‘কোনো সাংবাদিকে কাজ হবে না’

‘কোনো সাংবাদিকে কাজ হবে না’

ঢাকা, ১৪ মে (জাস্ট নিউজ) : খুলনা শহর এখন যথানিয়মে ব্যস্ত। আগামীকাল মঙ্গলবার ভোট গ্রহণ হবে। শহরের বাসিন্দারা অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেছেন, কাকে তারা ভোট দেবেন। একইসাথে ভোটের দিনের পরিস্থিতিও আঁচ করতে পারছেন তারা।

সকাল ১০ টায় নগরীর ডাক বাংলা মোড়ে (পুরাতন যশোর রোড) একটি হোটেলে নাস্তা শেষে পাশেই খেলাধুলার মার্কেটে গেলাম নির্বাচন কমিশনের দেয়া সাংবাদিক পরিচয়ধারী কার্ড লেমেনেটিং করতে। সেখানে জাহিদ ফটোস্ট্যাটে দেখা হয় ভোট নিয়ে সচেতন এক ব্যক্তির সাথে। তাকে বেশ শিক্ষিত ও ভোট নিয়ে স্পট মনোভাব পোষণকারী ব্যক্তিই মনে হলো। সাংবাদিক কার্ড দেখেই, তিনি স্পস্ট দ্বরাজ কন্ঠে বললেন, কোনো সাংবাদিকে কাজ হবে না।

কেন? উত্তর- ওরা নেবেই। প্রকাশ্যেই তো বলছে।

৫০-এর কোঠা পেরোনো লোকটি জানতে চাইলো- গতকাল সন্ধ্যায় সিটিতে ছিলাম কি না। তিনি বলেন, নৌকের লোকেদের ভিড়ে দাঁড়ানোর জায়গাই ছিল না। তো অনেক প্রচারণাই তো করলেন, এবার ভোট দিতে দেন- উক্তি তার।

এরপর ওই লোকটি একটি প্রচারপত্র দেখিয়ে বললেন, এই দেখুন দুইটা মার্কা- ধানের শীষ, নৌকা। ধানের শীষের মার্কা এখানে কেন দিছে জানেন, শুধু নৌকার প্রতীক থাকলে শহরের ৮০ ভাগ লোক এটি পড়বে না।

মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে রবিবার মধ্যরাত থেকে শেষ হয় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। খুলনা সিটি নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার শেষ দিনে মহানগরীর পাড়া-মহল্লা, অলিগলি মুখরিত ছিল মাইকিংয়ে। বিভিন্ন জায়গা ছেঁয়ে গেছে পোস্টার আর লিফলেটে। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে প্রার্থীরা চালিয়েছেন গণসংযোগ ও প্রচারণা।

প্রথমবারের মতো মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে খুলনা সিটি করপোরেশনে। মেয়র পদে ৫ জন প্রার্থী হলেন- আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুল খালেক (নৌকা), বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টির শফিকুর রহমান মুশফিক (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক (হাত পাখা) ও সিপিবি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো: মিজানুর রহমান বাবু (কাস্তে)।

রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে। এ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে রবিবার দিবাগত রাত ১২টায়। একই সঙ্গে বহিরাগতদের শনিবার রাত ১২টার মধ্যে সিটি এলাকা ত্যাগ করেছেন। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রবিবার বিকাল থেকে ১৬ প্লাটুন বিজিবি মাঠে নামে।

তাছাড়া মহানগরীর ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৮ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। খুলনা সিটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ ও নারী ২ লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা রয়েছেন ৪ হাজার ৯৭২ জন। এ নির্বাচনে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্র থাকবে। এর মধ্যে দুটি ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে। এ দুটি কেন্দ্রের ১০টি বুথে ইভিএমে ভোট দেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন দুই হাজার ৯৭৮ ভোটার।

কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো: ইউনুচ আলী জানান, এরই মধ্যে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন কমিশনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) মুখপাত্র সহকারী পুলিশ কমিশনার সোনালী সেন বলেন, নির্বাচনে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৩৪টি ভোট কেন্দ্রকে অতি গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ভোটের দিন পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও বিজিবি, এপিপিএনের প্রায় ১০ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।

খুলনা শহর সিটি করপোরেশন হওয়ার পর প্রথম দুটি নির্বাচনে মেয়র হন বিএনপি থেকেই। তবে ২০০৮ সালে তৃতীয় নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে নেন আওয়ামী লীগের খালেক। তবে ২০১৩ সালে বিএনপির মনিরুজ্জামান মনির কাছে ৬১ হাজার ভোটে হেরে যান তিনি।

সচেতন তরুণ ভোটাররা বলছেন, মেয়র পদটি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। স্থানীয় জনগণের ভোটে নির্বাচিত এ পদটিকে তার প্রাপ্য অনুযায়ী সুবিধা দেয়া উচিত। জাতীয় রাজনীতির বিভেদ সামনে রেখে কেবল বিরোধী পক্ষের নেতা হওয়ার কারণে তাকে কাজ করতে না দিলে তা জনগনের মধ্যে বিরুপ প্রভাব ফেলে।

খুলনা সিটি কররেশন (কেসিসি) নির্বাচনে মূল ফ্যাক্টর হবে তরুণ ভোটাররা। এ নির্বাচনে ভোটার তালিকায় যুক্ত হওয়া ৫২ হাজার ৫২৭ তরুণ ভোটারের হাতেই আগামী দিনের নগরপিতার ক্ষমতার চাবি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তারাই কেসিসি নির্বাচনের ফলাফলে মূল ভূমিকা পালন করবেন। অপরদিকে প্রায় ৮০ হাজার সংখ্যালঘু ভোটার রয়েছেন এই সিটিতে। ভোটের ফলাফলে তাদের গুরুত্বও অনেক। একই সঙ্গে ২৫ হাজার পাটকল শ্রমিক ও তাদের পরিবারের ভোটররাও প্রভাব ফেলবে জয়-পরাজয়ে। সুত্র: নয়াদিগন্ত।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১২২৬ঘ.)