রতি এবং পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই আমরা কোটা রাখার পক্ষে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৮তম ওই বৈঠকে কেউ কেউ কোটা সম্পূর্ণ বাতিল না করে সংস্কারের পক্ষে মতও দেন। যদিও অনেকে সংসদে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যকে কোট করেছেন।

কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিফুর রহমান এমপির সভাপতিত্বে সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, খোরশেদ আরা হক এবং জয়া সেন গুপ্তাসহ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ওই বৈঠকে জনপ্রশাসন সচিব ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেন, কোটা পদ্ধতি নিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় আছেন। তিনি যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, মন্ত্রণালয় কমিটি করে সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার আগেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা সংস্কার নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছিল। কিন্তু পুরো কোটা পদ্ধতিই বাতিল করায় এ ব্যাপারে এখন আর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না মন্ত্রণালয়। এখন প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট ঘোষণার দিকে সবাই তাকিয়ে আছেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোটা সংস্কার বা বাতিল নিয়ে কাজ করার কথা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের। মন্ত্রণালয়টির সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে ফাইলটি উঠানোর কথা রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, তাদের কাছে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নির্দেশনা দিলে কাজ শুরু করবেন তারা।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ এপ্রিল মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোটা সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয়। এতে বলা হয়, কোটা সংস্কার নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এরপর কোটা সংস্কারকারীদের আন্দোলন অন্যদিকে রূপ নেয়। যার কারণে কমিটি গঠন প্রক্রিয়াও থেমে যায়।

রবিবারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায় অংশ নেয়া জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য খোরশেদ আরা হক বলেন, ‘না না, আমি কোটা পদ্ধতি সংস্কার চাইনি, তারা তুলছিল। আমি স্থায়ী কমিটির মিটিংয়ে বলেছি- প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিল করেছেন বাতিলই থাকবে।’

‘মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলমগীর বৈঠকে কোটা সংস্কারের পক্ষে কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে পরিষ্কার মতামত দিয়েছি- কোটা সংস্কার নয়, বাতিল করতে হবে’ যোগ করেন তিনি।

খোরশেদ আরা হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী এর আগেও যে কথাই বলেছেন সেটাই ঠিক ছিল, এবারও ঠিক থাকবে। ফলে সংস্কারের কোনো কারণ নেই।

বৈঠকে উপস্থিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এইচ এন আশিকুর রহমান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরাও সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে বৈঠকে শেষ পর্যন্ত কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে তিনি যে নির্দেশনা দেন তা মেনে কোটা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করা হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির ওই বৈঠকে অংশ নেয়া কমিটির আরেক সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, কোটার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বলবেন, সেভাবেই পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে কোনো নির্দেশনা দিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টা নিয়ে জনপ্রশাসন সচিব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। তারাই ঠিক করবেন কিভাবে কোটার বিষয়টি নিষ্পত্তি করা যায়। তবে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে বলে দিয়েছেন, তাই এ বিষয়টি তিনিই দেখবেন।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, কোটার বিষয়টি নিয়ে আমরা সংসদীয় কমিটির সভায় কথা বলেছি, কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। বিষয়টি যেহেতু প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, আমরা তার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। তবে সংসদীয় কমিটির অধিকাংশ সদস্য কোটা বাতিল নয়, সংস্কারের পক্ষে মত দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ কোটার পরিমাণ বর্তমান ৫৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে আনার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছে গত দুই মাস ধরে। গত ৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় পুলিশ ও ছাত্রলীগের। পরে এই আন্দোলন আরো তুঙ্গে উঠে।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/০৯৪৫ঘ.)